আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন এবং কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিভ্রান্তি

যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ নিয়ে দেখি কারো কারো মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। এবং এই বিভ্রান্তির অনেকটাই ঘিরে আছে তিনি ভাষনের শেষে "জয় বাংলা" এর সাথে "জয় পাকিস্তান" বলেছিলেন কিনা। কিছু পুরনো ব্লগ পড়তে গিয়ে দেখলাম এই ব্লগে এটা নিয়েও অনেক মাতামাতি হয়েছে। আমি এই ধরনের সস্তা যুক্তি আর তা নিয়ে মাতামাতি করা নিয়ে মাঝে মাঝে অবাক হই যে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনা কোন পর্যায়ে পৌছেছে। আমি যদিও আওয়ামী লীগ করিনা তারপরও একজন সচেতন বাংলাদেশী হিসাবে মনে করি এই বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া উচিত।

এবং সেজন্যই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ এই দেশটির নাম ছিল পূর্ব-পাকিস্তান আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই দেশটির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মত নির্বাচনের ফল পৃথিবীর অন্য কোন দেশে হয়েছে বলে আমার জানা নাই। এতটা নিরংকুশ ম্যান্ডেট অন্য কোন দেশের জনগণ তাদের নেতাকে প্রদান করে নাই। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছেন।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা থেকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনী মেনিফেস্টো সর্বত্র এই ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এখানে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধু কোন গেরিলা নেতা ছিলেন না যে তিনি কথায় কথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিবেন এবং আত্মগোপনে যেয়ে অনুকুল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার আগেই যুদ্ধ শুরু করে পুরো পরিস্থিতি গুলিয়ে ফেলবেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন রাজনৈতিক নেতা যার হঠাত করেই কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার মত বোকামী করার সুযোগ ছিলনা। তার মেসেজটা ছিল পরিস্কার পশ্চিম পাকিস্তান সরকারকে বৈষম্য দূর করতে হবে এবং সকল ক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুতার এই মেসেজটা থেকে কখনো সরে আসেননি।

১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান বাসী ম্যান্ডেট দিয়েছিল দেশ শাসন করার। আর বঙ্গবন্ধু জানতেন তিনি তার ম্যান্ডেট অনুযায়ী অ-বিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে তখনকার বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা সবচেয়ে সহজ হবে। তাই তিনি শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত শেষ চেষ্টা করেছেন এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুকে যে ম্যান্ডেট দিয়েছে সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু এটি পরিস্কার ছিল যে এই দাবী অর্জিত না হলে স্বাধীনতার ডাক দেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প খোলা থাকবেনা। ৭ই মার্চের ভাষনে তিনি তার এই মেসেজটিই দেশবাসী এবং পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের কাছে তুলে ধরেছেন।

দেশবাসীকে জানিয়েছেন তাদের দেয়া ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যদি আওয়ামী লীগকে দেশ শাসনের সুযোগ দেয়া না হয় তাহলে আরো বড় সংগ্রাম "মুক্তির সংগ্রামের" জন্য তাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রস্তত থাকতে হবে। এর মাধ্যমে তত্কালীন শাসকগোষ্ঠীর কাছেও একই মেসেজ পৌছানো হল। আমাদের অধিকার দাও অথবা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তত থাকো। এখন তিনি ভাষনের শেষে "জয় বাংলা" র সাথে "জয় পাকিস্তান" বলেছেন কিনা এটি একটি হাস্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা। ভাষনটি ছিল একটি মেসেজ এবং যদি ভাষনের শেষে তিনি কি বললেন তা কোন ভাবেই মুল মেসেজটাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেনা।

তিনি "জয় পাকিস্তান" বলেছেন এমন কোন সন্দেহাতীত প্রমাণ নেই। আর যদি তিনি বলেও থাকেন তাহলে আমি বলব তিনি একজন দক্ষ কূটনীতিকের মত কাজ করেছেন। তিনি তার মেসেজটা পরিস্কারভাবে দেয়ার পরও পাকিস্তানের তত্কালীন শাসকগোষ্ঠীকে কোন সুযোগ দিতে চাননি যাতে কোন ধূঁয়া তুলে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা যেটি আমাদের প্রাপ‌্য ছিল সেটি দিতে নতুন কোন ষড়যন্ত্র পাতার। এখন যদি কেউ বলেন তাহলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি শাসন ক্ষমতা চেয়েছিলেন তাহলে তাকে বলব যে তত্কালীন নেতৃত্বের দূরদর্শীতা তিনি বুঝতে পারেন নি। স্বাধীনতা সংগ্রাম অবধারিত ছিল।

১২০০ মাইল ব্যবধানে থেকে একটি দেশের দুটি অংশ একসাথে চলতে পারে না যেখানে পদে পদে বৈষম্য আর বিভেদ ছিল। সেই সময় বঙ্গবন্ধু যদি শাসন ক্ষমতায় যেতে পারতেন ইতিহাস হয়ত একটু ভিন্নভাবে লেখা হত। তিনি শাসন ক্ষমতায় থেকে এ দেশ থেকে লুটে নিয়ে যাওয়া সম্পদের কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারতেন। অবহেলিত পূর্ব-পাকিস্তানে সমউন্নয়নের কিছু পদক্ষেপ নিতে পারতেন। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম অবধারিত ছিল আর সেটি পশ্চম পাকিস্তানের রাজনৈতিকদের মনোভাবেই পরিস্কার ছিল।

যেট পূর্বেই বলেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়ত ১৯৭১ এ না হয়ে আরো ২-৩ বছর পরে হতো। আমরা হয়ত ১৯৭১ এ যে দেশ পেয়েছি তার চেয়ে একটু সমৃদ্ধ দেশ পেতাম। কিন্তু যা হয়নি সেটা নিয়ে চিন্তা করার কোন সুযোগ নাই। কেন তিনি ভাষণে "জয় বাংলা" বলার সাথে সাথে "জয় পাকিস্তান" (যদি বলে থাকেন) বললেন সেটি বোঝার যাদের ক্ষমতা নেই, সেটি হয় তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনাকে প্রকাশ করে অথবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস না জানার প্রমান দেয়।

আর যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সরাসরি বিরোধীতা করেছিলেন তাদের উদ্দ্যেশ্যে আমার কিছু বলার নাই। এটি সাধারণ বাংলাদেশীদের বিভ্রান্তি নিরসনের উদ্দেশ্য লেখা। যে কোন যুক্তিপূর্ণ মন্তব্যকে স্বাগত: জানাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.