সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
এবারের বুকার পুরস্কার পেলেন অ্যান এনরাইট। গত বছর পুরস্কারটি পেয়েছিলেন ইনডিয়ায় জন্ম নেয়া লেখক কিরণ দেশাই। কিরণের আগে বেশ কয়েকজন ইনডিয়ান লেখক পুরস্কারটি পেয়েছেন। অনেকে পুরস্কার না পেলেও শর্ট লিস্টেড হয়েছেন।
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া লেখক মনিকা আলিও ২০০৩-এ ব্রিক লেন উপন্যাসটির জন্য শর্ট লিস্টেড হয়েছিলেন।
ইনডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের ইংরেজি ভাষী লেখকদের বুকার পুরস্কার প্রাপ্তি বা এর সঙ্গে তাদের নাম জড়িয়ে থাকার কারণে সম্প্রতি এখানকার দেশগুলোতে পুরস্কারটি অনেক বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছে। পাঠকরা পুরস্কার ও এর আনুষঙ্গিক বিষয়ে খোজ-খবর নিতে শুরু করেছেন। এমনকি শর্ট লিস্টের আলোচনাও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে এ অঞ্চলের পত্রপত্রিকাগুলো। বলাবাহুল্য, এ ক্ষেত্রে ইনডিয়ান পত্রিকাগুলো বরাবরের মতোই এগিয়ে আছে।
তবে পত্রিকাগুলো বেশি ব্যস্ত ছিল ইনডিয়ান লেখক ইন্দ্র সিনহাকে নিয়ে। তার অ্যানিমালস পিপল উপন্যাসটির বুকার জয়ের জোর সম্ভাবনা ছিল।
১৯৫০ সালে জন্ম নেয়া এ লেখকের পাশে ছিল আরেকটি নাম। লেখক একেবারে তরুণ। পাকিস্তানে জন্ম নেয়া লেখক মহসিন হামিদ।
১৯৭১ সালে লাহোরে জন্ম নেয়া এ তরুণের উপন্যাসটির নাম খুব কৌতূহলকর : দি রিলাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট। ইন্দ্র সিনহা, মহসিন হামিদ ছাড়াও শর্ট লিস্টে ছিলেন নিকোলা বার্কার, লয়েড জোন্স, ইয়ান ম্যাকইউয়ান। পুরস্কার বিজয়ী অ্যান এনরাইট আইরিশ লেখক। ১৯৬২ সালে ডাবলিনে জন্ম নেয়া এ লেখক চতুর্থ উপন্যাস দি গ্যাদারিংয়ের জন্য বুকার পেলেন।
অ্যানের লেখা পত্রপত্রিকার আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও আয়ারল্যান্ড ও বৃটেনে তিনি ততোটা পরিচিত মুখ নন।
তার লেখাগুলো পারিবারিক সম্পর্ক, ভালোবাসা, যৌনতা, আয়ারল্যান্ডের বেদনার্ত অতীত ও বর্তমানের যুগ যাতনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
পুরস্কার পাওয়া উপন্যাসটির বিষয়ও এগুলো। ২৭২ পৃষ্ঠার উপন্যাসটির প্রকাশক জনাথন কেপ। প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের মে মাসে। আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে ছড়ানো একটি পরিবারের তিন প্রজন্মের কাহিনী নিয়ে উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে।
উপন্যাসের বর্ণনাকারী ৩৯ বছর বয়সী এক নারী, ভেরোনিকা।
অ্যান পড়ালেখা করেছেন ডাবলিন ও কানাডায়। ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া থেকে তিনি ক্রিয়েটিভ রাইটিংসে মাস্টার্স করেছেন। ছয় বছর তনি ডাবলিনে টিভি প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছেন। এখন কাজ করেন আরটিইতে।
