আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ--কে বলে 'আগের মত' মজা নেই? - ১ (সন্ধ্যাবাতি)

জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।

ঈদ মুবারক। দারুণ একটা রোজা গেল, ঈদ গেল। রোজা দারুণ, কারণ মনে হয়েছে, এই পার্থিব শরীরে চর্বি না জমলেও একদম ভিতরের আমি, যাকে 'আত্মা' বলা যায়, তার স্বাস্থ্য কিছুটা হলেও ভালো হয়েছে--রমজান থেকে আমার অতটুকুই চাওয়ার ছিল। এখন শুধু চাই পরের রমজান অব্দি স্বাস্থ্যটুকু যেন ধরে রাখতে পারি, হাড় জিরজিরে অ্যানারক্সিক হয়ে না যাই।

ঈদ ভালো হওয়ার একটা কারণ হয়তো নিজের ভিতরের পূর্ণতা, ভালো লাগা--চমৎকার রোজা কাটানোর ভালো লাগা। এই ছবিটা আমাদের হেনা পার্টির। বান্ধবীরা সেদিন এক সাথে ইফতার করলাম, তারপর সারা রাত জেগে তাঁর পাঠানো চিঠি খুটে খুটে পড়া। তাঁকে ডাকা। একসাথে।

মাঝে মাঝে তাসিনের আপেল পাই, মীরার চকলেট কেইক আর আমার অনেক আগে ছেড়ে দেয়া কফি গলায় ঢালা, আশা--সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম চালু করে দিয়ে ক্যাফেইন আমাকে জাগিয়ে রাখবে ঘুম থেকে। তাঁর সাথে থাকার সুযোগ দিবে। থাকলামও জেগে। সে কি তৃপ্তিময় সময়টুকু! তারপরে, সব মেয়েরা এক সাথে হই চই করে সেহরী খাওয়া। রোজার প্রথম দিকে যখন বন্ধুরা এসে থেকেছিল, তখন মায়ের রান্না চিংড়ি ভুনায় ভীষণ ঝাল পড়ে গিয়েছিল।

আফি আপু আর তাসিনের টকটকে লাল, অশ্রুস্নাত মুখ মনে করে এবার ঝাল কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেটা এবং অন্যান্য আন্টিদের রান্না দিয়ে জমলো ভীষণ সেহরী পার্টি। তারপরে, আরেকবার তাঁকে ডেকে ঘুম। সকালে ঘুম ভেঙেছিল আন্টির তুরতুরে পিচকিগুলোর যন্ত্রনায়। বাসা ভর্তি মেয়েগুলো ওদের নিয়ে দুষ্টুমি না করে এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে ওদের সহ্য হচ্ছিল না।

নো্য়াখালী, ইংলিশ আর বাংলার মজার এক খিচুরি বানিয়ে চিৎকার, 'একন এইটো ক্লক বেজে গেসে, তোমরা একনও গুমাইতেসো ক্যান?' বড় ফ্যামিলি রুমটায় মাটিতে বিছানা করে ঘুমিয়েছিলাম সবাই। মাথার কাছে এসে উকি দিতে গিয়ে শ্যাম্পু করা ছড়ানো চুলে পারা দিয়ে দিল মেজাজ খারাপ করে। অগত্যা উঠতেই হলো। সব গুছিয়ে এর পরেই হলো হেনা পার্টি। হাতে মেহদী দেওয়ার ধুম।

সৃজনশীলদের মেলা। এক একজনের আল্পনা দেখে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলাম--আমি কিনা ভাবতাম আমি ভালই পারি! দুই হাত মেলে বসে পড়লাম ওদের হাতে স্বভাগ্য সঁপে দিয়ে। আন্টির পিচকি মেয়েটা, আর ওর আরও পিচকি বান্ধবীও চলে আসলো হাত বাড়িয়ে। 'আমাকে লাগায় দাও'। ওদের হাতে লাগিয়ে দেয়ার পরে ওদের ঢং দেখাটাই সবচেয়ে মজা ছিল।

কাউকে কাছে ঘেষতে দিবে না। হাতের তালু টান টান করে সামনে ছড়িয়ে, পায়ের উপর পা দিয়ে দিব্যি বিবি হয়ে বসে আছে। একদম চুপ। কে বলবে এদের জন্য ঘরের কিচ্ছু জায়গা মত থাকে না? মেয়েদের এত মজা আন্টির পিচকি দুই ছেলের সইবে কেন? ওদের হাতেও মেহদী দেয়া লাগবেই। যতই বুঝানো হয়, বাবারা, মেহদী তো মেয়েদের।

