যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
এই পোস্টটি সারওয়ার চৌধুরীর এইপোস্টের প্রতিক্রিয়া, অথবা ভিন্নমত হিসেবে দেখতে পারেন। তাঁর পোস্টে মন্তব্য আকারেও দেয়া যেত, তবে টপিকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আর এবিষয়ে একান্তই আমার নিজের কিছু বিশ্লেষণ আছে বলে আলাদা পোস্ট আকারে দিচ্ছি।
প্রথমেই সমস্যাটা তুলে ধরার জন্য সারওয়ার চৌধুরিকে ধন্যবাদ জানাই।
********************************************
প্রশ্নটা যদিও ছিলো জামাত-বিরোধিতায় আমাদের দেশে ত্রুটি কোথায় আর এবিরোধিতায় ব্যার্থতার কারণ কি, তবুও আমার আলোচনাটা মূলত ব্যার্থতার কারণ নিয়েই থাকবে, এবং সেই কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে আমরা দেখতে পাব যে 'ত্রুটি' না বরং একরকম 'অসহায়তা' সিস্টেমটার মধ্যে বিরাজ করছে।
প্রথমেই সারওয়ার চৌধুরীর দেয়া কারণগুলো নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করতে চাই।
[১]
তিনি তাঁর দেয়া ক.,খ. আর গ. কারণগুলোতে দেশের জামাতবিরোধী জনগনকে দুটো ভাগে ভাগ করেছেন,
১. ধর্মবিশ্বাসী এবং ২. ধর্মবিশ্বাসী নন,
এবং তিনি বলতে চেয়েছেন যে এই ধর্মবিশ্বাসী নন এদের প্রভাবে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা ভেবে বসে যে জামাত-বিরোধীতা মানে ধর্মবিরোধিতা। মেনে নিচ্ছি ব্যাপারটা বাস্তবে আছে, কিন্তু কোন মেকানিজমে?
আমার কথা হলো ১.এর ধর্মবিশ্বাসী অংশটার প্রভাব কি পড়েনা?
ধর্মে অবিশ্বাসী কেউ যদি ভাত খায়, তাহলে কি দেশের ধর্মপ্রাণ জনগন ভাত খাওয়া ছেড়ে দেবে? ধর্মে অবিশ্বাসী কেউ যদি যুক্তিসংগত কাজ করে, তাহলে কি দেশের ধর্মপ্রাণ জনগন সেটাকে অযৌক্তিক বলবে? ধর্মে অবিশ্বাসী কেউ যদি জামাতের বিরোধিতা করে, তাহলে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা কি সেটাকে খারাপ ভাববে? ভাবার কথা না, কারণ দুটো ব্যাপার পুরো আলাদা, প্যারালাল! একটুও কোয়েনসাইড করেনা। তাহলে কেন?
কারণটা বরং উল্টো। কারণটা হলো 'জামাতের বিরোধিতা মানে ধর্মের বিরোধিতা' এরকম একটা মিথ্যাকে জামাতীরা সমাজের অনেক স্তরেই দাঁড় করিয়ে ফেলেছে।
ক. কিভাবে তারা এটা দাঁড় করাতে পেরেছে বা এখনও পারছে?
খ. কোথায় তারা এই শক্তি(লোকবল/অর্থবল) পেল?
এই প্রশ্নদুটোর অনুসন্ধান করলেই বোঝা যাবে কেন জামাতের বিরোধিতা ব্যার্থ হচ্ছে, বা সেভাবে বেগবান হচ্ছেনা।
[২]
সারওয়ার চৌধুরী আরো বলেছেন যারা ধর্মবিশ্বাসী ও একইসাথে জামাতবিরোধী তারা ধর্মবিরোধীদের (বা অবিশ্বাসী) সাথে বিভিন্ন আন্দোলনে থাকেন, যেটা দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে সেসব 'ধর্মবিশ্বাসী জামাতবিরোধী'দেরকে প্রশ্নযুক্ত করে ফেলে।
এই পয়েন্টটা রিডানড্যান্ট। কারণ, ধর্মে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীর আন্দোলনের পয়েন্ট বা ইস্যু একই হলে সেখানে তারা একসাথে আন্দোলন করবেই। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধই তো তার বড় উদাহরণ। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা এত বোকা না যে তারা এটা দেখেই সেই 'ধর্মবিশ্বাসী জামাতবিরোধী'দেরকে ভুল বুঝবে, ঘৃনা করবে।
বরং এখানেও চালটা জামাতই চালে। জামাতবিরোধী ধার্মিকরা যে ধার্মিকনা এটা প্রমাণের জন্য যা তা অপবাদ ছড়ায়, সাধারণ মানুষের ব্রেইন-ওয়াশ করে; ব্যক্তিজীবনে প্রচন্ড ধার্মিক অনেক ব্যক্তিত্বই এই জামাতী প্রচারণার ফাঁদে জাতীয়ভাবে অধার্মিক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন।
প্রশ্ন হলো সেই আগের দুটোই,
ক. কিভাবে তারা এটা দাঁড় করাতে পেরেছে বা এখনও পারছে?
