আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মু'মিন, ঈমান ও দৈনন্দিন জীবন

মু'মিন শব্দটির আভিধানিক অর্থ বিশ্বাসী। ইসলামে বা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মু'মিন বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে যিনি আল্লাহর যাত ও সিফাতে বিশ্বাস করেন, আরও বিশ্বাস করেন নবীগণের উপর, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর প্রেরিত রাসুলসমূহের প্রতি, বিচার দিবসে, তকদীর বা আল্লাহ নির্ধারিত ভাগ্য লিখনে এবং পুনরুথ্থান দিবসে। এখন প্রশ্ন হল, এই বিশ্বাস কি শুধুই আক্ষরিক অর্থে নাকি মননে, আচরণে, কর্মের প্রতিফলনে? কলেমা তাওহীদ বা একত্ববাদের বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আমরা আল্লাহকে আমাদের প্রভু এবং মুহম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহ প্রেরিত রাসুল হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছি। এক্ষেত্রে মৌখিক স্বীকৃতিটাই যথেষ্ট নয় বরং আল্লাহর আদেশ প্রতিপালন এবং রাসুল (সাঃ) এর জীবনাচরণ অনুসরণের মাধ্যমেই আমাদের বিশ্বাসের দাবী প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখা করার চেষ্টা করছি।

ধরা যাক, জনাব আব্দুর রহমান তার বাগান পরিচর্যার জন্য একজন মালী নিয়োগ করলেন। কিন্তু মালী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে মূল সড়কে গিয়ে জনাব আব্দুর রহমান যে তার মনিব এবং তিনি অতিশয় সদাশয় ব্যক্তি একথা উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন। সপ্তাহ শেষে জনাব আব্দুর রহমান বাগানে গিয়ে দেখলেন বাগানটি আগাছায় ভরে গেছে এবং গাছগুলো পরিচর্যার অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তির কথা হল, জনাব আব্দুর রহমান তার নিয়োগকৃত মালিকে পারিশ্রমিক তো দিবেনই না, উপরন্তু তাকে চাকুরীচ্যুত করবেন। এই বাস্তবতায় আমরা কিভাবে আল্লাহর আদেশ, নিষেধ প্রতিপালন না করে নিজেদের মু'মিন হিসেবে দাবী করতে পারি? আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়-এটাই হতে পারে শেষ ভরসা।

যে কোন শাস্ত্র (বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম, অর্থনীতি, সাহিত্য) অধ্যয়নের ক্ষেত্রে যে মূলনীতি কাজ করে তা হল,পাত্র/পাত্রী বা বিষয়বস্তুর আচরণ যথার্থ ও যুক্তিসঙ্গত হতে হবে। আসুন, কোরআন হাদীসের আলোকে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি। দৈনন্দিন জীবনের দর্পণে মু'মিনের প্রতিফলন কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে এবার কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করছি। একজন মু'মিনের জীবনাচরিত কে পাঁচটি শিরোনামে ভাগ করে শুরু করছি। এক : ঈমান - তাওহীদের আনুষ্ঠািনক স্বীকৃতি হল মু'মিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এই স্বীকৃতি শুধু মৌখিক হবে না, বরং তা তার কর্মে ও আচরণে প্রতিভাত হবে। সুরা ফাসসিলাত এর ৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে "অমান আহসানা কাওলান মিম্মান দাওয়া ইলাল্লাহি ্ওয়া আমিলান সালিহান, ওয়া কালা ইন্নািন মিনাল মুসলিমিন। " অর্থাৎ তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে যে, আমি মুসলমানদের অর্ন্তভুক্ত। একজন মু'মিন ব্যক্তির অন্যতম দায়িত্ব হল মানুষকে সত্যের দিকে, আল্লাহর পথে আহবান করা, হোক সেটা যে কোন ফোরামের মাধ্যমে অথবা, তার ব্যক্তিগত জীবনাচরণ বা সৎকর্মের মাধ্যমে অন্যকে প্রভাবিত করে। দুই : ইবাদাত - ঈমানের অনিবার্য দাবী হল প্রভুর সমস্ত নির্দেশ অবনত মস্তকে মেনে নেওয়া।

