আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্য গল্প - স্বপ্নে টুইন টাওয়ার

হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!

ব্যাপারটা ঘটেছিল স্কুলে - ২০০১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল বেলা৷ শুনতে অদ্ভূত মনে হলেও সত্য যে, লিবিয়ার সিরত শহরে অবস্থিত সিরত বাংলাদেশী স্কুল নামক আমাদের এই স্কুলটির ক্লাস শুরু হয় বিকেল চারটায় আর শেষ হয় রাত আটটায়৷ সেদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময়, অর্থাৎ থার্ড পিরিয়ডে আমাদের ইংলিশ সেকেন্ড পেপার ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও ইংলিশের টিচার না আসাতে তা হল না৷ আর এই সুযোগটার সদ্ব্যাবহার করার জন্যই আমরা শুরু করলাম হরেক রকম গল্প-গুজব৷ গল্পের রাজা সবুজ গতকাল কি যেন একটা খুব দারুণ স্বপ্ন দেখেছিল, সেটাই খুব রস-কষ মাখিয়ে বর্ণনা করছিল৷ কিন্তু তার স্বপ্নে কেউ খুব একটা আগ্রহ বোধ করছে না বুঝতে পেরে শেষমেষ চোখেমুখে একটা দার্শনিক-সুলভ ভাব এনে বলল, ‘আচ্ছা, তোরা কেউ খেয়াল করেছিস কি না জানি না, আমরা যে স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্ন জিনিসটা কিন্তু খুবই আশ্চর্যজনক একটা ব্যাপার৷’ ‘কি রকম?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি৷ ‘এই যেমন, তোদের হয় কি না জানি না, কিন্তু আমার প্রায় সময়ই এরকম হয় যে, স্বপ্নে দেখছি কেউ আমাকে ডাকছে, জেগে দেখি সত্যি সত্যিই আম্মু ঘুম থেকে জাগানোর জন্য ডাকাডাকি করছে৷’ বলল সবুজ৷ ‘হয় না মানে?’ সবুজের কথা শেষ হতে না হতেই জবাব দিল পলাশ৷ ‘সেদিন আমি স্বপ্নে দেখছিলাম আমি ফুটবল খেলছি৷ খেলতে খেলতে যেই না গোল দেওয়ার জন্য শরীরের সর্বশক্তি একত্রিত করে বলে লাথি দিতে গিয়েছি, ঠিক সেই সময় ঘুমটা গেল ভেঙ্গে৷ জেগে দেখি, ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটা ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে আর ব্যাথাও করছে প্রচন্ড৷ ব্যাপার কি? শেষে বুঝলাম, ঘুমের মধ্যে বল মনে করে আমি আসলে দেওয়ালে লাথি মেরে দিয়েছিলাম!’ পলাশেরর কথা শেষ হওয়ার আগেই আমরা সবাই হাসতে শুরু করেছি৷ হাসি থামার আগেই মুখ খুলল কাস জোকার সাঈফ৷ দেখলে বোঝা যায় না, কিন্তু বোকা বোকা ভাব করে এমন রসিকতা করতে পারে যে, হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরে যায়৷ আজও খুব গম্ভীর মুখে কথা শুরু করল, ‘ধূর, এগুলো তো কমন স্বপ্ন৷ সবাই-ই দেখে৷ শুধু বিষয়বস্তু একটু এই দিক সেই দিক আর কি৷ এই যেমন সেদিন আমি দেখলাম, আমি ভাত খাচ্ছি৷ জেগে দেখি সত্যি সত্যিই ভাত খাচ্ছি৷’ কথাটার মর্ম প্রথমে আমরা বুঝতেই পারলাম না৷ পাঁচ-সাত সেকন্ড পর, যখন কথাটার গুরুত্ব বুঝতে পারলাম, ক্লাসের পুরো বারো জন ছাত্র-ছাত্রী এমন অট্টহাসি ছাড়লাম, যে মনে হল কাছাকাছি কোথাও হাটম বোমা (হাসির অ্যাটম বোমা) বিস্ফোরিত হয়েছে৷ একমাত্র সাঈফের মুখেই কোন হাসি নেই৷ সে গম্ভীর মুখেই আমাদের বলছে, ‘কিরে, হাসছিস কেন এত? খারাপ কিছু বললাম?’ আমাদের অবশ্য তখন ওর কথার উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থা নেই৷ হাসছি তো হাসছিই৷ হাসির মাত্রা একটু কমে আসতেই কেউ না কেউ কথাটা রিপিট করে আর সাথে সাথে নতুন করে আবার হাসি শুরু হয়৷ শেষ পর্যন্ত আমি সামলে নিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা, এ ব্যাপারটা তো দেখা গেল সবারই হয়৷ কিন্তু তোদের কারো কি এরকম হয় যে, কোন কিছু স্বপ্নে দেখলে পরে সেটা সত্যি সত্যিই ঘটে?’ ‘মানে?’ সবুজের কথা শুনে মনে হলো, এরকম কথা ওর দাদার জন্মেও কেউ শোনে নি৷ ‘মানে, আমি বলতে চাইছি, স্বপ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যত সম্পর্কে একটা হালকা ধারণা পাওয়ার কথা৷’ ব্যাখ্যা করলাম আমি৷ ‘একেবারেই অবাস্তব’ চিন্তা-ভাবনা না করেই রায় দিয়ে দিল পলাশ৷ ‘অবৈজ্ঞানিক!’ মন্তব্য করল ক্লাস সায়েন্টিস্ট রাজু৷ হালিমাও সাথে সুর মেলালো, ‘গাঁজাখুঁরি’৷ আমি হতাশ চোখে ক্লাসের বাকি সবার দিকে তাকালাম৷ কিন্তু আমার বক্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে আসার মতো উৎসাহী কাউকে খুঁজে পেলাম না৷ ‘আশ্চর্য!’ মনে মনে বললাম আমি৷ ‘আফ্রিকা মহাদেশের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশটিতেও বিজ্ঞান এত দ্রুত মানুষের মনে নিজের স্থান দখল করে নিচ্ছে!’ বিজ্ঞানমনস্ক হওয়াটা অবশ্য আনন্দেরই ব্যাপার৷ কিন্তু এই সত্য ব্যাপারটাও এরা যেভাবে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে মানতে চাচ্ছে না, সেটা তো রীতিমতো ভয়ঙ্কর ব্যাপার! বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের জীবন অকল্পনীয়৷ কিন্তু তাই বলে কি বিজ্ঞানের সব কিছুই অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে? বিজ্ঞানের কি ভুল হতে পারে না? আমাদের ক্লাসের সবাই-ই কি কট্টর বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে গেছে? আমার আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলল তুলি, ‘আমি কিন্তু বেশ কয়েকজনের কাছে শুনেছি যে, তাদের এরকম হয়৷ মানে, অনেক সময় তারা যা স্বপ্নে দেখে, পরে বাস্তবে সেটার কিছু কিছু অংশ মিলে যায়৷ কিন্তু আমার কখনো এরকম হয় নি৷ আর ব্যাপারটা আমার ঠিক বিশ্বাসও হয় না৷ আর তা ছাড়া, আমার মনে হয়, বিজ্ঞানও এটা সমর্থন করে না৷’ ‘এতে বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে?’ গলার স্বরে বেশ একটু বিরক্তিই প্রকাশ পেল আমার৷ পৃথিবীতে যত কিছু ঘটে, তার সব কিছুর ব্যাখ্যা কি বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন? পারেন না৷ কিন্তু তাই বলে সেটা অবিশ্বাস করতে হবে কেন?’ রাজু এবার সামনে এগিয়ে এসে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোর নিজের কখনো এরকম হয়েছে?’ ‘হয়েছে৷ কিন্তু বলে লাভ কি? তোরা কি বিশ্বাস করবি?’ উত্তর দিলাম আমি৷ ‘সেটা পরে দেখা যাবে৷’ বলল হালিমা, ‘আগে তুই বল৷’ ‘গত রোযার মাসের ঘটনা৷’ বলতে শুরু করলাম আমি, ‘রোযার মাঝামাঝি দিকের এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম, আব্বু-আম্মু আমাকে রেখে সেহেরী খেয়ে ফেলছে৷ ওদিকে সেহেরীর সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ কাজেই আমি তাড়াতাড়ি উঠে কোন মতে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম৷ আর সাথে সাথেই ফযরের আযান শোনা গেল৷ এমন সময় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল৷ জেগে দেখি, আব্বু-আম্মু এখনও ঘুমোচ্ছে, কিন্তু সেহেরীর সময় ঠিকই শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ এক গ্লাস পানি ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার সময় নেই৷ এবং সত্যি সত্যিই আমি শুধু এক গ্লাস পানি খেয়ে যখন ভাবছিলাম চট করে চারটা ভাত খেয়ে নিব কি না, এমন সময় শুনলাম ফযরের আযান শুরু হয়ে গেছে৷’ ‘এই ঘটনার কোন প্রমাণ আছে তোর কাছে?’ জিজ্ঞেস করল রাজু৷ ‘মানে? এটার আবার প্রমাণ কি?’ রেগে গেলাম আমি৷ ‘আমি কি সেটা ওয়েব ক্যাম দিয়ে পিসিতে রেকর্ড করে রেখেছি?’ ‘না, সেটা না’ আমতা আমতা করে বলল রাজু, ‘মানে, আমরা বুঝব কি করে যে, তুই আসলেই সত্য কথা বলছিস কি না? এমনও তো হতে পারে, নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি জোরালো করার জন্য তুই স্বপ্নটা এখন বানিয়ে বানিয়ে বলে দিয়েছিস৷ হতেই তো পারে৷ তাই না?’ আমি ক্লাসের সবার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোদেরও কি মনে হয় যে আমি মিথ্যা কথা বলেছি?’ কেউ আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না৷ আমি আবার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় রাজু নিজেই বলল, ‘না, সেটা মনে করছি না৷ তবে তুই যে সত্য কথা বলছিস, সেটারও তো কোন প্রমাণ নেই৷’ ‘কি রকম প্রমাণ হতে পারে এটার?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি৷ ‘তার আগে তুই বল তোর কি এরকম এই একবারই হয়েছে, না আরও হয়েছে?’ ‘আরও বেশ কয়েকবার হয়েছিল৷ আর তাছাড়া আমার একা এরকম হয় না৷ আমি আরও অনেক কাউকেই চিনি, যাদের এরকম হয়৷ কিন্তু তোরা বিশ্বাস না করলে কি আর করা?’ ‘ঠিক আছে, তোর যেহেতু প্রায়ই এরকম হয় ...’ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল রাজু৷ কিন্তু শুধরে দিলাম আমি, ‘প্রায়ই নয়, মাঝেমাঝে৷’ ‘ঠিক আছে, তোর যেহেতু মাঝেমাঝেই এরকম হয়, কাজেই এখন থেকে তুই কোন স্বপ্ন দেখলে স্কুলে এসে সেটা আমাদেরকে বলবি৷ তারপরে সেটা যদি সত্যি সত্যিই ঘটে, তাহলে সেটা তখন দেখা যাবে৷ আর যদি আমাদের সামনেই ঘটে যায়, তাহলে তো কোন কথাই নেই৷’ ‘ঠিক বলেছিস৷ এটাই সবচেয়ে ভালো হবে৷’ রাজুর সমর্থনে সারা ক্লাসে একটা গুঞ্জন উঠল৷ ‘তার মানে এখন থেকে স্কুলে এসে তোদের কাছে আমার স্বপ্নের হাজিরা দিতে হবে?’ হতাশ কন্ঠে বললাম আমি৷ ‘তোরা বিশ্বাস না করলে না কর, কিন্তু আমি ওভাবে স্বপ্নের হাজিরা দিতে পারব না৷’ কথাগুলো বলে একরকম অপমানিত মনোভাব নিয়েই আমি তখন নিজের বেঞ্চে ফিরে গিয়েছিলাম৷ আর ঠিক তখনই পরবর্তী ক্লাসের ঘন্টা পড়ে যাওয়ায় ব্যাপারটা নিয়ে আর আলোচানা করার সুযোগ হয় নি৷ তাই সেদিন রাতে ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজেই নিজের সাথে আলোচনা করছিলাম কি করা যেতে পারে৷ আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়? এখন থেকে যে স্বপ্নই দেখব, সেটা একটা খাতায় লিখে স্কুলে নিয়ে রাজুকে দেখাব৷ এভাবে এক বছর পর হয়তো দেখা যাবে, আমার কাছে স্বপ্নের বিশাল একটা সংগ্রহ গড়ে উঠেছে৷ পরে চান্স পেলে সেটা দিয়ে ‘আমার স্বপ্ন’ নাম দিয়ে একটা বইও ছাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু যত স্বপ্ন দেখব, তার সবগুলো কি খাতায় লেখা যাবে? কোনদিন কিরকম স্বপ্ন দেখব, সেটার কি কোন ঠিক-ঠিকানা আছে? শেষে দেখা যাবে, ক্লাসের সবাই আমাকে পাগল হিসেবে গণ্য করছে৷ দরকার নেই বাবা স্বপ্ন লেখার! আপাতত ঘুমিয়ে পড়াই ভালো৷ কাল সকালে এ নিয়ে চিন্তা করা যাবে - এরকম একটা মনোভাব নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম৷ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কি না, বলতে পারব না৷ হঠাৎ করেই মনে হল গরমটা যেন বেড়ে গেছে৷ কি মনে করে উঠে পড়লাম৷ ছাদের রেলিংয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ এখনও ভোর হয় নি; তবে পূর্ব আকাশে লালচে আভা দেখা যাচ্ছে৷ কই এখনতো আর গরম মনে হচ্ছে না? বরং ভোররাতের হালকা শীতল হাওয়ার পরশ আমার শরীরে এসে লাগছে৷ অবাক হলাম আমি৷ এতক্ষণ তাহলে গরম লাগছিল কেন? ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরতে যাব, এমন সময় একটা শব্দ কানে এল৷ শব্দের উৎস লক্ষ করে তাকিয়ে দেখলাম একটা প্লেন উড়ে আসছে এদিকে৷ শব্দটা আসছে সেই প্লেন থেকেই৷ কিন্তু এ কি? প্লেনটা নিচের দিকে নামছে কেন? হায় আলাহ্, প্লেনটা দেখি আমাদের বিল্ডিংটা লক্ষ করেই এগিয়ে আসছে! ব্যাপার কি, আমাদের বিল্ডিংটা ধ্বংস করাই কি ওটার লক্ষ? পাইলটটা কি আত্মঘাতী? ভয়ে-আতঙ্কে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল৷ ইচ্ছে করলে এখনও ছুটে পালানো যায়৷ কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমি দৌড়াতে পারছি না৷ যতই দৌড়াতে চাচ্ছি, ততই যেন আমার পা ঘরের মেঝের সাথে আটকে যাচ্ছে৷ মনে হচ্ছে, এটা কোন এক হিন্দি ফিল্মের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেটা স্লো মোশানে দেখানো হচ্ছে৷ দৌড়াতে গিয়ে আমি একবার পড়ে গেলাম৷ আর ঠিক তখনই প্লেনটা আমাদের বিল্ডিংয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত হানল৷ প্রচন্ড আঘাতে আমি ছিটকে পড়ে গেলাম৷ ঠিক এই সময় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল৷ জেগে দেখি, বিল্ডিং থেকে নয়, ঘুমের ঘোরে অপরিসর বিছানাটা থেকে গড়িয়ে পড়ে গেছি৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটা বাজে৷ বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম, এত কিছু থাকতে এরকম অদ্ভূত একটা স্বপ্ন কেন দেখতে গেলাম৷ চিন্তা করতে করতেই এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম৷ পরদিন বিকেলে স্কুলে গিয়েই দেখি সবাই ক্লাস স্যাটেলাইট সবুজের চারপাশে জটলা পাকাচ্ছে৷ বুঝলাম, গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা ঘটেছে৷ কারণ, সবুজ প্রতিদিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুটা বাংলা এবং একটা ইংরেজি দৈনিক পড়ে৷ এছাড়া, ও বিবিসির খবরও নিয়মিত শোনে৷ বিশ্বের যাবতীয় খবর ওর চেয়ে বেশি স্কুলের কেউই জানে না৷ দেশে বা দেশের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা ঘটলে সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা তো বটেই, স্যাররাও সবুজের কাছে ছুটে আসে৷ আমাকে ক্লাসে ঢুকতে দেখেই রাজু, সবুজ, পলাশ, সাঈফ, তুলি এবং হালিমা আমার দিকে দৌড়ে আসল৷ তুলি জিজ্ঞেস করল, ‘খবর শুনেছিস?’ ‘কিসের খবর?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি৷ ‘হোয়াইট হাউজ ধ্বংস হয়ে গেছে’ উত্তর দিল হালিমা৷ ‘হোয়াইট হাউজ না গাধী, পেন্টাগণ আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’ শুধরে দিল সাঈফ৷ ‘বলিস কি, কিভাবে?’ জানতে চাইলাম আমি৷ ততক্ষণে সবুজও এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে৷ সে ব্যাখ্যা করা শুরু করল, ‘বিমান হামলায়৷ স্কুলে আসার একটু আগে ইয়াহু নিউজে পড়লাম যে কিছুক্ষণ আগেই চারটা প্লেন কিছু সময় পরপর পেন্টাগণ এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উপর আত্মঘাতী হামলা করেছে .....’ সবুজ সম্ভবত আরও কিছু বলছিল৷ কিন্তু আমার কানে আর কিছু ঢুকছিল না৷ আমি তখন ভাবছিলাম গতকাল রাতের সেই অদ্ভূত স্বপ্নটার কথা৷ স্বপ্নের মাধ্যমে যে অনেক সময় ভবিষ্যত ঘটনা সম্পর্কে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এর চেয়ে বড় প্রমাণ সেটার আর কি হতে পারে? রাজুর দিকে তাকালাম আমি৷ কিছু একটা বলতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিলাম৷ বলে আর কি লাভ হবে? আমার কাছে কি কোন প্রমাণ আছে? *** গল্পটা আসলে রহস্য গল্প কি না, আমি নিশ্চিত নই। তবে এটা হোমভিউ বাংলাদেশ এর সাহিত্য বিভাগে "রহস্য গল্প" সাব-ক্যাটাগরিতে "অতি-বৈজ্ঞানিক স্বপ্ন" শিরোণামে প্রকাশিত হয়েছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।