লেখালেখি করেন লন্ডন রিভিউ অফ বুকস ও আইরিশ টাইমসে। বিয়ে করেছেন অভিনেতা ও পরিচালক মার্টিন মার্ফিকে। তাদের দুই বাচ্চা, একটি চার অন্যটি সাত বছরের।
পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি কথা বলেছেন লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার সঙ্গে। সেটি যায়যায়দিনের পাঠকের জন্য অনুবাদ করা হলো।
# অ্যান এনরাইটের ইন্টারভিউ #
পুরস্কার পাওয়ার পর প্রথম ইন্টারভিউ দেয়ার সময় অ্যানের চোখে ছিল এক ধরনের উজ্জ্বলতা। তিনি বললেন, ‘আমার স্বামী রীতিমতো বাজি ধরে বসেছিল। ১৫ ইরোর বাজি। সে সত্যি বিরাট জয় পেয়ে গেল। আমার আরেক লন্ডনের বন্ধু শর্ট লিস্টের বাকি সবার নামে বাজি ধরলেও আমার নামে ধরেনি।
তার ধারণা আমার নামে বাজি ধরলে সেটা আমার জন্য অমঙ্গলজনক হবে। ’ শর্ট লিস্টের অন্য বইগুলো সম্পর্কে অ্যানের মত, ‘বইয়ের দোকানে গিয়ে আমি ওইগুলোর দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখিনি। শর্ট লিস্টেড হওয়ার পর আমি ভাবলাম, যাক ছয় সপ্তাহের জন্য মজাদার কিছু অন্তত পাওয়া গেল। ধপাস করে বসে পড়তে আর দুশ্চিন্তা করতে রাজি ছিলাম না আমি। মাত্র গতকাল আমি অন্যদের কথা ভেবেছি।
তাদের ফোন দিয়েছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমি একাই ওই লিস্টের মধ্যে ছিলাম। ’
আমি তাকে বললাম, গ্যাদারিং পড়তে গিয়ে আমি বেশি দূর এগোতে পারিনি। এর বর্ণনা পদ্ধতি আমার হৃদয়কে প্লাবিত করেছে।
হেগার্টি পরিবারের কয়েকটি জেনারেশন ডাবলিনে জড়ো হয়েছে লিয়ামের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে। সে এ পরিবারেরই সন্তান, পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করেছে। তার সহোদর ভেরোনিকা এ মৃত্যুর কারণ খুজছে তাদের শৈশবের স্মৃতির মধ্যে। বোঝার চেষ্টা করছে সে সময়ের নিপীড়ন তার এ মৃত্যুর কারণ হতে পারে কি না। নিজের তিক্ত বিয়ের স্মৃতি তাকে দগ্ধ করছে।
এর চেয়ে বরং ভাঙা গ্লাসে পাক খেতে খেতে শোপেনহাওয়ার পড়া অনেক ভালো।
এনরাইট বলেন, ‘জানি, জানি। আমার এক স্কুল ফ্রেন্ড বলেছে, আমার ধারণা এটা আমাকে পড়তে হবে। কিন্তু আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছি। ’ এনরাইট ফিকফিক করে হাসলেন।
কিন্তু এ বিষয়ে একমত হলেন না যে, তার উপন্যাসটি গতানুগতিক আইরিশ উপন্যাসের ধারায় আরেকটি সংযোজন। ‘আপনি আইরিশ ফিকশনে এ রকম কিছু পাবেন না। উদাহরণ হিসেবে ফ্রাঙ্ক ম্যাককোর্টকে মনে পড়ে। ’
সমালোচকরা দি গ্যাদারিংয়ের বিপুল প্রশংসা করেছেন এর বেপরোয়া বর্ণনা ও পারিবারিক ইতিহাসের বর্বর বিশ্লেষণের কারণে। এমনকি নিউ ইয়র্ক টাইমসের চিন্তাশীল ও ইতিবাচক রিভিউটিতেও বলা হয়েছে বইটার কোনো উপসংহার নেই।
