দেখে বোঝার উপায় নেই, একসময় জায়গাটি রূপনগর লেক ছিল। রূপনগর আবাসিক প্রকল্পের বাসিন্দারা ওই লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতো। কিন্তু লেকটি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক হাজার বস্তিঘর। এভাবে বেহাত হয়ে যাচ্ছে রূপনগর প্রকল্পের লেকটি। দখলের পাশাপাশি দূষণে জলাশয়টি পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, লেকটি দখলমুক্ত করার জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে বারবার জানিয়েও ফল পাওয়া যায়নি। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নির্বিকার।
১৯৮৪ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ রূপনগর আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ শুরু করে। প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিতেও লেকের উল্লেখ ছিল। ওই প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, আইন অনুযায়ী জলাশয় ভরাট করা ও জলাশয় বরাদ্দ দেওয়া যায় না।
কিন্তু তা তোয়াক্কা না করে ২০০২ সাল থেকে লেকটি ভরাট শুরু করে ভূমিদস্যুরা। ক্রমে দখলদার বাড়তে থাকে। রাতারাতি উঠতে থাকে বস্তিঘর। বর্তমানে সেখানে হাজার তিনেক বস্তিঘর আছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বারবার জানানোর পরও তারা জলাশয়টি দখলমুক্ত করছে না।
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ও আধা কিলোমিটার প্রশস্ত লেকের অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। লেকে বাঁশ পুঁতে বস্তিঘর তোলা হয়েছে। উত্তর পারে বস্তিঘর তৈরির কাজ চলছে। অবৈধ বস্তিতে বিদ্যুতের লাইনও আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বস্তিবাসী জানালেন, তাঁরা ভাড়া দিয়ে থাকেন।
মাসে কয়েক লাখ টাকা ভাড়া ওঠে। মুজিবর বাঙালি, আনিস আর্মি, লতিফ, জাকির, এমরান, হাজি রমজান, জাহিদ, মামুন, মাতবর, চন্দ্রসহ ৩০-৩৫ জন লোক বস্তির বিভিন্ন অংশের ভাড়া তোলেন। সবচেয়ে বেশি ঘরের মালিকানা মুজিবর বাঙালি ও আনিস আর্মির। তাঁরাই মূলত এই বস্তি নিয়ন্ত্রণ করেন।
জানতে চাইলে মুজিবর বাঙালি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লেকে আমার কিছু ঘর আছে।
আমি সেগুলোর ভাড়াও তুলি। কিন্তু আমার চেয়ে বেশি ঘর আছে মাতবরদের। ’ তিনি দাবি করেন, ওই জায়গা আগে উঁচু ছিল। তখন তিনি এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবর বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি।
কিন্তু সেটা কোনো বিষয় নয়। আমি ব্যবসা করে খাই। ’
প্রকল্পের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, দখলদারেরা সেই দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। দখলদারদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। লেক দখলমুক্ত করার কথা বলায় রূপনগর আবাসিক প্রকল্পের বাসিন্দাদের সংগঠন জনকল্যাণ সমিতির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতাকে কোপানো হয়।
এলাকাবাসী জানান, গত বছর আরামবাগ ঈদগাহ ময়দান ও বঙ্গবন্ধু শিশু উদ্যানের নামে লেকের এক পাশ ভরাট শুরু করেছিল দখলদারেরা। সরকারদলীয় সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ ওই কাজের উদ্বোধনও করেন। তবে পরে অক্টোবরে এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ওই কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় এবং লেক দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মুনীর চৌধুরী অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর অধিদপ্তর লেক উদ্ধারে আর অভিযান চালায়নি।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই আবাসিক প্রকল্প জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের হলেও তারাই লেক দখলমুক্ত করার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদাসীন। তারা লেকটি দখলমুক্ত করতে কখনো উদ্যোগ নেয়নি।
এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা গৃহসংস্থান বিভাগ-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হারিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখনই লেকের কোনো অংশ দখল হয়েছে, তখনই আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। আংশিকভাবে বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়েছে। তবে পুরো লেক দখলমুক্ত করার ব্যাপারে কোনো অভিযান চালানো হয়নি।
এটি আসলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।