ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
নেটের চিঠি/ শেখ জলিল
রঙিন কাগজে সুন্দর হস্তাক্ষরে চিঠি লিখার দিন প্রায় শেষ। রঙিন খামে করে এখন আর আসে না কারুরই চিঠি। একান্ত কাছের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনেরা ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোনে দরকারী কথা সেরে নেয়, কখনও বা পাঠায় এসএমএস। অফিসে বসলে প্রচুর অফিসিয়াল চিঠি পাই। সেতো আর প্রাণের ভাষা নয়- সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক বা লেনদেনের বিষয়-আশয়।
ঘরের ঠিকানায় কালেভদ্রে বছরে দু'একটা চিঠি আসে দেশ-বিদেশের কারও কাছ থেকে। তবে তার সংখ্যা এখন একেবারে নাই হতে চলছে।
এখন চলছে ইন্টারনেটের যুগ। ইন্টারনেট ব্রাউজিং-এ যোগ হয়েছে চ্যাট, মেইল, ব্লগ, ফোরাম অথবা গ্রুপ। এসবের মাধ্যমে নিজের মনের কথা, লিখা, ছবি আদান-প্রদান করা যায়; এমনকি ওয়েবক্যামের মাধ্যমে সরাসরি কথাবলা বা পছন্দের মানুষের তাৎক্ষণিক ছবিও দেখা যায়।
বছর চারেক আগে আমি চ্যাট করতাম। দেশ-বিদেশের অনেক বন্ধু-বান্ধব জুটেছিলো সে সময়। এর কল্যাণে অনেক দেশের বাহারি জায়গার নাম, নানান ভাষা জেনেছি, শিখেছিও কিছুটা তাদের; আবার অনেককে বাংলা ভাষার কয়েক ছত্র শিখিয়েছিও। এরকম বন্ধু-বান্ধবরা এখনও অফলাইন মেসেজ বা ইমেইল পাঠায়। নিজের ব্যস্ততার জন্য কারুরই উত্তর দেয় হয় না আর।
তবে দু'একটা ইমেইল এখনও মনে দারুণ নাড়া দেয়। এসব ইমেইলের ভাষা আগের যুগের চিঠির চেয়ে কম মূল্যমানের নয়। বেশ কিছু মেইল সেইভ করা আছে আমার। এরকম একটি মেইল বাংলায় অনুবাদ করে আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। এই মেইলটিতে আমি ক্যালগেরী, বানফ নামক জায়গাগুলোর ছবিও পেয়েছি; পেয়েছি জায়াগুলোর মনকাড়া বর্ণনা।
কল্পনায় চলে গিয়েছি সেসব জায়গায়। পত্রপ্রেরকের পাশে বসে থেকেছি একান্তে, হাত ধরে হেঁটেছি দু'জনে দীর্ঘপথ। এও বা কম পাওয়া কীসের! ০৩.১১.২০০৭
১. ক্যালগেরী থেকে
''খোলা জানালায় এক মুঠো আলো হয়ে ভোরের আকাশটা ঘুমভাঙা দুটি চোখে ধরা দিয়েছে, তোমার আমার মনে পড়েছে। ''
সুপ্রভাত!!! আরও একটি নতুন দিন শুরু হলো..আশা করছি সুন্দর আর স্বপ্নীল হয়ে থাকবে আজকের দিনটি। আমার পাগলামীগুলো কি খুব বিরক্ত লাগে?? যদি লাগে তাহলে সত্যি আমি বন্ধ করে দেবো..
ঘুরতে যাবেন? চলুন, আজ আপনাকে আমাদের বানফ-এ নিয়ে যাই..ক্যালগেরী থেকে আমাদের যেতে লাগবে বাসে চড়ে, গ্রে হাউন্ডে বসে ৩ ঘন্টার জার্নি আর পবে বানফ-এ এসে পৌঁছালাম..রকি মাউন্টেইন-এর পাশেই ছোট্ট একটি লেক..আচ্ছা ঐ যে ঐপাশে কিছু পাথর জমা আছে, ঐ জায়গায় বসি..পাহাড়টা ঢেকে আছে বরফে, কী সুন্দর দেখতে লাগে তাইনা? মনে হয় যেন সাদা জর্জেটের শাড়ি পরে ছড়িয়েছে রুপোলী গহনা..চিকমিক করছে পাহাড়টা..
নৌকো চড়বেন? ঐ যে বাঁদিকে তাকিয়ে দেখেন, ওরা নৌকো ভাড়া দেয়, নিজেদেরই কিন্তু বাইতে হবে..দুপাশে দুজনকে বসিয়ে দিয়ে বৈঠা দেবে, যাবেন?..
এই পেয়েছি একটি, আমি বসলাম এই পাশে, আপনি বসলেন ঐ পাশে।
আমি কিন্তু পারি না নৌকো বাইতে, তবে হয়ে যাবে..কী বলেন? বাহ্, আপনি দেখি কী সুন্দর মনের আনন্দে নৌকো বেয়েই চলছেন..হার মানলাম আমি..
ফিরে এসে আমি তো ভীষণ টায়ার্ড..আর অনেক ক্ষুধাও লেগেছে। চলুন আপনাকে লেকের পাশে ঐ ছোট্ট ক্যাফেতে নিয়ে যাই। সূর্যও একটু ঢলে পড়েছে। ভালোই লাগবে বসে একটু চা খেতে। জায়গাটা কিন্তু চমৎকার! ঐ দূরে পাহাড়টাও দেখা যাচ্ছে..দেখেছেন? আপনার চা টেবিলে কেন পড়ে আছে? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো..
এখন ক্যাবল কারে চড়ে পাহাড়ের উপরে যাবো আর সূর্যাস্ত দেখবো।
ক্যাবল কারে চড়ে আমি আর আপনি যাচ্ছি। নিচে কতো কিছু দেখা যাচ্ছে! সব সাদা, বরফে ঢাকা...
নামিয়ে দিলো আমাদের। আরও অনেকেই আছে, তবে আমরা একটু জায়গা করে নিলাম এই পাশে যাতে সূর্যাস্ত দেখতে পারি। আমার কিন্তু একটু ভয় করছে এতো পাশ ঘেঁষে দাঁড়াতে। নিচে দেখলেই মনে হয়- যদি পড়ে যাই! আকাশের কমলা রং ধরেছে..ধীরে ধীরে রংটা লালচে হয়ে আসছে।
কী সুন্দর দৃশ্য! ইচ্ছে করছে গান ধরি..''সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক, বেশ তো''
সন্ধ্যা হয়ে এলো। বাস্তবতা অপেক্ষা করছে। চলুন ফিরে আসা যাক। জানি না কেমন কাটলো আপনার? আমার কিন্তু খুব ভালো লেগেছে।
ভালো থাকবেন, সুন্দর থাকেবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।