কল্যাণের কথা বলি, কল্যাণের পথে চলি।
"Amazing Impact of the Qur'an and Earlier Qur'anic Generation" আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার "কুরআন ও সুন্নাহ্ স্টাডিজ" বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বন্ধুবর ডঃ নূর মুহাম্মদ ওসমানীর লিখা। ২০০৫ সালে রমজ়ান উপলক্ষে আমাদের প্রকাশিত ম্যাগাজিনের জন্য দিয়েছিলেন তিনি। আমি লিখাটি অনুবাদ করে ছাপিয়েছিলাম সে সময়। রমজ়ান কুরআনের মাস - কুরআন বেশী করে অধ্যয়ন ও বুঝা এবং আমল করার মাস।
আশা করি লিখাটি এক্ষেত্রে সহায়ক হবে কুরআন থেকে হিদায়াত গ্রহন করতে আগ্রহী সবার জন্য এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুরআন অধ্যয়নকারীদের জন্যও।
===============
কুরআন ও রসূলুল্লাহ্র (সঃ) তিলাওয়াত
কুরায়শদের সাহিত্য বিশারদ উত্বাহ বিন রবী‘আহ সব কুরাইয়শদের পক্ষ থেকে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) এর কাছে আসল। তারা চাচ্ছিল মুহাম্মদের (সঃ) দা‘ওয়াতের কারণে যে “সমস্যার” সৃষ্টি হয়েছে তার একটা ফলপ্রসূ সমাধান। আল্লাহ্র রসূল (সঃ) তখন ছিলেন কাবার পাশে। উত্বাহ তাঁকে নরম অথচ প্রত্যয়দীপ্ত ভঙ্গিতে বুঝানোর চাষ্টা করছিল।
সে তাঁকে ধন-সম্পদ, সুন্দরী স্ত্রী এবং দুনিয়ার সেরা চিকিত্সক দিয়ে চিকিত্সা করানোর কথা বলছিল, যদি তা তাঁর প্রয়োজন হয়। তার বক্তব্যের জবাবে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) কুরআনের সূরা হা-মীম আস-সাজদা [ফুসসিলাত] থেকে তিলাওয়াত করলেন। আর যখন তিনি সূরার ৩৮ নং আয়াতে পৌঁছুলেন তখন সিজদা করলেন। উত্বাহ কুরআনের বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে পড়ল। সে মনোযোগ সহকারে রসূলুল্লাহ্র (সঃ) তিলাওয়াত শুনল।
কুরআনের বাণী ও রসূলুল্লাহ্র তিলাওয়াত তার হৃদয়কে গভীর ভাবে নাড়া দিল। সে যখন কুরায়শদের সমাবেশে ফিরল তখন তার চেহরা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। সে গভীর প্রত্যয় নিয়ে গিয়েছিল মুহাম্মদের (সঃ) কাছে তাঁকে বুঝানোর জন্য যাতে তিনি কুরআনের বাণী প্রচার বন্ধ করে দেন। কিন্তু উলটো কুরআন শুনে সে নিজেই হয়ে গিয়েছিল ভিন্ন মানুষ।
কুরায়শরা উত্বাহ্র এই পরিবর্তন লক্ষ্য করল এবং বলল, “আল্লাহ্র কসম, এতো এক ভিন্ন মানুষ।
” তারা বলল, “হে আবূ আল-ওয়ালীদ [ওয়ালীদের পিতা - উত্বাহ্র কুনিয়া]! ব্যাপার কি?”
উত্বাহ বলল, “কসম আল্লাহ্র, আমি এমন এক মহিমান্বিত কালাম শুনে এসেছি যা না কবিতা, না যাদু, আর না গণকের কথা। দয়া করে আমার কথা শুনো ও মানো। তোমরা মুহাম্মদকে (সঃ) তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও এবং তার দা‘ওয়াত মুক্তভাবে দিতে দাও। কারণ একদিন তার দা‘ওয়াত প্রোজ্জল হয়ে উঠবে। অন্যদের সাথে সংঘর্ষে যদি সে পরাজিত হয় তাহলে তোমরা নিজের ভাইয়ের রক্তে হাত রক্তাক্ত করা থেকে বেঁচে গেলে।
আর সে যদি বিজয়ী হয় তাহলে তো তার রাজত্ব ও সম্মান তোমাদেরই সম্মান। ”
তারা বলল, “আল্লাহ্র কসম, মুহাম্মদ (সঃ) তোমাকে যাদু করেছে আর তার যাদুতে তুমি পরাভূত হয়েছ। ”
উত্বাহ বলল, “এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। তোমাদের যা ইচ্ছে করো। ” (সীরাত ইবন হিশাম, ১/২৯৩-২৯৪)
এটা কুরআনের অনন্য সাধারণ প্রভাবের একটি সাধারণ উদাহরণ, যা শুধু মুসলমানদের নয় মুশরিকদেরও প্রভাবিত করেছিল।
উত্বাহ মুসলিম ছিলনা। সে পরবর্তীতেও ইসলাম কবূল করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেনি। সে মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের প্রথম বড় সংঘর্ষ বদরে নিহত হয়। শুধু সে-ই নয়, কুরায়শদের আরেক সম্মানিত নেতা ওয়ালীদ ইবন মুগীরাও [খালিদ ইবন ওয়ালীদের (রাঃ) পিতা] একই ধরণের ধারণা রাখত। সেও উচ্চকিত কন্ঠে কুরআনের উন্নত সাহিত্যিক ভঙ্গির প্রশংসা করেছে।
কুরায়শদের তিন প্রধান নেতা ও ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আবূ-জাহল, আবূ-সুফিয়ান এবং আখনাস ইবন শুরায়ক নিজেদেরকে সামলাতে পারেনি কুরআনের সম্মোহনী বাণী শোনা থেকে বিরত থাকতে। তারাতো রসূলুল্লাহ্র (সঃ) এর তাহাজ্জুদে পড়া সুললিত কন্ঠের কুরআন শোনার জন্য নিজেরাই “শববেদারী/কিয়ামুল্লাইল” করে ফেলত। তারা রসূলুল্লাহ্র (সঃ) এর বাড়ীর বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর কুরআন তিলাওয়াত শুনত। [রাউদুল আনফ, ২/৮২-৮৩ এবং ইবন হিশাম ১/৩১৫-৩১৬]
তাদের এই কাজ কুরআনের বাণী গ্রহন করার জন্য ছিলনা, বরং তারা একাজ করত কুরআনের সাহিত্যিক ও শৈল্পিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্য। আর তারা জনগণের নেতা হওয়ার কারণে দিনের বেলা সর্বসধারণের সামনে এটা করতে পারতোনা।
কুরআনের অন্তর্গত শৈল্পিক সৌন্দর্যের দিকে তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আরব হওয়ার কারণে তারা সহজে কুরআন বুঝতে পারতো এবং এর সাহিত্যিক ও ভাষাগত মাধুর্য উপভোগ করতে পারতো।
(চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।