খ. কোথায় তারা এই শক্তি(লোকবল/অর্থবল) পেল?
[৩]
সত্যি কথা বলতে কি, সারওয়ার চৌধুরী তার ঘ. আর ঙ. তে পরোক্ষভাবে এই সমস্যাটাই তুলে ধরেছেন, যেগুলো হলো যথাক্রমে, জামাতী অপপ্রচার আর জামাতকে কেন্দ্র করে আমাদের রাজনৈতিক মেরুকরণ।
বাংলাদেশ থেকে যখন জামাত উচ্ছেদ হবে (আমি আশবাদী আর ১৫/২০ বছরের মধ্যেই এটা হবে) তখন এদেশে জামাতের ইতিহাস বর্ণনায় এই দুটো টার্ম খুভ গুরুত্বপূর্ণ থাকবে,
১. জামাতী অপপ্রচার আর ২. জামাতকে কেন্দ্র করে আমাদের রাজনৈতিক মেরুকরণ।
জামাতী অপপ্রচার নিয়ে আগেই [১] আর [২] এ দুটো প্রশ্ন তুলেছি (ক. আর খ.), এবং
জামাতকে কেন্দ্র করে আমাদের রাজনৈতিক মেরুকরণ টার্মটাকে লক্ষ্য করেও একই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া যেতে পারে যে, কিভাবে জামাত এত শক্তিশালী হলো?
[৪]
স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপর জামাত ছিল পরাজিত শক্তি, তাদের নেতারা সবছিল ফেরারী আসামীর মতো, অধিকাংশ বিগফিসরাই ছিল দেশের বাইরে।
সেইদলের চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবার কথা। কোন অস্তিত্বই থাকার কথা না। সেইদল আজ সারাদেশে প্রায় ৫% ভোট দখল করে আছে।
এটা কিভাবে হলো?
স্বাধীনতার কয়েকবছরের মাথায় শাহ আজিজ এই দেশের প্রধানমন্ত্রী কিভাবে হলো?
মান্নানের মতো বড় রাজাকার কিভাবে এদেশের মন্ত্রী হলো?
আবদুর রহমান বিশ্বাস কিভাবে এদেশের প্রেসিডেন্ট হলো?
ফয়জুল হক কিভাবে মন্ত্রী হলো?
তারপর তো আগের কাবিলদের পথ ধরে স্বয়ং জামাতই এদেশের ক্ষমতার অংশীদার হয়ে গেল?
কিভাবে হলো?
অনেক বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।
তার আগেই যে প্রশ্নটা এসে যায় তা হলো,
১. ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সেই গণআদালত আন্দোলন ছাড়া এদেশে কি আর কোন সংঘবদ্ধ জামাতবিরোধী আন্দোলন হয়েছে?
২. জামাতের বিরোধিতার জন্য এদেশের কোন সংগঠন কি রাস্ট্রের কাছ থেকে কোন সহায়তা কখনও পেয়েছে?
জামাত-বিরোধিতার ত্রুটি যারা খুঁজে বেড়ান, তারা কেন এই অসহায় সত্যগুলোকে আগে দেখছেননা?
[৫]
এখানে আমি আমার নিজের বিশ্লেষণে যে কারণগুলো খুঁজে পেয়েছি জামাত-বিরোধিতায় ব্যার্থতার জন্য সেগুলো সামারাইজ করে রাখব।
পরে কখনও সময় পেলে বিস্তারিত লিখব।
১. (সবচেয়ে বড় কারণ, অনেকটাই ফিলসফিকাল)
আমরা এখনও আমাদের জমিদারপূজারী মনোভাব ছাড়তে পারিনি, সম্ভ্রান্ত বা নেতা পরিবারের ছেলে যতই রাজাকারি করুক, ভোটটা আমরা তাকেই দিয়ে আসি।
২. (জিয়া উপরের ১. এর সুবিধা নিয়েছিলেন)
জিয়াউর রহমানের বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধানোর ঘটনা
৩. রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতালোভ
৩(ক). বি.এন.পি'র এ্যান্টি আওয়ামী ভোটব্যাংকের এক্সপ্লয়টেশন
৩(খ). জামাতপ্রশ্নে আওয়ামীলীগের ধোঁয়াটে/সুবিধাবাদী অবস্থান
৪. বিদেশী মোড়ল, বিশেষ করে, ও.আই.সি'র মাতুব্বরী
৫. জামাতবিরোধীশিবিরে নেতৃত্বের অভাব (এটা সম্ভবতঃ সারওয়ার চৌধুরী ফোকাস করেছেন কিছুটা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।