আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি সম্পদ দরিয়া নূর শতাব্দিকাল ব্যাংকের লকারে

সংবিধান-ই নাগরিকের শক্তি

বিশ্বখ্যাত দু'টি হিরক অলংকার, একটি কোহিনূর যা রয়েছে বৃটিশ সম্রাজ্ঞীর মুকুটে, আরেকটি দরিয়া নূর শতাব্দিকাল ধরে বন্দিদশায় পড়ে আছে সদরঘাটের একটি ব্যাংকের লকারে। ইতিহাস বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, পুরাকীর্তি সম্পদরূপে দরিয়া নূরকে ব্যাংকের লকার থেকে বের করে সংরৰণ ও প্রদর্শনে জাদুঘরে রাখা হলে এ দুর্লভ রত্ন সম্পদটি দেখতে প্রচুর দর্শক সমাগম এবং টিকেট বিক্রয়ে যথেষ্ট রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আলাপকালে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আলমগীর জানান, '৮০ দশকে আহসান মঞ্জিলকে জাদুঘররূপে অধিগ্রহণের সময় দরিয়া পূরকে জাদুঘরের সম্পদরূপে নেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। '৯০ দশকে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। অদৃশ্য বাধার কারণে ব্যাংকের লকার থেকে দরিয়া নূরকে প্রদর্শন গ্যালারিতে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

দৰিণ ভারতের খনি থেকে আবিষ্কৃত চতুর্ভুজ আকৃতির দরিয়া নূরের কেন্দ্র পিঠের মূল হিরকটির ওজন ২৬ ক্যারেট। এর চারপাশে ৫ ক্যারেট ওজনের আরো ১০টি হিরক খণ্ড সোনার তারে অলংকরণ করা হয়েছে। দৰিণ ভারতের মারাঠা রাজাদের হাত থেকে ইতিহাসের অনেক ধাপ ঘুরে দরিয়া নূর সর্বশেষ ঢাকার নবাবদের রত্নভাণ্ডারে আসে। বিশেষজ্ঞমহল মনে করেন, সরকারের হাতে এমন পুরাকীর্তি রৰা আইন আছে, যা একদিনেই কার্যকর করে ঐতিহাসিক প্রত্ন সম্পদ দরিয়া নূরকে ব্যাংকের লকার থেকে বের করে জাদুঘরে নিয়ে রাখা যায়। তবে সরকারের পর সরকার বদল এবং যুগযুগান্তরকাল পার হয়ে গেলেও দায়িত্ব নিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না।

১৯৮৫ সালে বিদেশী বিশেষজ্ঞ এনে পরীৰা করে দেখা গেছে, দরিয়া নূর খাঁটি হিরার তৈরি। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য পর্যালোচনায় জানা যায়, দরিয়া নূর ছিল দাৰিণাত্যের মারাঠা রাজাদের সম্পদ। হায়দরাবাদের নবাব এক লাখ তিরিশ হাজার টাকা দাম দিয়ে এটি কিনে নিয়েছিলেন। পরে কোহিনূরের মতই দরিয়া নূর চলে যায় পারস্য সম্রাটের হাতে। পারস্য থেকে আবার ভারতে ফিরে আসে পাঞ্জাবের রনজিত সিংহের কাছে।

রাজা রনজিত সিং ডান হাতের বাজুতে কোহিনূর এবং বাম বাজুতে দরিয়া নূর ধারণ করতেন। পাঞ্জাব ১৮৪৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দখল করে নিলে মহারাজ দিলীপ সিংহের রত্নভাণ্ডার থেকে কোহিনূর ও দরিয়া নূর বৃটিশরা করায়ত্ত করে নেয়। ভারতের রাজা-বাদশাদের খাজাঞ্চিখানা থেকে লুণ্ঠিত অলংকার ও রত্ন সম্পদ নিলামে বিক্রয় করতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৫০ সালে লন্ডনে একটি প্রদর্শনির আয়োজন করেছিল। সে প্রদর্শনিতে কোহিনূর ও দরিয়া নূর রাখা ছিল। কোম্পানি কোহিনূরটিকে বৃটিশ সম্রাজ্ঞি ডিক্টোরিয়াকে উপহার দিয়েছিল।

যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় দরিয়া নূরকে আবার ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। দু’বছর পর ১৮৫২ সালে কলকাতার হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানির মাধ্যমে দরিয়া নূরকে নিলামে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকার নবাব খাজা আলিমুলৱাহ ৭৫ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দাম দিয়ে দরিয়া নূর কিনে নেন। এরপর থেকে দরিয়া নূর ঢাকার নবাবদের এক অহংকারের বস্তু বিবেচিত হয়ে আসছে। নানা কারণে নবাব সলিমুলৱাহ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

১৯০৮ সালে পাঁচ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দরিয়া নূরকে বৃটিশ সরকারের কাছে বন্ধক রাখতে হয়। ঋণ পরিশোধে নবাব সলিমুলৱাহ দরিয়া নূর বিক্রয় করতে চাইলে বৃটিশ সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান কলকাতার হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানি ১৯১১ সালে পুনরায় লন্ডনে নিয়ে নিলামের আয়োজন করে। কিন্তু এবারও নিলাম ব্যর্থ হয়। তবে এরপর আর দরিয়া নূর নবাবদের মহলে ফিরে আসেনি। হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানির হেফাজতে ভারতের ইম্পিরিয়েল ব্যাংকের ঢাকা (সদরঘাট) শাখার লকারে রাখা হয়েছিল।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর হিসাব-নিকাশের অনেক নথিপত্র ওলট-পালট হয়ে যায়। বৃটিশ সরকারের পাশাপাশি মণি-মুক্তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানিও পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায়। ঢাকার ইম্পিরিয়েল ব্যাংক রূপান্তরিত হয় পাকিস্তানের ন্যাশনাল ব্যাংক নামে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন নাম হয় সোনালী ব্যাংক। তবে নবাব সলিমুলৱাহর সরকারি ঋণ পরিশোধ করা না হলেও দেশ বিভাগের পর ব্যাংকের লকারে গচ্ছিত দরিয়া নূর কিভাবে নবাবদের বিষয়-সম্পত্তির তদারকি প্রতিষ্ঠান কোর্ট অব ওয়ার্ডসয়ের অধীনে চলে এল, এ রহস্য জানা যায়নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.