বস্তুত নির্দেশ পালনের মধ্য দিয়েই একজন ব্যক্তি তার সমস্ত অহমিকা বিসর্জন দিয়ে তার সমর্পণকে পূর্ণতা প্রদান করতে পারে। একজন মু'মিনের বাহ্যিক পরিচিতি হল ইবাদাতে নিজেকে পূর্ণরূপে নিয়োজিত রাখা। নিজ স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভই যার একমাত্র উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআন মজীদে মহান আল্লাহর প্রতি বান্দার আত্মসমর্পণের বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে : " কুল ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। " (সুরা আনআম: আয়াত ১৬২) অর্থাৎ বল আমার নামাজ, আমার কর্ম, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবকিছু মহান রাব্বুল আলামিনের জন্য।

ঈমান আনয়নের পর নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এই বাহ্যিক ইবাদাতগুলো যথানিয়মে পালনের মধ্য দিয়ে মু'মিন ব্যক্তি পূর্ণতা অর্জনের পথে অগ্রসর হয়। তিন : মুআমিলাত বা আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত- একজন মু'মিন ব্যক্তি শরীয়ত নির্ধারিত পথে তার আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত কার্যাদি সম্পাদন করবেন। হালাল উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করবেন। হারাম অর্থ দ্বারা উপার্জিত অর্থে জীবনধারণ করা হলে তা ইবাদাত কবুলের অন্তরায়ের কারণ হয়। তার অর্থ সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করেন।

নিয়মিত যাকাত আদায় করেন এবং অর্থ সম্পদের উপর যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার রয়েছে, তাদের হক আদায় করেন। ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার পন্থা অবলম্বন করেন। সমস্ত প্রকার সুদের লেনদেন পরিহার করেন। মু'মিন ব্যক্তি ব্যবসায়ে নিয়োজিত হলে সর্বপ্রকার মজুদদারী, মুনাফাখোরী, ক্রেতাকে প্রতারিত করা ও সামাজিক অনিষ্টকারী কার্য হতে নিজেকে বিরত রাখেন। চার : মুবাশ্শারাহ বা সামাজিক লেনদেন সম্পর্কিত - মু'মিন ব্যক্তি তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।

তাদের প্রতি যে দায়িত্ব বা অধিকার আছে, তা যথাযথভাবে আদায় করে। এসব বিষয়ে বহু হাদীস রয়েছে যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। স্বল্প পরিসরে বর্ণণা একবারেই অসম্ভব। পাঁচ : আখলাক- আখলাক হচ্ছে একজন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, সদাচার, পরোপকার, প্রতিশ্রুতি পালন করা, সময়ানুবর্তিতা, বিপদ ও কষ্টে ধৈর্য্যধারণ করা এসবই হচ্ছে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা আখলাক।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) প্রকৃতিগতভাবে অশ্লীলতা পছন্দ করতেন না এবং তিনি অশ্লীলভাষীও ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে উৎকৃষ্টতম লোক তারাই যাদের চরিত্রসর্বোৎকৃষ্ট (বুখারী ও মুসলিম)। মু'মিনের গুনাবলী জানতে হলে সুরা মু'মিনুন বিস্তারিত অধ্যয়ন করতে হবে। আমার স্বল্প জ্ঞান ও ধারণা এখানে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। সহব্লগারদের নিকট হতে আরও বিস্তারিত ও তথ্যবহুল পোস্ট আশা করছি।

আমার লেখার মধ্যে কোন ভুল বা ঘাটতি থাকলে এবং তা ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে খাঁটি মু'মিন হওয়ার তৌফিক দান করুন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.