আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি বাংলাদেশেই থাকব

মাহবুব মজুমদারের সঙ্গে যখন পদার্থবিজ্ঞান বা গণিতের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, মনে হয় আমি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক উঁচু মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলছি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনি। এটা মোটেও অতিশয়োক্তি নয়। যে কেউ তাঁর সঙ্গে দুই মিনিট কথা বললে অন্য রকম এক অনুভূতিতে সিক্ত হবেন। বিশ্বমানের মেধা নিয়ে তিনি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলছেন।

বছর দুয়েক আগে সৌদি আরব থেকে চিঠি আসে মাহবুব মজুমদারের কাছে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় সৌদি দলকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ওরা মাহবুবকে চায়। মাহবুব তাদের চিঠির উত্তরে লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশেই থাকব। ’ মাহবুব মজুমদার বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড টিমের কোচ (প্রশিক্ষক)। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের গণিত দলকে পারদর্শী করে তোলার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

বলা যায়, তাঁরই চেষ্টায় খুব দ্রুত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ ও রৌপ্যপদক পায়। অন্যান্য দেশের অন্তত আট-দশ বছর লাগে। কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশগ্রহণ করার পর মাত্র দুই বছরেই অনারেবল মেনশন ও চার বছরের মাথায় ব্রোঞ্জপদক পায়। গত বছর পেয়েছে দুটি ব্রোঞ্জ ও একটি রৌপ্যপদক। নিশ্চয়ই এ জন্য তরুণ গণিতবিদ ধনঞ্জয় বিশ্বাস, নাজিয়া চৌধুরী, সামিন রিয়াসাত, তারিক আদনান, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, সৌরভ দাসদের মেধা ও কৃতিত্ব প্রশংসাযোগ্য।

কিন্তু মাহবুব মজুমদারের বিশেষ প্রশিক্ষণ না থাকলে হয়তো তাঁদের আন্তর্জাতিক মানের মেধা অনাবিষ্কৃতই থেকে যেত। এখন তো যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের পদকপ্রাপ্তদের বৃত্তি দিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি করে নিয়ে যায়। মাহবুব মজুমদার যুক্তরাষ্ট্রে মা-বাবার সঙ্গে থেকে বড় হয়েছেন। জন্ম ১৯৭১ সালে, ঢাকায়। মা তাজিমা মজুমদার, বাবা বদিউল আলম মজুমদার।

হাইস্কুলে পড়ার সময় মাহবুব দু-দুবার যুক্তরাষ্ট্রের সেরা শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরব লাভ করেন। রচনা লেখা আর বিজ্ঞান প্রকল্পের প্রতিযোগিতায় তাঁর কৃতিত্বের মেডেল তিনি পান খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হাত থেকে। বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি থেকে স্নাতক, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এমএস) এবং যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। তাঁর বিষয় ছিল ফলিত গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা। এর পর লন্ডনে ইম্পিরিয়াল কলেজে তিনি পোস্ট ডক্টরাল করেন।

দেশে ফিরে আসেন ২০০৫ সালের শুরুতে। দেশে ফিরে এলেন কেন? ‘আমি সব সময় ভাবতাম, দেশে থাকব, এখানেই কাজ করে যাব। বাবা-মা দেশে ফিরে এসেছেন। তাই আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ’ দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনার জন্য আবেদন করেন।

কোনো এক দুর্বোধ্য কারণে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগ পেলেন না। কিন্তু মাহবুব অদম্য। কাজ করে চলেছেন। এখন তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ফিন্যান্সিয়াল ম্যাথমেটিকসে শিক্ষকতা করছেন। তিনি নিজ উদ্যোগেই গণিত উৎসব ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ দল গঠনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা দেশ থেকে নির্বাচিত সেরা তরুণ গণিতবিদদের তিনি প্রশিক্ষণ দেন। তাঁদের তৈরি করে নেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য। মাহবুবকে জিজ্ঞেস করি, তিনি তরুণদের নিয়ে কাজ করছেন, তাঁর উৎসাহের উৎস কী? বলেন, ‘আমাদের দেশের তরুণদের মধ্যে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। এদের প্রতিভা আছে। সুযোগ পেলে বিকশিত হবে।

’ যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও উন্নত মানের একটা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে গড়ার স্বপ্ন দেখেন মাহবুব মজুমদার। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে মেধার অভাব নেই। কার্যকর উদ্যোগ নিলে এটা খুবই সম্ভব। মাহবুব মজুমদার বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে কোচ হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ জন্য তিনি এক পয়সাও সম্মানী নেন না।

এটা তাঁর সাধনা। আমিই বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য যোগাযোগ: কপিপেষ্টঃ Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.