আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুরআনের অত্যাশ্চর্য প্রভাব ও প্রাথমিক কুরআনিক প্রজন্ম - ৩

কল্যাণের কথা বলি, কল্যাণের পথে চলি।

============ "Amazing Impact of the Qur'an and Earlier Qur'anic Generation" আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার "কুরআন ও সুন্নাহ্‌ স্টাডিজ" বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বন্ধুবর ডঃ নূর মুহাম্মদ ওসমানীর লিখা। ২০০৫ সালে রমজ়ান উপলক্ষে আমাদের প্রকাশিত ম্যাগাজিনের জন্য দিয়েছিলেন তিনি। আমি লিখাটি অনুবাদ করে ছাপিয়েছিলাম সে সময়। রমজ়ান কুরআনের মাস - কুরআন বেশী করে অধ্যয়ন ও বুঝা এবং আমল করার মাস।

আশা করি লিখাটি এক্ষেত্রে সহায়ক হবে কুরআন থেকে হিদায়াত গ্রহন করতে আগ্রহী সবার জন্য এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুরআন অধ্যয়নকারীদের জন্যও। ========== ১ম পর্ব ২য় পর্ব তাবেয়ীন ও অন্যান্যদের উপর কুরআনের বিস্ময়কর প্রভাব ইতিহাস প্রমাণ করে যে কুরআন শুধুমাত্র যারা রসূলুল্লাহ্‌র (সঃ) সমকালীন লোক তাদের উপরই নয় বরং তাবেয়ীন থেকে শুরু করে আজকের দিন পর্যন্ত মানুষের জীবনের উপর অলৌকিক প্রভাব বিস্তার করে আছে। একটি আয়াতের ভক্তিপূর্ণ তিলাওয়াত অনেকের জীবনে পরিবর্তন আনার অন্য যথেষ্ঠ ছিল। কুরআন থেকে হিদায়াত পাওয়ার জন্য একজনের যা দরকার তা হলো একটি পরিষ্কার মন এবং কুরআনের আলোকে নিজের চরিত্রকে সংশোধনের জন্য তৈরী থাকা। এরকম কিছু ঘটনা সাইয়্যারা ডাইজেস্টের কুরআন সম্পর্কিত বিশেষ সংখ্যায় (এপ্রিল ১৯৭০) প্রকাশিত হয়েছে, যা কিছু সংক্ষেপে নীচে তুলে ধরা হলো।

ইমাম হাসান বিন আলী (রাঃ) একবার মক্কার কিছু সম্মানিত লোককে দাওয়াত দেন। এক দাসী মেহমানদের খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত ছিলো। সে হঠাত্‌ পিছলে গেলে ইমামের সারা গায়ে তরকারী ও ঝোল পড়ে ভরে যায়। ইমাম অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তার দিকে তাকান। ভয়ে তার কম্পন শুরু হয়ে যায়।

কিন্তু সে ছিল অত্যন্ত জ্ঞানবতী। আর সে সূরা আলে-ইমরানের ১৩৪ নং আয়াত তিলাওয়াত করল যাতে মহত্‌ লোকদের গুনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে - “যারা তাদের রাগ দমন করে। ” সাথে সাথে ইমাম হাসানের রাগ প্রশমিত হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, “আমি আমার রাগ দমন করেছি। ” সে আরো পড়ল, “এবং তারা মানুষের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেয়। ” ইমাম বললেন, “আমি ইতোমধ্যেই তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।

” সে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়ল, “আর আল্লাহ্‌ সত্‌কর্মশীলদের ভালবাসেন। ” ইমাম বললেন, “আমি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য তোমাকে মুক্ত করে দিলাম। ” ফুদায়ল ইবন আয়াদ (ফুজ়াইল ইবন আয়াজ়) (রঃ) তাঁর জীবনের জাহিলী অংশে ডাকাতি ও সন্ত্রাসের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। তিনি ডাকাতি বা হত্যার পূর্বেই তাঁর দ্বারা নিগৃহীত ব্যক্তিদের অবহিত করতেন। লোকেরা তাঁর ব্যাপারে মারাত্মক শংকার মাঝে থাকতো।

