আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্নীতির প্রতীক দুদক

মোমিন মেহেদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)’র একের পর এক উদ্যোগের সূত্র ধরে রাজনীতিতে তরুণমুখ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। দুর্নীতির রাস্তায় অবাধ বিচরণের অপরাধে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের আবেদন মঞ্জুর করেছেন ঢাকা ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. মোজাম্মেল হক। আইনের কথা বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল অর্থপাচার মামলায় ইন্টারপোলের সহায়তায় তারেককে গ্রেফতারের জন্য ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এ আবেদন করেন সম্প্রতি। আর সেই আবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচার মামলার দুই আসামির মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন বর্তমান কারাগারে আটক আছেন। আর তারেক রহমান শুরু থেকে পলাতক।

যেখানে নতুন প্রজন্ম গড়ার কথা তারেক রহমানের। সেখানে নিজেই দূর্নীতির আখড়া খুলে বসেছিলেন বলে বিভিন্ন মহলে যে আলোচনার ঝড় উঠেছে, সে ঝড়ে বিএনপি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক আগামী। হয়তো একারনেই এই দেশের রাজনীতিতে তারেক নিষিদ্ধ হতে চলেছেন। ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ প্রবাদটি কেবলমাত্র খালেদার সন্তান তারেক বা কোকোর কথা উঠলেই বলা হচ্ছে ইদানিং। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম খুব ভালো করেই জানে যে, তারেক- কোকো যেমন ময়লার এপিঠ; তেমন ওপিঠ হলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয়।

তার দূর্নীতির খবর এখন ক্ষমতায় থাকায় বের না হলেও ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়লেই মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় তুলবে। যার শুরুটা তারেককে দিয়ে হলেও শেষটা হবে জয়কে দিয়েই বলে আমি মনে করি। তাছাড়া দূর্নীতির রাস্তায় অনেক দূর এগিয়েছে জয়, বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতিমধ্যেই লেখালেখি হয়েছে। নিজের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে হাজারো দূর্নীতির গন্ধ থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বিরোধী দলীয় নেত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে দূদক লাগিয়ে দিয়েছে। হয়তো একারনেই শুনানিকালে দুদকের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।

দেশে থাকা তারেক রহমানের আত্মীয়-স্বজনও বিষয়টি অবগত বলে আমাদের ধারণা। তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ও মালামাল জব্দের পরোয়ানা জারি হয়েছিল। আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তা এড়িয়ে গেছেন। আদালত শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন।

অন্যদিকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানকে গ্রেফতারের আবেদন ও আদালত তা মঞ্জুর করেছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন দুদকের আইনজীবী। আর এরমাত্র কয়েকদিন আগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন আইনপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তাহলে বিষয়টা কি দাড়ালো? এই দাড়ালো যে, সরকারের উদ্যোগের কারনে অথবা আদেশের কারনে নিতান্তই অপারগ হয়ে আজ তারেকের বিরুদ্ধে নেমেছে দুদক। কিন্তু আমাদের রাজনীতিকগণ মনে করেন, ক্ষমতায় আসলে আর না নামাই স্বাভাবিক। একটা সময় আসবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্ম তাদের অধিকার আদায় করে নেবে।

আর তখনই তারা রাজনীতির নামে অরাজকতা তৈরিকারী-দুর্নীতিবাজ খালেদা-হাসিনা এবং তাদের সন্তান-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার বাস্তবায়ন করবে। কথায় কথায় পুতুলের মত দুদকের ব্যবহার নয়; দুুদক হবে স্বাধীন; দুদক কারো কথায় তখন কোন নেতাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেবে না। দুদক চলবে নিজস্ব গতিতে। সেই ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনতে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিকগণ তৈরি হচ্ছেন। তৈরি হচ্ছে আমাদের সুন্দর আগামী।

সেই আগামীতে তারেক- কোকো বা জয় নয়; আমরা রাজনীতি সচেতন সৎ- যোগ্য- নীতিবান নেতৃত্ব তৈরি করবো বাংলাদেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্য থেকে। এখন যেমন দুদক অন্ধকারে হাতড়ে ফেরে রাজনৈতিক অপরাধীদেরকে। তেমন করে আর কোন উদ্যোগ যেন নিতে না পারে; সেভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আগামী নির্মাণ করতে হবে। আমরা বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি দেখতে দেখতে এতটাই ক্লান্ত যে, এই বর্তমান থেকে পরিত্রাণ পেতে তৈরি হচ্ছি স্ব স্ব স্থান থেকে। কেননা, পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার ডায়েরি সংগ্রহ ও মোহাম্মদ ইসমাইলের জবানবন্দি নিতে কানাডায় সফররত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত টিম কি কাজ করছেন সে বিষয়ে কিছুই জানেন না প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ তিন নির্বাহী।

তাদের রাখা হয়েছে একেবারে অন্ধকারে। দুদকের প্যানেল আইনজীবী আনিসুল হক ও পদ্মা সেতুর পরামর্শক সংস্থা নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম সম্প্রতি কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা লাভালিনের অফিস সরেজমিন পরিদর্শনে যান বলে স্থানীয় একটি বাংলা পত্রিকার সূত্রে জানা গেছে। সাপ্তাহিক ওই পত্রিকা পরে আর কোন খবর দিতে পারেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের চাটুকারীতার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ও অপর দুই কমিশনারও গত সাতদিনে কোন খবর পাননি তাদের পাঠানো টিমের কাছ থেকে।

