যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই । কাদঁতে আসিনি ফাসিঁ দাবী নিয়ে এসেছি ।
ওয়ারল্যাস - না কোন টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের নাম নয়, ওয়ারল্যাস আমার প্রাত্যহিক কর্মের সহকারী । গারো সম্প্রদায়ের, বাবার ওয়ারল্যাস নিয়ে আগ্রহ আর পচ্ছন্দের কারণেই হয়তো তার নাম রেখেছে বাবা ওয়ারল্যাস । খ্রিষ্টান মিশনারী স্কুলে যাতায়াত ছিল কিছূদিন, কোনভাবেই সেদিকে মন বসাতে পারেনি এই গারো ছেলেটি ।
গারো স্মপ্রদায়ের হবার কারণে ভবিষ্যত নিয়েও সে খুব একটা চিন্তিত নয়, মাতৃপ্রধান সম্প্রদায় গারোরা । বিয়েল পর ওয়ারল্যাস তাই চলে যাবে স্ত্রী-র ঘরে, স্ত্রীই হবে তার অভিভাবক । এখনও সে রেওয়াজই চলছে এই গারোরা । তাই ওয়ারল্যাস এর পড়ালেখার চেয়ে মনোযোগী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিপাটি হয়ে থাকা আর এধার কা মাল ওধার, মানে চোরচালান । ওয়ারলেস থাকে হালুয়াঘাটের ও ভিতরের গ্রামে বর্ডারের পাশে ।
ভারতীয় মাল কিনে বাংলাদেশে এনে বেশী দামে বিক্রি করা কিংবা বাংলাদেশী মাল ভারতে নিয়ে বিক্রি করাকে কোনভাবেই চোরচালানী কিংবা অবৈধ মনে করেনা সে । এর মাঝে কোন অন্যায় কিংবা খারাপ সে লক্ষ্য করেনা । তাকে বুঝালাম, কেন এটা অবৈধ্য কিংবা চোরচালানী, তার সহজ উত্তর এই কয়েকটা জিনিস নিয়ে গেলে কিংবা আনলে দেশের কোন ক্ষতি হয়না , কেননা দেশতো অনেক বড়। সেটাও বুঝালাম, কি করে একজন থেকে একলক্ষ কিংবা পাচ লক্ষ হয় । তখন নিশ্চুপ হয়ে যায় ।
মৃদু ভাবে বলে আমরা সবাই তো এটা করি, বর্ডারের মানুষের আয়ের পথ তো এটাই নইলে তারা কি করে খাবে? ? তার উত্তর আমার জানা নাই, তাই আমিও নিশ্চুপ হয়ে যাই ।
ধর্মে ওয়ারল্যাসরা গারোখ্রিষ্টান যদিও ওয়ারল্যাসদের নিজস্ব ধর্ম ছিল কিন্তু তা আজ বিলুপ্ত প্রায় । দারিদ্রের কষাঘাতে তারা সবাই ধর্মান্তরিত, সবাই খ্রিষ্টান হয়ে গেছে হয়তো সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে । মিশনারীরা এভাবেই এই সকল দরিদ্র মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছে তাদের দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে, তাই ধর্মে সে খ্রিষ্টান, তার নাম রাখা হয়েছে খ্রিষ্টানদের নামেই । পুরো নাম জন ওয়ারল্যাস সাংমা বা ডিব্রা ।
সাংমা ক্ষুদ্রার্থে অর্থাৎ সমাজের নাম । আর ডিব্রা বলতে তাদের সম্প্রদায়কে বুঝায় । বিষয়টা এররকমই বা এরচেয়েও জটিল । আমি এতোটুকুই বুঝেছি ।
গত বছর থেকে ওয়ারল্যাস আমার সাথে , এরমাঝে দুটি বড়দিন এলা ।
আজ আর গত বছর । বড়দিন এইসব ধর্মান্তরিত গারোদের কাছেও তাৎপর্যপূর্ণ । ধর্মের দিক থেকে হয়তো ততোটা নয় যার থেকেও বেশী সামাজিক কারণ । এই বড়দিনকে ঘিরেই তাদের মেলা, পুর্ণমিলনী অর্থাৎ উৎসব জমে ওঠে । প্রায় একমাস আগে ওয়ারল্যাস একটি লটারীর টিকিট ছাপিয়েছে ।
গ্রামে দশ টাকা করে বিক্রি হবে । তাদের ক্লবের নামে । ১ম পুরস্কার সম্ভবত একটি ছোট সাদাকলো টিভি । এবং এমন নানারকম পুরস্কার । সহজ করে রাফল ড্র টাইপের ।
আর আছে নানরকম উৎসব । গ্রামের সবাই মিলে ভোজ, একটু পানীয় নিজেদের তৈরী আর নাচ-গান । সারা বছর ধরে এইসকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজনও বড়দিনের প্রতীক্ষায় থাকে । ধর্মান্তরিত এই মানুষ গুলোর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব রীতিনীতি আর সংস্কৃতি । ধীরে ধীরে সময়ের প্রবাহে তারা তাদের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে, যেভাবে একসময় হারিয়ে ফেলেছে নিজেদের ধর্ম ।
আজ এই ছোট ছোট মানুষ গুলো খোজে বড়দিনের বড় কোনো আর্শীবাদ, যদি ঈশ্বরের একটু কৃপা হয় !
আমরা চাই সবাই তার নিজস্বতা-স্বকীয়তা নিয়ে অটুট থাকুক ।
সবাইকে বড় দিনের এক ফালি ছোট শুভেচ্ছা (সবাইরে দিতে গিয়ে একটু ছোট হয়ে গেল, কি আর করা!!!)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।