প্রীতিসত্যে অবগাহন করিয়া ফিরিতেছে অন্তর
ব্যভিচারের দায়ে ইরানি নারী সকিনাহ মোহাম্মাদি আশতিয়ানিকে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন আদালত। তবে এই নির্মম সাজার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কঠোর সমালোচনা হয়। এরপর পাথর ছুড়ে মারার পরিবর্তে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আশতিয়ানি তাঁর স্বামীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। এই অপরাধে তাঁকে পাথর মেরে হত্যা করা হতে পারে।
সম্প্রতি গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশতিয়ানি বলেন, ‘তারা (কর্তৃপক্ষ) মিথ্যাচার করছে। আমার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনা হওয়ায় তারা অস্বস্তিতে পড়েছে। এখন তারা চেষ্টা করছে, সবার নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে এবং গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করতে, যাতে তারা আমাকে গোপনে হত্যা করতে পারে। ’
ইরানের বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোছাদেঘ কাহনিমৌ গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের জাতিগত বৈষম্য বিলোপবিষয়ক কমিটিকে বলেন, ‘দুজনের সঙ্গে ব্যভিচার ছাড়াও ওই নারী (মোহাম্মাদি আশতিয়ানি) তাঁর স্বামীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ’
আশতিয়ানি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ব্যভিচারের অভিযোগে আমাকে সাজা দেওয়া হলেও হত্যার অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
তবে যে ব্যক্তি আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তিনি এখন কারাবন্দী, কিন্তু তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। ’ আশতিয়ানির ছেলে ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়ার কারণে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।
আশতিয়ানি বলেন, ‘উত্তর খুব সহজ, কারণ আমি একজন নারী। তারা ভাবে, এ দেশে তারা নারীদের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই করতে পারে, তাদের কাছে হত্যার চেয়ে ব্যভিচার বড় অপরাধ, ব্যভিচার করলে একজন পুরুষের কারাদণ্ড না-ও হতে পারে, কিন্তু একজন নারীকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়। ’
আশতিয়ানি আরও বলেন, আদালত যখন তাঁকে পাথর মেরে হত্যার রায় দিয়েছিলেন, তখন তিনি রায় বুঝতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘বিচারক পাথর মেরে আমাকে হত্যার রায় দিলেও আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। কেননা, আমি জানতাম না “রাজাম” মানে কী। তাঁরা আমাকে রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করতে বলে, আমি স্বাক্ষর করি। এরপর আমাকে কারাগারে নিয়ে আসা হলে কারাকক্ষের অন্যরা আমাকে জানায়, আমাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। এ কথা শোনামাত্রই আমি মূর্ছা গিয়েছিলাম।
’
আশতিয়ানি আশঙ্কা করছেন, তাঁর প্রধান আইনজীবী দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ায় তিনি আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়েছেন।
আশতিয়ানির আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফাই তাঁকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনিই আশতিয়ানির বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ইরানি কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। চলে গেছেন তুরস্কে।
মোস্তফাইয়ের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কোনো অভিযোগ ছাড়াই। তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছে তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে।
আশতিয়ানি বলেন, তাবরিজ কারাগারে তাঁর ওপর প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতন করছেন কারারক্ষীরা। তিনি বলেন, ‘তাঁদের কথাবার্তা, তাঁরা যেভাবে আমার দিকে তাকায়, তা সহ্য করা যায় না। এর মাধ্যমে আমাকে যেন প্রতিদিনই পাথর মেরে হত্যা করা হচ্ছে।
’
সব শেষে আশতিয়ানির প্রার্থনা, ‘তাঁরা যেন ছেলের সামনে আমাকে পাথর না মারে। ’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।