ইমরোজ
খুব সকালে উঠে ছেলেটা কাঁদছে। বালিশ জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে। কারণ আজ ১৬ই ডিসেম্বর। তার খুব সখ ছিলো এই ১৬ই ডিসেম্বর একটা পতাকা উড়াবে ছাঁদে। কিন্তু মা তাকে সেটা কিনে দিতে পারেন নি।
ছেলেটির বাবা দূরে কাজ করেন। ঢাকায় কদাচিত যাওয়া আসা। শুধু বলে দিলেই হয় তিনি কর্মক্ষেত্র থেকে জোগাড় করে নিয়ে আসতে পারেন একটা পতাকা। কিন্তু বছরে একবার ১৬ই ডিসেম্বর আর ২৬শে মার্চ আসে বলে, তার আগের দিন রাতে কথাটা মনে পরে ছেলেটির মায়ের। আর তখন হাতে গোনা টাকাটাই থাকে।
এদিকে ছেলে তো নাছোড়বান্দা, তার পতাকা লাগবেই। গত দুই বছর ধরে তার এই ১৬ই ডিসেম্বরটা আর ২৬শে মার্চটা সে বড় বিষময় করে তুলে, কান্নাকাটি করে।
ছেলেটার নাম নাকিবুর রাহমান। আমার প্রতিবেশী। তার কান্নার চোটে, তার বাবা আদর করে তার ২১শে জানুয়ারির জন্ম দিনে একটা পতাকা গিফট করেছিলেন।
তারপর থেকে আর কান্নাকাটি নয়।
১৯৮৬ সালের কথা বলছিলাম। ভাইয়া আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন স্কলারশিপে, বুয়েটে পড়ে। জীবনে তার একটাই বায়না ছিলো সেই পতাকা। আজকে তিনি থাকেন ছিটাগাং।
শিপয়ার্ডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। কত টাকার মালিক তিনি তা না হয় নাই জানলেন। তবু পতাকার বায়না কিন্তু আমেরিকা থেকে তাকে এখানে আনতে বাধ্য করেছিলো।
দেশের হয়ে কাজ করছেন তিনি।
আজকে ব্লগার সম্মেলন থেকে আসার পথে একটা অবাক দৃশ্য দেখে এই কথাটা মনে হলো।
আমার বাসার পাশের বাসায় এক ছেলে তার গ্যারেজ এ থাকা মোটর সাইকেলটা ভাংছে। কি কারন ? তার মা তাকে তেলের টাকা দেয়নি, আর লাইসেন্সটি রেখে দিয়েছেন, যাতে সে বাইরে যেতে না পারে। ছেলেটির কান্ড দেখছিলাম, গ্যারেজের ওয়েল্ডিং করা স্টীলের বিশাল ফাকাফোকর আলা গেট দিয়ে। বয়স মনে হলো, আমার থেকে ছোট, জিজ্ঞেস করে জানলাম কলেজের ফার্ষ্ট ইয়ারে পড়ে।
আমাদের আগামী প্রজন্ম কি ধরণের মেন্টালিটি নিয়ে মানুষ হচ্ছে ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।
বিজয়ের দিনে এই দুই ঘটনার নিদাঘ পার্থক্য। অনেকে বলবেন, দুইটা পরিবারের বিষদ পার্থক্য। তখন কি (১৯৮৬ সালে) এরকম বুর্জোয়া ফ্যামিলি ছিল না?
ছিলো, কিন্তু এদের হাতে সমাজ এরকম লাঞ্চিত হয়নি। হয়তো তখন অহরহ এসব দেখা যেত না। এখন যেমন প্রায়সই দেখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।