আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয়বাংলা

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

অমিয়ভূষণ মজুমদারের একটা বিখ্যাত গল্প সাইমিয়া ক্যাসিয়া (ক্যাসিয়া সাইমিয়া)। গল্পটার মূল কাহিনি তিব্বতী এক দম্পতি পেমা ও থেনডুপকে নিয়ে। গল্পের শেষে পেমা থেনডুপের এলাকায় চীনা সৈন্যরা আক্রমণ করে। তারা ওই আক্রমণের মধ্য দিয়ে অধিকৃত তীব্বতে সমাজতন্ত্রের বাণী বহন করে নিয়ে আসে।

যাই হোক গল্পটা অনেক আগে পড়া বলে মোটামুটি ভুলে গিয়েছি। সম্প্রতি কোনো লেখক বন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলছিলেন, অমিয়ভূষণের ইনটেনশনটা উনি বুঝতে পারছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী সেটা? বললেন, কোনো পবিত্র বাণী যদি আক্রমণকারীর মুখ দিয়ে প্রচারিত হয় তবে আক্রমণের কথা মনে রেখেও সেটা পবিত্র বাণী। আমি বললাম, অমিয়ভূষণ মজুমদার এই ধরনের সিদ্ধান্ত টানতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না। আমি আবার গল্পটা পড়বো।

যে কোনো কারণেই হোক গল্পটা আর পড়া হয়নি। আমি তাকে তখন যুক্তি দিয়েছিলাম, ইরাকে আমেরিকান সৈন্যরা যদি সত্যিকার গণতন্ত্রের বাণী নিয়ে এবং তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইরাক দখল করতো তবে কি ইরাকের মানুষ তাকে পবিত্র জ্ঞান করতো? জয়বাংলা প্রসঙ্গে আবার কথাগুলো মনে পড়লো। আসলে কথাগুলো আগেই মনে ছিল। ব্লগের সাম্প্রতিক আলোচনার সুবাদে জয়বাংলার কথা নতুন করে মনে পড়লো। বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম দিকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মধ্যে এটা অন্যতম।

তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিন বাজার মুভমেন্ট চলছে। ওই মুভমেন্টের সুবাদে ঢাকা-আরিচা সড়কে ছাত্রনেতা-নেত্রীদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হচ্ছে। সড়ক বন্ধ। দাবি, ক্যাম্পাসের বাস ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী আমদু হাজিদের বিচার করতে হবে। কিন্তু খুব বিস্ময়করভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকার আমদু হাজিকেই বাঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলো।

সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনও আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেল। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরের ১৪- থেকে ১৬ তারিখের ঘটনা। সম্ভবত ১৫ অথবা ১৬ তারিখ রাতে রাস্তা অবরোধের অপরাধে ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশনসহ আন্দোলনকারীদের রুমে রুমে গভীর রাতে হামলা চালালো ছাত্রলীগ। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। আগে পরে বহুবার তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

কিন্তু আমার আওয়ামী চিন্তা বলয়ে থাকার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এটা ছিল নতুন ঘটনা। আমি গ্রামে বা মফস্বল শহরের কলেজ-স্কুলে বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ দেখে এসেছি বলে তাদেরকে প্রগতিশীল বলে বরাবরই ভুল করেছি। ফলে তারা যে, মাস্তানি করতে গিয়ে হামলা করতে পারে এইটা আমার কাছে নতুন ঘটনা। পরদিন সকালে যখন শুনলাম ভাস্করদা, সায়েম, ফারুক ওয়াসিফ সহ অনেকে মার খেয়ে শয্যাশায়ী তখন তাদের দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু মনে ভীষণ ভয়।

ক্লাশ শুরু হয়নি। ক্যাম্পাসে থাকছি প্রায় মাস দুয়েক। তারপরও ভয়ে ভয়ে দুপুরের পর মওলানা ভাসানী হলের দিকে রওয়ানা হলাম। ভাস্করদাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন? উনি প্রচণ্ড মনোবলঅলা মানুষ। ছাত্রফ্রন্টের বড় নেতা।

একটা নতুন ছেলে হিসেবে আমার মনোবল ভাঙতে চাইলেন না হয়তো। বললেন, কিছু হয়নি। মাইর দিল। এই যা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কী বলে মারলো? কী অপরাধ আপনাদের? ভাস্করদা বললেন, প্রথমে আইসা দরজা ধাক্কাইল।

দরজা খুললাম। ওদের তো কোনো কথা নাই। বললো জয়বাংলা বল। বললো জয় বাংলা বল। আমরা বললাম না।

তারপর রড দিয়ে আমাকে আর সায়েমকে মারলো। এ ঘটনা শোনার পর আমি আর জয়বাংলা উচ্চারণ করিনি। বহুবার ছাত্রলীগের ছেলেরা মিছিলে ধরে নিয়ে যেতে এসেছে। পালিয়ে থেকেছি। স্পর্ধা দেখিয়ে বলেছি যাবো না।

বহুবার দেখেছি ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সময় তারা ছাত্রদের ওপর, শিক্ষকদের ওপর জয়বাংলা বলে আক্রমণ করেছে। বুঝতে পেরেছি, যা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের রণধ্বনি কালের পরিক্রমায় তা কিভাবে গুণ্ডাদের বিজয়ধ্বনিতে পরিণত হয়েছে। শব্দের ব্যবহারিক অর্থ কেমন করে চেঞ্জ হয় তা আমি প্রথম দফার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছিলাম। এজন্য ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের ধন্যবাদ জানাতেই হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.