সবাই গার্ল ডাকবে। ওদের টলানো গেল না। শেষ মেষ চাঁদ তারার সাথে ঈদ মোবারক লিখে শান্ত করা হলো। ছবিটা সবগুলো পিচ্চির হাত। আমার ভীষণ প্রিয় একটা ছবি।

ছবিটা তুলেছিলাম পায়ের আংগুলে ভর করে। আমার মোবাইলের ক্যামেরার স্বল্প পরিসরে জায়গা পাওয়ার জন্য পিচকিগুলো যুদ্ধ করছিল। দুই চোখে প্রবল আগ্রহ। ছবি তুলে খেয়াল করলাম, অনেক নিচে ওদের ছোট্ট পাগুলোও উঁকি দিচ্ছে। কি যে কিউট লাগছে! আমার ভীষণ প্রিয় ছবিটা দিয়েই আপনাদের জানালাম--ঈদ মোবারক! আমার ঈদ শুরু হয়েছিল সেদিনই।

আসল ঈদের এক সপ্তাহ আগে। বন্ধুদের মধ্যে আমাদের একটা জিনিস প্রচলিত আছে। ঈদের সময় সবাইকে বড় বড় গিফট দিতে ইচ্ছা করে, কিন্তু তা কি হয়? তাই কাগজে নাম লিখে সবাই একটা করে নাম তুলে। ঈদের ক'দিন আগে যার নাম পাওয়া গিয়েছে তাকে উপহার দিতে হয়। এটা করলাম।

একজনে কি মন ভরে? পরের দিন আবারও গেলাম শপিঙে। এক গাদা গিফট কিনলাম। কানের দুল, হিজাবে লাগানোর পিন, বই, পায়েল এই সব হাবি জাবি। রাতে না ঘুমিয়ে র‌্যাপও করে ফেললাম, রুপালী ফিতা দিয়ে বেঁধে। এর পরের ক'টা দিন ইউনিতে দিয়ে বেড়ালাম বন্ধুদের।

শুনতে খুব ক্লিশেইড শোনায়, কিন্তু ওই উপহার দেয়াটা সত্যিই আমার ঈদ ভীষণ স্বার্থক করেছিল। মুসলিম, অমুসলিম, সব কাছের বন্ধুদের দিয়েছিলাম। স্টেফিনি আমার নামই দিয়ে ফেললো স্যান্টা ক্লজ। সুদানিজ খ্রীষ্টান বন্ধু আলার কথা শুনে খারাপ লাগছিল। নিজ দেশে প্রচুর মুসলিম বন্ধু, খ্রীষ্টান হওয়া সত্ত্বেও ঈদটা তাই ওর নিজেস্ব উৎসবও হয়ে গিয়েছে।

ছোটবেলার ঈদগুলোর কথা বলার সময় চোখ চক চক করছিল, খাবার, নতুন জামাকাপড়, মানুষের উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। আমার ছোট্ট উপহারটুকু এতগুলো সুখ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে ভেবে ভালো লাগছিল খুব। রিটিকা, ভারতের আলীগড়ের মেয়ে। আলীগড়ে বেশির ভাগ বন্ধুরাই ছিল মুসলিম। সেই পিচকি কাল থেকে মুসলিম বন্ধুদের সাথে সাথে রমজানে উপোস দিত।

ঈদের আনন্দে আনন্দিত হতো। নিজের খুব সীমিত ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম ঈদটা সবার জন্য আনন্দময় করতে। দিনটার কল্যান এত বেশি, সেন্ট্রাল স্টেশনের টানেলে দাঁড়িয়ে যেই অন্ধ মেয়েটা গান গাচ্ছিল, ও, ওর মত অনেক মানুষ এই কল্যানটুকু টের পাচ্ছে না ভেবে মন খারাপ হচ্ছিল। নিজের ক্ষমতায় যতটুকু কুলোয়, এর বাইরের কথা ভেবে মাথা কুটলে মাথাটাই আস্ত থাকবে না, এই ভেবে ক্ষান্ত দিলাম। আর "ঈদ" করলাম।

(ঈদের দিন নিয়েই তো লিখি নি! লিখবো নে, পরের পর্বে)।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.