জামালপুর, কুড়িগ্রাম, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এসব এলাকার পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকটের কারণে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় এখনো পৌঁছেনি ত্রাণসামগ্রী। চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বহু বাড়িঘর।
মাওয়ায় বিলীন হয়েছে লঞ্চঘাট। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
জামালপুর : জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মারাত্দক আকার ধারণ করেছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে মেলান্দহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ সেন্টিমিটার। গতকাল সকালে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ১৪টি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে জেলা শহরের নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা। মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে। অভাব দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। পাউবো সূত্র জানায়, তিস্তা, ধরলাসহ ১৪টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃষ্টিপাত ছাড়াই পানির বৃদ্ধিকে তিনি ভারতীয় ঢল বলে জানিয়েছে।
মাদারীপুর : পদ্মার পানি বেড়ে মাদারীপুর শিবচরের কাওড়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে ১২ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমা ৮ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে। শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, মাদবরেরচরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দৌলতপুর উপজেলায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও শাখা নদী তীরবর্তী এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
শিবালয় উপজেলার গোয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, জামে মসজিদ ও জাফরগঞ্জ বাজার যমুনায় বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত প্রকল্প তেমন কোনো কাজে আসেনি।
গাইবান্ধা : উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাইবান্ধা, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এতে ৩০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারি ত্রাণ সহায়তা এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি।
ফরিদপুর : পদ্মা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির কারণে ফরিদপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্দক অবনতি হয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন গত ২৪ ঘণ্টায় প্লাবিত হয়েছে। কমপক্ষে ৩০ গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৩৭ সে.মি ও মহানন্দার পানি ২৭ সে.মি কমে বিপদসীমার ৬৩ সে.মি এবং ২ সে. মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ৮টি এবং শিবগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনসহ দুটি বি্লডিং নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চাঁদপুর : প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা সংস্কারে ব্যয় করা সত্ত্বেও আবারও চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গতকাল থেকে শহরের পুরানবাজার ব্যবসা কেন্দ্র এলাকায় প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় নদী তীর এলাকার হরিবিলা সাহারবাড়ির ৪/৫টি বসতঘরও তলিয়ে যায়। এলাকাবাসী ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক অস্থায়ীভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে। চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল ঘোষ জানান, শহররক্ষার সংরক্ষণ কাজ ঠিকমতো হলে এ ভাঙন দেখা দিত না।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মুন্সীগঞ্জ : মঙ্গলবার রাতে পদ্মার আকস্মিক ভাঙনে মাওয়ায় লঞ্চঘাট এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন শুরু হলে লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। স্রোতের তোড়ে নদী ভেঙে লঞ্চঘাটের পন্টুন সরে যায় অন্যত্র। পন্টুনের সংযোগ সিঁড়ি ভেসে যায় পদ্মায়।
রাতে ঘাটের পন্টুনে থাকা লঞ্চগুলো সরিয়ে নেওয়া হয় দ্রুত। লঞ্চঘাটের আশপাশের ট্রলার ঘাট ও সি-বোট ঘাটও সরিয়ে নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৪০ ফুট এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।