আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুরআনের অত্যাশ্চর্য প্রভাব ও প্রাথমিক কুরআনিক প্রজন্ম - শেষ পর্ব

কল্যাণের কথা বলি, কল্যাণের পথে চলি।

======================= "Amazing Impact of the Qur'an and Earlier Qur'anic Generation" আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার "কুরআন ও সুন্নাহ্‌ স্টাডিজ" বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বন্ধুবর ডঃ নূর মুহাম্মদ ওসমানীর লিখা। এখানে অনুবাদটি প্রকাশ করা হলো। ======================= ১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব উপসংহার কুরআনের এই প্রভাব শুধুমাত্র প্রাথমিক যুগের লোকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। কুরআন তার এই ভুমিকা আজো পালন করতে পারে।

কোন অত্যাচারী শাসক যখন কোন মারাত্মক অবিচার করতে উদ্যত তখনও সে আল্লাহ্‌র ভয়ে কেঁপে উঠে যখন আল্লাহ্‌র এক নিবেদিতপ্রাণ বান্দা তাকে কুরআনের বাণী স্মরণ করিয়ে দেন। সে তাত্‌ক্ষণিকভাবে তওবাহ করে আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে আসে। একজন ভারতীয় আলিম, কাজ়ী সাইয়্যিদ আলী মুহাম্মদ (মৃত্যু ১০৭০ হিঃ), একদা জানতে পারলেন যে, বিজাপুরের জনৈক আমীর তার বাড়ির পরিধি বড় করতে গিয়ে মসজিদের জায়গা দখল করে নিতে চাচ্ছিলেন। এলাকার লোকেরা ঐ স্বৈরাচারী আমীরের বিরুদ্ধে কিছুই বলার সাহস পাচ্ছিলনা। কাজ়ী সায়্যিদ আলী তার কাছে চিঠি লিখলেন এবং তাতে নীচের আয়াত উল্লেখ করলেনঃ “তার চেয়ে অধিক জ়ালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ্‌র মসজিদে তার স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে? তাদের জন্য এই দুনিয়ার জীবনে রয়েছে বেইজ়জ়তি এবং আখিরাতে রয়েছে ভীষণ শাস্তি” -বাকারাঃ ১১৪।

ঐ স্বৈরাচারী আমীর লোকটি কুরআনের এই আয়াত শুনে কেঁপে উঠে এবং তাত্‌ক্ষণিকভাবে তার বাড়ির মাঝে মসজিদের জায়গা দখল করার পরিকল্পনা বাদ দেয়। মুঘলদের সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ও দীন-ই-ইলাহী নামক আজব ধর্মের প্রবর্তক আকবর (১৫৪২-১৬০৫ খ্রীঃ) একবার প্রস্তাব করলেন যে তাঁর সীল-মোহরের মধ্যে “আল্লাহু আকবর” খোদাই করবেন। সব মোসাহেব মন্ত্রী ও দরবারীরা এই ধারণাকে স্বাগত জানান এবং তাত্‌ক্ষণিকভাবে এর প্রয়োগ দাবী করেন। কিন্তু আল্লাহ্‌র এক নিবেদিত প্রাণ বান্দা ও আলিম হাজী ইব্রাহীম বললেন, “এটা দিয়ে বুঝাবে আল্লাহ্‌ মহান অথবা আকবর হচ্ছেন আল্লাহ্‌। আপনি বরং খোদাই করুন, ‘ওয়ালা জ়িকরুল্লাহি আকবর’ - আল্লাহ্‌র স্মরণই হলো সবচেয়ে বড়।

” আকবর এটা পসন্দ করলেন এবং বললেন, “এটাতো - মানে তার নিজের প্রস্তাব - একটা শাব্দিক সামঞ্জস্য মাত্র, কিন্তু আমরা তা বুঝাতে চাইনি। ” এই আলিম জবাবে বললেন, “আল্লাহ্‌ এ ধরণের সামঞ্জস্য পসন্দ করেননা। ” কুরআন অতীতে বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করেছে, আর আজো কুরআন তার অলৌকিক ক্রিয়া সাধন করতে পারে এবং কিয়ামত পর্যন্ত পারবে। অতীতে কুরআন এক অনন্য প্রজন্ম সৃষ্টি করেছিল। আজো সেই কুরআন আমাদের মাঝে সেভাবেই বিদ্যমান এবং এই কুরআন বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও এই অনন্য প্রজন্মের জন্ম দিতে সক্ষম।

কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো মুসলমানরা বেশ কয়েক শতাব্দি আগেই এই কুরআনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। এ কিতাব শুধু বরকত ও ফায়েজ় হাসিলের কিতাব নয়; বরং এটাতো পড়ার, অধ্যয়ন করার এবং বাস্তবে আমল করার কিতাব। কুরআন পড়তে হবে আল্লাহ্‌ ও তার রসূলের জন্য যথার্থ ভক্তি ও ভালবাসা সহকারে। তাহাজ্জুদে এই কুরআনের তিলাওয়াত এখণো অলৌকিক ক্রিয়া সাধন করতে পারে। সে সময়ে আল্লাহ্‌র বান্দারা তার খুব কাছে থাকে এবং হৃদয় দিয়ে এর স্বাদ উপলব্ধি করে; তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং হৃদয় শিহরিত হয়।

তারা আল্লাহ্‌র স্মরণে নিয়োজিত হয়। তাদের জীবন নাফরমানী থেকে মুক্ত হয়ে খোদাভীতিতে পূর্ণ হয়। তাদের জীবন রঞ্জিত হয় আল্লাহ্‌র রঙে ও প্রকৃতিতে। নীচের আয়াতগুলো মুমিনদের জীবনে কুরআনের প্রভাবের প্রতিফলন বর্ণনা করেছেঃ “প্রকৃত ঈমানদার হচ্ছে তারা যাদের দিল আল্লাহ্‌র স্মরণকালে কেঁপে উঠে আর আল্লাহ্‌র আয়াত তাদের সামনে তিলাওয়াত করা হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তারা আল্লাহ্‌র উপরই শুধু ভরসা করে।

” [কুরআন, ৮/২] “আল্লাহ্‌ই নাজ়িল করেছেন এক অতি উত্তম কালাম। এ এমন এক কিতাব যার সব অংশ সু-সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যাতে পূনরাবৃত্তি করা হয়েছে একই কথার। এই কালাম শুনলে তাদের গায়ে শিহরণ জাগে যারা আল্লাহ্‌কে ভয় করে, আর তাদের দেহ ও মন আল্লাহ্‌র ভয়ে কোমল হয় এবং তারা আল্লাহ্‌র স্মরণের দিকে ফিরে আসে। ” [কুরআন, ৩৯/২৩]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।