রাজধানীতে বেড়েই চলেছে বাড়ি ভাড়া৷ জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে ঢাকায় থাকা ভাড়াটিয়াদের এ সমস্যার যেন কোনো প্রতিকার নেই৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা স্থানীয় হওয়ায় বাড়িওয়ালাদের দাপটের কাছে অসহায় থাকেন ভাড়াটিয়ারা ছোট্ট একটি রুমে গাদাগাদি করে থাকে চার সদস্যের একটি পরিবার৷ তাঁদের উপার্জনের একমাত্র উৎস গার্মেন্টসে চাকরি করা রোমানার রোজগার৷ দুই হাজার টাকার এই রুমের ভাড়া বছর না ঘুরতেই হয়েছে চার হাজার টাকা৷ আর এখন, বাড়ির মালিক ভাড়া বাড়াতে আবারো চাপ দিচ্ছেন৷ না হলে বাসা ছেড়েও দিতে বলছেন৷ এবার কি করবেন রোমানা? কাঁঠালবাগানে দুই রুমের ছোট্ট একটি মেসে সাইদুর, ইকবাল ও রানাসহ ১০ জন থাকেন মাত্র ১৬ হাজার টাকায়৷ আইন থাকলেও মালিক কোনো চুক্তিই করেনি তাঁদের সঙ্গে৷ তাই তিনি সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া বাড়িয়ে যাচ্ছেন৷ অনেকটা বাধ্য হয়েই মুখ বুজে মালিকের সব অত্যচার সহ্য করছেন তাঁরা৷ কিছু ভাড়াটিয়া আবার জানালেন, ছয় মাসেই ভাড়া বাড়াতে চাইছেন অনেক মালিক৷ কিন্তু তাঁদের বেতন তো বাড়ছে না! মালিকদের দাবি করা বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় অনেককেই বাধ্য হয়ে বাসা ছাড়তে হচ্ছে৷ আর এই খালি বাসায় যখন নতুন ভাড়াটিয়া আসেন, তখন তাঁদেরও গুনতে হচ্ছে আগের ভাড়াটিয়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া৷ তবে বাড়ির মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা৷ তাঁদের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে যেন অজুহাতের শেষ নেই৷ রফিকুল ইসলাম ও আবদুল কাদেরসহ কয়েকজন বাড়িওয়ালা বলছিলেন, কেন তাঁরা ভাড়া বাড়াতে ইচ্ছুক৷ ১৯৯১ সালের বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, দুই বছর আগে ভাড়া বাড়ানো যায় না৷ যায় না জামানত নেয়া৷ এর জন্য ভাড়াটিয়া ও মালিকপক্ষকে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়৷ আইনে এ সব কথা থাকলেও, তার তোয়াক্কা করছেন না অনেক বাড়ির মালিক৷ কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ সংক্ষেপে ক্যাবের সভাপতি কাজী ফারুক বললেন, ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আইন অনুযায়ী চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথায়৷ এক্ষেত্রে ভাড়া নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রশিদ দিতে হয়৷ কিন্তু বাস্তবে তো তা হচ্ছে না৷ ক্যাবের আরেক কর্মকর্তা জামিল চৌধুরী জানান, ভাড়া বাড়ানোর একটা নিয়ম আছে৷ ক্যাবের পক্ষ থেকেও অনেক সময় এটা প্রচার করা হয়৷ কিন্তু কে শোনে কার কথা? অনেক ভাড়াটিয়া জানান, গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বাসা বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা অগ্রিমও নেয়া হয়৷ তাঁরা বলেন, বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কোনো চুক্তি করেন না৷ দেন না ভাড়া নেয়ার ছাপানো রশিদও৷ বাসা ছেড়ে দিতে যে পরিমাণ সময় দেওয়ার কথা, তা নোটিশের মাধ্যমে জানান না৷ সবই হয় মৌখিকভাবে অথবা সাদা কাগজের ফর্দের মাধ্যমে৷ আইনজীবীরা বলছেন, আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে এ কারণে, বাড়িওয়ালারা লিখিত কোনো কিছুই করেন না৷ আবার কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যেও বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ রাখেন না বাড়িওয়ালারা৷ এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি ভাড়া আইনকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন আইনবিদরা৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, কমিশন গঠন করে এলাকা ভেদে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা দরকার৷ ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া আর বাসা পাল্টানোর ঝামেলা এড়াতে ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালাদের অত্যাচার ও বেআইনি পদক্ষেপ সহ্য করে নেন৷ এছাড়া, বিরোধে জড়ালে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ও থাকে৷ এ জন্য তাঁদের মেনে নিতে হয় বাড়িওয়ালার সব অন্যায়৷ এর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে গিয়ে নতুন করে হয়রানির শিকার হতে হবে ভেবে সেদিকেও অগ্রসর হন না ভাড়াটিয়াদের কেউ কেউ৷ তবে ভয় না পেয়ে বাড়ির মালিক আইন না মানলে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবী শিরিন চৌধুরী৷ বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে ২০১০ সালের ২৬শে এপ্রিল জনস্বার্থে একটি রিট করেন বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ৷ রিট আবেদনের শুনানিতে আদালতকে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়ার তালিকা অনুসারে ভাড়া আদায়ে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷ এ আইন অনুসারে বিধিমালা প্রণয়নের বিধান থাকলেও, তা করা হয়নি৷ ফলে বাড়ির মালিকের বেআইনি কর্মকাণ্ডে ভাড়াটিয়ারা অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন৷ কিন্তু এখনও এই রিটটির নিষ্পত্তি হয়নি৷ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনটি সংশোধন করা হলে মালিকপক্ষের একতরফা আচরণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ লেখাটি "http://www.dw.de/" থেকে কপি করা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।