আমি এনরাইটকে বললাম, তারা নিশ্চয়ই আলাদা কিছু পেয়েছেন এর মধ্যে। কিন্তু আমার কাছে একে একটি ফানি বই মনে হয়েছে। এনরাইট বলেন, ‘এটা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ’
বইটা যৌন আকাক্সক্ষার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও ভীষণ জটিল। এ বিষয়ে এনরাইট বলেন, ‘আমি যে কাজগুলো করার চেষ্টা করেছি সেগুলোর মধ্যে একটি হলো : কামনা বিদ্বেষ কিভাবে একটির সঙ্গে অন্যটি দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত তা তদন্ত করে দেখা।
’
তিনি এখন প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেন আয়ারল্যান্ডের সরকারি টেলিভিশন আরটিইতে। পেশা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই মজার কাজ। বিশেষ করে স্যাটায়ার শো ও বাচ্চাদের জন্য অনুষ্ঠান বানানোর কাজ। কিন্তু এতে আমি এতোটাই কঠোর পরিশ্রম করছিলাম যে, আমি যা হতে চাই তা থেকে দূরত্ব তৈরি হলো। আমি তো লেখক হতে চেয়েছিলাম।
ফলে, আমার মধ্যে হতাশা নেমে এলো। ওরা বললো, টিভিতে কাজ করা আর আর্মিতে কাজ করার পদ্ধতি এক রকম। আমার কাছেও তাই মনে হতো। কখনো কখনো এ কাজের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত মনে করতাম আমি। কিন্তু এর মূল্য অনেক।
ফল দাড়ালো এই যে, আমি প্রচুর পান করতে থাকলাম। জীবনে যা সবচেয়ে বেশি চেয়েছিলাম তার কিছুই করতে পারছিলাম না। মনে হলো আমি খাচাবদ্ধ হয়ে গেছি। কয়েক মাসের হতাশার পর একটাই প্রশ্ন ছিল আমার মনে, কিভাবে চাকরিটা ছাড়বো। ১৯৯৩ থেকে আমি ফুলটাইম লেখক।
আমি ভীষণ আনন্দিত। এ পর্যন্ত হয়তো এ আনন্দ কেউই পায়নি। ’
তার ছোট বাচ্চা নিয়ে কথা উঠলো। আশপাশে বাচ্চা নিয়ে লেখাটা কঠিন কি না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘এখন এটা অনেক সহজ। ওরা স্কুলে গেছে।
কিন্তু কাজটা আমার জন্য কখনোই কঠিন ছিল না। আমার মনে পড়ে, এক হাতে দোলনা ঠেলতে ঠেলতে অন্য হাত দিয়ে টাইপ করছিলাম। অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হলেও এটাই সত্যি। ’ তিনি বাচ্চা বড় করা নিয়ে একটি ননফিকশনেরও লেখক। বললেন ‘জীবন এখানে, অন্য প্রান্তেও একই রকম।
শুধু কিছুটা ভালো ও কিছুটা কঠিন। ’
এনরাইট বলেন, গ্যাদারিং কোনোভাবেই আত্মজৈবনিক নয়। কিন্তু বর্ণনাকারীর সঙ্গে এনরাইটের বয়সের মিল আছে। তিনি বলেন, এতে এনরাইটের জীবনের কিছু মুহূর্ত আছে। একটা ঘটনায় ভেরোনিকা ফোন করে বলে, সে বাড়ি ফিরে আসছে।
তখন তার মেয়ে তাকে বলে, ‘আমি তোমাকে একটা শব্দ দিয়েছি। আর সেই শব্দটা হলো ভালোবাসা। ’ এনরাইট গর্বের সঙ্গে বললেন, ‘সত্যি সত্যি আমার মেয়ে কথাটা আমাকে বলেছে। ’ মেয়ের বয়স কতো? ‘তিন। লক্ষ্মীছানা!’
গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন
স্টুয়ার্ট জেফ্রিস
ভূমিকা ও অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।