আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্প্রতি দেখা ছবির কাহিনী

একজন আমি, একজন হারিয়ে যাওয়া এবং একজন দূর প্রবাসী

শেষ পর্যন্ত যখন ইন্টারনেট কানেকশনও বন্ধ করে দেয় তখন কি করে সময় পার করবো তাই চিন্তা করছিলাম। তখন মনে পড়ল কয়েকদিন আগে “babel” এর ডিভিডি কিনেছিলাম। তাই রাত পৌনে একটার সময় ঐটাই দেখতে বসে গেলাম। এখন নিজের দৃষ্টিভংগিতে ছবিটির ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরছি। “babel” এর থিম লাইন হল, “ যতই মনে করা হোক না কেন একজনের সাথে বহুদূরের আরেকজনের জীবনের কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু আস কোনো না কোনো সম্পর্ক থেকেই যায়” এ মোট ৪টি পরিবার থাকে।

তারা একেকজন পৃথিবীর একেকটি দেশের অধিবাসী। ছবিটির মূল কাহিনী আমেরিকার বসবাসকারী একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে ব্যাপ্তি লাভ করলেও বাকি তিনটা পরিবারের ভূমিকাও কম নয়। বাকি তিনটি পরিবার যথাক্রমে মরক্কো, মেক্সিকো আর জাপান এ থাকে। ছবির শুরুতে দেখা যায়, দুটি ছেলেকে তার বাবা একটি রাইফেল দেয় যাতে তারা সেই রাইফেল দিয়ে শেয়াল শিকার করতে পারে। কিন্তু ছোটদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা সে বুঝতে পারেনি।

এরপরে ছেলে দুইটি রাইফেল এর নিশানা পরীক্ষা করতে গিয়ে একটি বাস লক্ষ্য করে গুলি করে। আমেরিকান পরিবারের লোকটি তার বৌ-কে নিয়ে মেক্সিকোতে ঘুরতে আসে। বৌ-এর সাথে তার মনোমালিন্য চলছিল বোধহয়। তারা দুজন বাস করে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে একটি গুলি এসে বৌটির গায়ে লাগে।

ধারে কাছে কোনো হাসপাতাল না থাকায় বাসের কন্ডাকটার তাদের নিজের বাসায় নিয়ে যায়। এই ঘটনাকে বরাবরের মত আমেরিকা সন্ত্রাসী হামলায় পরিনত করতে চেয়েছিল। কিন্তু মরক্কো সরকার তাদের এই অপবাদ মাথা পেতে নিতে চায়নি। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। ফলে আমেরিকান এম্বাসি চেয়েও কিছু করতে পারছিল না।

আমেরিকান লোকটার পরিবার-এ একটি ছোট ছেলে আর একটি ছোট মেয়ে ছিল। তাদের দেখা শোনা করতো এক মেক্সিকান মহিলা। ঐ মহিলা তার ভাইয়ের বিয়েতে যাবে। কিন্তু কেউই বাচ্চা দুটিকে রাখার জন্য রাজি হয় না। তাই সে তাদেরকে নিজের সাথে মেক্সিকোতে নিয়ে যায়।

জাপানি পরিবারে শুধু বাবা আর মেয়ে থাকে। মেয়েটি বোবা এবং কানেও শুনতে পারে না। তার মা একবছর আগে মারা যায়। কিন্তু পুলিশ আজও তাদেরকে সন্দেহ করে। মেয়েটির শারিরীক অসুবিধার জন্য কেউ তার সাথে কথা বলে না।

তাই তার মন সব সময় খারাপ থাকে। সে কিন্তু তার বাবা কে অনেক ভালবাসো। এদিকে আহত মহিলাটির অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। তাদের সাথে থাকা লোকগুলো বিচলিত হয়ে পড়ে। কারন তারা যে এলাকায় থেমেছে, তা একটি মুসলিম এলাকা।

তারা যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে চলে যেতে চাচ্ছিল। কিন্তু ছবির নায়কের জন্য তারা সাহস পাচ্ছিল না। সেই মরক্কোর ছেলে দুটি গুলি করার পর থেকে ভয়ে ভয়ে ছিল। পরে যখন তাদের বাবা বলে যে ঐ মহিলা মারা গেছে তখন তারা আরও ভয় পেয়ে যায়। পরের দিন তারা বন্ধুক লুকিয়ে ফেলে।

কিন্তু ফেরত আসার সময় রাস্তায় তাদের সাথে পুলিশের দেখা হয়। ছোট ছেলেটি যে নাকি গুলি করেছিল সে পুলিশকে ভুল পথ দেখিয়ে দেয়। তারপর তারা বাসায় চলে আসে। কিন্তু বড় ছেলেটি তাদের বাবাকে সব বলে দেয়। এটা শুনে বাবা তাদের নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে।