একবার কোন এক আক্রমনের প্রস্তুতিকালে তিনি সুমিষ্ট কণ্ঠে কারো তিলাওয়াত শুনতে পান। এটা তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তিনি শুনতে থাকেন যতক্ষণ তিলাওয়াতকারী নীচের আয়াত পড়লেনঃ “সে সময় কি ঈমানদারদের জন্য এখনো আসেনি যে তাদের হৃদয়গুলো বিনয় ও নম্রতার সাথে আল্লাহ্‌র স্মরণের দিকে ধাবিত হবে...?” [কুরআন, ৫৭/১৬] এ আয়াত ফুদায়লের হৃদয়ে অলৌকিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এটা তাঁর হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে এবং তিনি সাথে সাথে আল্লাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তন করেন এই বলে, “ও আল্লাহ্‌, আমি হাজির তোমার দিকে প্রত্যাবর্তনের জন্য। দয়া করে আমার তওবা কবূল করো। ” তিনি তওবা করে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসেন এবং বাকী জীবন আল্লাহ্‌র রাস্তায় আত্মনিয়োগ করেন।

আজ তি্নি ইসলামী দুনিয়ায় আল্লাহ্‌র রাস্তায় নিবেদিত প্রাণ এক উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন আলেম ও জ়াহিদ হিসেবে পরিচিত। উমাইয়্যা শাসক সুলায়মান ইবন আব্দুল মালিক হজ্জ শেষে একবার মদীনা সফর করেন। তিনি সেখানে প্রখ্যাত আলিম ও আল্লাহ্‌ নিবেদিত প্রাণ আবিদ আবূ হাজ়িমের (রঃ) সাথে সাক্ষাত্‌ করেন। সুলায়মান আবূ হাজ়িমকে জিজ্ঞেস করেন, “বিচারের দিন আল্লাহ্‌ মানুষের সাথে কিভাবে সাক্ষাত্‌ করবেন?” আবূ হাজ়িম জবাবে বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি পূণ্যময় জীবন যাপন করে তবে সে আল্লাহ্‌র কাছে ঐ ব্যক্তির মতো প্রত্যাবর্তন করবে যে দীর্ঘদিন বিদেশ সফর শেষে অনেক উপহার সামগ্রী নিয়ে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে আসে। তার পরিজন তার ফিরে আসায় যারপরনাই খূশী হন।

পক্ষান্তরে সে যদি গুনাহ ও সীমালংঘনকারী হিসেবে জীবন-যাপন করে তবে তার অবস্থা হবে কোন মনিবের ঐ গোলামের ন্যায় যে চুরি করে পালিয়ে গিয়েছে। মনিব তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অস্মমানিত করে ধরে আনার জন্য লোক পাঠান। অবশেষে সে ধরা পড়ে, তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং তাকে সে অবস্থায়ই তার মনিবের সামনে উপস্থিত করা হয়। তার অপদস্থ ও ভীতিকর অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ” সুলায়মান তখন অশ্রুসজল চোখে বললেন, “আমি কিভাবে জানবো যে আমি প্রথমোক্ত বা শেষোক্ত দলের অন্তর্ভূক্ত?” আবূ হাজ়িম (রঃ) বললেন, “এটা খুবই সহজ” এবং কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ “নিঃসন্দেহে সত্যপন্থী লোকেরা সুখে শান্তিতে থাকবে এবং পাপপন্থী লোকেরা জাহান্নামে যাবে” [ইনফিতার, ১৩-১৪]।

“এখন আপনি নিজেই আপনার কাজের বিচার করতে পারেন, সেটা কি সত্যপন্থীদের না পাপপন্থীদের?” সুলায়মান জিজ্ঞেস করলেন, “একজন লোকের শেষ পরিণতি কি তার কাজের উপর নির্ভরশীল? তাহলে আল্লাহ্‌র রহমতের ব্যাপারটা কি?” আবূ হাজ়িম (রঃ) বললেন, “এটাও কুরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছেঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র রহমত সত্‌কর্মশীলদের সাথেই আছে। ” সুলায়মান কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং আল্লাহ্‌র ভয় ও কুরআনের মহত্বের কথা ভেবে আর কোন কথা বলতে পারেননি। চলবে... ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।