যদিও বলা হচ্ছে, তারা আশা করছিলেন কানাডা পৌঁছে দুই সদস্যের টিম তাদের অন্তত একটা অগ্রবর্তী খবর দেবে। কিন্তু রহস্যময় কারণে কোন খবর তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। কি কারণে তারা দুদক নির্বাহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না তাও অজানা। গণমাধ্যমের খবর থেকে জেনেছি, একদিকে যেমন তারেক রহমানকে ধরতে মরিয়া দুদক; অন্যদিকে পদ্মাসেতু দুর্নীতির সাথে জড়িতদেরকে পাড় পাইয়ে দিতে তৈরি দুদকের চেয়ারম্যানসহ প্রায় সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যে কারনে নতুন নতুন সমস্যার তৈরি হচ্ছে, জন্ম হচ্ছে নতুন নতুন ঘটনাও।

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো কথা, ২৯ মে বুধবার কানাডার একটি আদালতে এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তা রমেশ সাহা ও মোহাম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচারকার্যক্রম শুরু হবে। এর আগে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হবে কিনা সে বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার মতো উপাদান আছে মর্মে ওই দেশের এটর্নি জেনারেল দফতর থেকে বলা হয়। এ কারণে মামলাটি বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে বদলি করা হয়। দুদকের একজন আইনজীবীসহ দুই সদস্যের যে টিম কানাডায় রয়েছে তারা রয়েল কানাডিয়ান পুলিশের কাছ থেকে কিছু বের করতে পারছেন কিনা বা ২৯ মে পর্যন্ত অবস্থান করবেন কিনা কিছুই জানাননি।

ফলে বাংলাদেশে বসে দুদকের নির্বাহীদের পক্ষেও কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, অনুমানের ওপর কিছু বলতে পারছি না। আসলে ওরা কতদিন থাকবেন, কখন আসবেন তাও বলতে পারছি না। পদ্মা সেতুর পরামর্শক সংস্থা নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। লিখিতভাবে দুদকের কাছে পাঠানো হয় ওই অভিযোগ।

তাতে কানাডিয়ান কারিগরি প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে কার্যাদেশ পাইয়ে দিতে মূল কাজের টেন পার্সেন্ট ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়। প্রথমে অভিযোগ আনা হয় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, জাতীয় সংসদের হুইপ নূরে আলম সিদ্দিকীর ভাই মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কিন্তু সম্প্রতি কানাডিয়ান একটি টেলিভিশন নতুন করে আরেকটি বিষয় যুক্ত করে সংবাদ প্রচার করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী পরিবার পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বিদেশী গণমাধ্যমে এই খবর প্রচারের পর দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলÑ নতুন এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা তদন্ত করবে কি না।

তিনি এই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি। এর অর্থ কিন্তু ফকফকা। মানে নিজেদের বেলা ষোল আনা আওয়ামী লীগ। আর অন্যের বেলা এক আনাও না। কেননা, এরা কেউ-ই দেশ-মানুষ-মাটির জন্য নিবেদিত থেকে রাজনীতি করে না।

রাজনীতি তাদের কাছে আখের গোছানোর মেশিন। যে যখন ক্ষমতায় আসে জেকে বসে জোঁকের মত। যে কারনে বিএনপি-আওয়ামী লীগের বাইরে রাজনৈতিক দল খুঁজতে হবে জনতাকে। বেছে নিতে প্রকৃত তরুণ নেতৃত্ব। যারা ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে থেকে করে যাচ্ছে দেশ ও মানুষের রাজনীতি।

যারা প্রতিনিয়ত দুর্নীতি নয়; সততা- মেধা এবং যোগ্যতাকে পূঁজি করে এগিয়ে চলেছে নিরন্তর। যদি জনতা এমন নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনার বদলে আবারো ফিরে যায় খালেদা বা হাসিনায়; তাহলে যেই লাউ- সেই কদুতেই পরিণত হবে বাংলাদেশ। অতএব, বরাবরের মত তরুণ প্রজন্মের রাজনীতি সচেতন নতুন দিনের মাঝি হিসেবে বলবো, বাংলাদেশকে বাঁচাতে তৈরি হোন; মন-ধন এবং সময়ের সবটুকু দিয়ে হলেও। তা না হলে আপনি ভালো থাকতে পারবেন না, দেশ ভালো থাকবে না, দেশের মাটি ভালো থাকবে না। দুর্নীতিগ্রস্থ হবে বাংলাদেশ।

আর সেই দুর্নীতিগ্রস্থ বাংলাদেশকে কাজে লাগিয়ে আঙুল ফুলে কলা গাছে পরিনত হবে গোলাম রহমানের মত অসংখ্য দুদক চেয়ারম্যান-পরিচালক ও কর্মকর্তাগণ। তাই বলি, আগে থেকে সাবধান হোন- তৈরি হোন… মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি) Website: http://www.mominmahadi.com  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।