যেই লোকটি প্রথম দৃশ্যে তাদের কাছে রাইফেলটি বিক্রি করেছিল, তার বৌ এইবার পুলিশের সাথে যায় তাদের সনাক্ত করতে। মাঝপথে সে দেখতে পায় পলায়নরত বাবা আর দুই ছেলেকে। পুলিশ গাড়ি থেকে বের হয়ে তখন তাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তারা প্রথমে লুকালেও বড় ছেলেটি পালাতে গিয়ে পায়ে গুলির আঘাত পায়। তখন ছোট ছেলেটি রেগে বন্ধুক দিয়ে একটি পুলিশকে গুলি করে।

ওদিকে জাপানে সেই পরিবারের খোঁজে পুলিশ আসে। মেয়েটি ভেবেছিল হয়তো তার মায়ের মৃত্যুর জন্য পুলিশ এসেছিল। তাই প্রথমে সে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে। পরে সে যখন জানতে পারে যে ঘটনা অন্য তখন সে পুলিশের সহানূভূতি অর্জনের চেষ্টা করে। মরক্কোতে আহত মহিলার অবস্থা আরো খারাপের পথে চলে যায়।

কিন্তু সময় অতিবাহিত হলেও কোনো সাহায্যর সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে তাদের সাথের সবাই তাদের ছেড়ে চলে যায়। এদিকে মেক্সিকান মহিলা তার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে আমেরিকায় ফেরত আসতে থাকে। কিন্তু সে ইলিগ্যাল ভাবে কাজ করায় তার কোনো ওয়ার্কপারমিট ছিল না। তাই যখন পুলিশ তার সাথে থাকা বাচ্চা দুটির পরিচয় জানতে চায় তখন সে কোনো প্রমান দিতে পারেনি। রাত সাথে থাকা তার আত্মীয় গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় এবং তাদেরকে জংগল এর মধ্যে রেখে যায়।

সকাল হয়ে গেলেও সে আর ফিরে আসছে না দেখে মহিলাটি বাচ্চা দুটিকে রেখে সাহায্যর খোঁজে বের হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে অবশ্য পুলিশ বাচ্চা দুটিকেও উদ্ধার করে। এদিকে জাপানে পুলিশ বোবা মেয়েটিকে স্বান্তনা দিয়ে বের হয়ে আসে। এসময় তার সাথে মেয়েটির বাবার দেখা হয়।

পুলিশ তখন জানতে চায় যে, তিনি কোনো রাইফেল কাউকে উপহার দিয়েছিল কিনা। কারন তার রাইফেল দিয়েই মরক্কোতে সেই দুই ছেলে এক আমেরিকান মহিলার উপর গুলি করেছে। লোকটি যখন জানায় যে সে তার রাইফেল একজন উপহার দিয়েছিল তখন পুলিশ তাকে থানায় একবার আসার অনুরোধ করে চলে যায়। মরক্কোর সরকার আর আমেরিকার সরকারের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে গেলে একটি হ্যালিকপ্টার এসে মহিলা ও তার জামাই কে মরক্কো থেকে আমেরিকায় নিয়ে যায়। অন্যদিকে একটি পুলিশ আহত হওয়ায় তাদের গুলির বেগ যেন আরো বেড়ে যায়।

এরইমধ্যে বড় ছেলেটি আবার পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ আবার তাকে গুলি করে। গুলি খেয়ে সে এবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এদিকে ভাইয়ের মৃত্যু দেখে ছোট ছেলেটি তার ভুল বুঝতে পারে। সে তখন পুলিশের কাছে সারেন্ডার করে তার ভাইকে বাঁচানোর আহবান জানায়। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে।

ছবি শুরুর দিন থেকে ৫দিন পর আহত মহিলাটি আবার সুস্থ হয়ে ওঠে। এবং এরই মধ্য দিয়ে ছবিটি শেষ হয়ে যায়। ছবিটি তার মূল উদ্দেশ্য দর্শকদের বুঝাতে সফলই হয়েছে বলা চলে। কিন্তু ছবিটা একটু বেশি বড়। প্রায় ২ঘন্টা ২০ মিনিট।

আরেকটু ছোট হলে ভাল হত। আর আমেরিকার সাহায্য আনতে এতো দেরী হয়েছে এটা বিশ্বাস করা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে ছবিটি দেখতে গিয়ে মোটেও মনে হয়নি সময়ের অপচয় হচ্ছে, যা আমার মাঝে মাঝেই মনে হয়। বিঃদ্রঃ ইন্টারনেটের কানেকশন আসলেই এই লেখাটি পোস্ট করবো। ওরা কেন ইন্টারনেট এর লাইন কেটে দিল?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.