"হৃদয় প্রেমের দিন কখন যে শেষ হয় -চিতা শুধু পড়ে থাকে তার"
প্রেমের স্থায়িত্ত কত কাল?প্রেম কি ক্ষন স্থায়ী? নাকি সে চিরন্তন? প্রেমকে কবিতা, গল্প, উপন্যাসে সব সময়ই একটি স্বর্গীয় মহিমায় আবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আসলেইকি প্রেম এতটাই স্বর্গীয়?
এর জবাব পেতে আমাদের আগে জানতে হবে প্রেম কি? একটি ছেলে ও একটি মেয়ের পস্পরকে চাওয়াটাই কি প্রেম? প্রেমের সঙ্গা হিসেবে যদি আমরা মেনে নেই যে - একটি ছেলে ও একটি মেয়ের দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানের উদ্দেশ্যে পস্পরকে চাওয়াটাই প্রেম তবে আরো কিছু প্রশ্ন চলে আসে। এই চাওয়াটা দৈহিক নাকি মানষিক? এই চাওয়াতে কি ভবিষ্যতে সংসার গঠনের প্রতিশ্রুতি থাকা বাঞ্চনীয়?
প্রেমের শ্রেনী বিভাগ করতে যেয়ে সাধারন ভাবে একে দু ভাগে ভাগ করা হয় - দৈহিক প্রেম ও মানষিক প্রেম। কিন্তু প্রেম কি শুধু মাত্র দৈহিক বা শুধু মাত্র মানষিক আকর্ষনে হতে পারে? না কি এ দুটোরই প্রয়োজন আছে এবং কতটুকু দৈহিক আর কতটুকুইবা মানষিক?
যে প্রেমে শুধুমাত্র দেহ স্বাদ অনুভব করে অখবা দেহের আকর্ষনে যে প্রেম তাকে আমরা পূর্ন দৈহিক প্রেম হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। এবং তা শুধুমাত্র হাতের স্পর্শ থেকে শুরু করে পূর্ন দৈহিক মিলন পর্যন্ত য়েকোনো কিছুই হতে পারে।
শুধুমাত্র প্রেমিক/প্রেমিকার হাত ধরে বসে থাকাটাও দৈহিক প্রেমের অন্তর্গত বলে বিবেচিত হবে। এমনকি প্রেমিক/প্রেমিকার চোখের দিকে তাকিয়ে পুলক অনুভব করাটাও দৈহিক প্রেম। এক্ষেত্রে মানষিক অবস্থা বিবেচ্য নয়।
অন্যদিকে প্রেমিক/প্রেমিকার শুধু মাত্র যেকোন মানবীয় গুনাবলীতে আকৃষ্ট হয়ে যে প্রেম তাকে পূর্ন মানষিক প্রেম বলা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রেমিক/প্রেমিকার আচার-আচরন, স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ঠের জন্য আকৃষ্ট হয়ে এ ধরনের প্রেম হয়।
কিন্তু যে সম্পর্কে দৈহিক আকর্ষন অনুপস্থিত তা প্রকৃত পক্ষে বন্ধুত্তেরই নামান্তর মাত্র।
কি জন্য একটি ছেলে ও মেয়ে পস্পরের প্রেমে পড়ে? শরীর নাকি মন? অনেকেই তর্ক করবেন যে মানষিক একটা বিশাল প্রভাব এখানে রয়েছে। কিন্তু আসলেইকি তাই? কার মনে কি আছে সেটা বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। তাই মনের যেটুকু বাইরে প্রকাশ হয় তা নিয়ে বিশ্লেষন করলেই আমরা বুঝতে পারব মনের ভিতরে কি আছে। মনের সবচেয়ে ভাল প্রকাশ করেন কবি, সাহিত্তিকেরা।
তাদের লেখায় কিসের ছাপ দেখি? দেশ কাল পাত্র নির্বিশেষে কবিতা ও গল্পে প্রেমিক প্রেমিকার দৈহিক রুপ সৌন্দর্যের প্রশংসাই খুজে পাই। কয়টা কবিতা বের করা যাবে যাতে প্রেমিক প্রেমিকার মানষিক সৌন্দর্যের প্রশংসা বর্ননা করা হয়েছে?
"যে কামনা নিয়ে মধু মাছি ফেরে বুকে মোর সেই তৃষা!
খুজে মরি রুপ, ছায়াধুপ জুড়ি
রঙের মাঝারে হেরি রঙডুরি!"
--জীবনান্দ দাশ
সুতরাং মানষিক আকর্ষন ছাড়া প্রেম হলেও হতে পারে কিন্তু দৈহিক আকর্ষন ছাড়া প্রেম হয় না।
প্রেমের উদ্দেশ্য কি? প্রেমের উদ্দেশ্য দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানের উদ্দেশ্যে সঙি নির্বাচন। প্রেম একটি গন্তব্য নয়, বরং এটি সঙি নির্বাচন এবং ধরে রাখার একটি প্রক্রিয়া মাত্র। প্রেমের জন্য দীর্ঘ স্থায়ী সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি জরুরী।
তা বিয়ে হোক অথবা দীর্ঘ স্থায়ী সহঅবস্থান যাইহোক না কেন। যেহেতু পশ্চিমা বিশ্বে বিয়ে ছাড়াও সংসার গঠন করা হয় তাই এক্ষেত্রে “দীর্ঘস্থায়ী সহ অবস্থান” শব্দটিই ব্যাবহার করা উচিত। দীর্ঘস্থায়ী সহ অবস্থানের প্রতিশ্রুতি ছাড়া প্রেম হতে পারে না বা তাকে প্রেম হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। পরবর্তীতে সে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানে পরিনত হোক বা নাহোক সম্পর্ক গঠনের সময় দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানের উদ্দেশ্য থাকা জরুরী। প্রেমের সর্বজন গ্রায্য পরিনতি হল দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থান।
সাধারন ভাবে যে প্রেমের পরিনতি দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানে পরিনত হয় না তাকে সফল প্রেম হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তবে একে আরো সঠিক ভাবে বলা যায় যে, যে প্রেমের পরিনতি দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানে পরিনত হয় না তা হয়তো প্রেম হিসেবে বিবেচিত তবে পরিনতির বিবেচনায় তা সফল নয়। এই দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানের ফলে মুলত লাভবান হয় প্রকৃতি- প্রজননের ফলে, যা এই সকল প্রেমেরই প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই দীর্ঘস্থায়ী সহঅবস্থানের মুলেও দেহ। মন নয়।
সুতরাং প্রেমের সুচনা দৈহিক, বিচরন দৈহিক এবং সমাপ্তি –সেও দৈহিক। প্রেম কোন অজর অমর স্বর্গীয় বিষয় নয়। বরং তা নিতান্তই দৈনন্দিন, দৈহিক এবং জাগতিক। যার শুরু আছে, বৃদ্ধি আছে, ক্ষয় আছে এবং আছে ধংস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।