যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে
১.
স্কুলে পড়ার সময় ৩ টাকায় রিকশা ভাড়া ছিলো স্ট্যান্ডার্ড। অল্প দূরত্বের ক স্থান থেকে খ স্থানে যেতে চাইলে ৩ টাকা কোন কথা ছাড়াই দেওয়ার যেতো। ঢাকায় অল্প দূরত্বে ৩ টাকা / একটু দূরে গেলে ৫ টাকা। ৮ টাকা, ১০ টাকা রিক্সা ভাড়া মানে সিরিয়াস দূরত্ব। তখন নানা বাড়িতে গিয়ে ছিমছাম ছোট মফস্বলে গিয়ে দেখতাম ২ টাকায় বহু দূর যাওয়া যায়, ৮ টাকায় পুরো শহর দখলে তখন বেশ মজাই লাগতো।
মিনিমাম দূরত্বে ৩ টাকার রিক্সা ভাড়া বেড়ে গিয়ে ৪ টাকা, তারপরে ৫ টাকা। ৫ টাকার কমে দিলে রিকশা ওয়ালারা এমন ভাবে তাকাইতো যেন আমি মহা মিছকিন, ভুল কইরা পেগাসাস তুল্য অতি দামী বাহনে চড়ছি।
এইবার ঢাকায় এসে রিকশা ভাড়ার নতুন ইভোলিউশন দেখা যাইতেছে। এক ধাপে মিনিমাম রিকশা ভাড়া ১০টাকার আশে পাশে। এর কমের দূরত্বের ভাড়ায় - হয় রিকশা ওয়ালা যাইতে অস্বীকার করে নাইলে বাধ্য হয়ে ১০টাকায় রাজী করাইতে হয়।
আর আগের ৮ / ১০ টাকার দূরত্বে গেলে অনায়াসে ৩০ টাকা দিতে হয়। একটা সিএনজি আর রিকশার ভাড়ার মধ্য সুক্ষ পার্থক্যের দিন দ্রুতই ফুরাচ্ছে।
যে দূরত্ব হাটা দিলে ৭ মিনিটে যাওয়া যায় (যেমন ঢাকা ভার্সিটির ভিসির বাসা থেকে নিউমার্কেট ১ নম্বর গেট) সেই জায়গাও ইদানীং ১০টাকার কমে যাইতে চায় না। সাথে মুরব্বী কেউ থাকলে ৭ মিনিটের হাটা রাস্তা ২০ মিনিটে রিক্সায় গিয়া ১০ টাকা ভাড়া দাও। এর মধ্যে ১৩ বার পিছন থেকে অন্য রিকশার ধাক্কা খাও, হাতল ধরে কুজো হয়ে বসো - আরো কতো বায়ানাক্কা।
এর আগে তো একটা রিকশা খুঁজে বের করার স্ট্রাগলটা অনুল্লেখই রাখলাম। সেইটাও এক মহা যন্ত্রনা। এই অবস্থার মধ্যদিয়া ঢাকাবাসী তাও যদি একটু হাটা শিখতো, এর বাইরে আর কিছু প্রার্থনা নাই।
জিনিসপত্রের যা দাম বাড়তেছে তাতে বাজারের খবর শুনে মনে হচ্ছে লিভিং এক্সপেনসের দিক থেকে ঢাকা অতি দ্রুত শীর্ষ খরুচে শহরে নাম লেখাবে। যতদূর মনে পড়ে সিংগাপুরেও অনেক কিছু বাংলাদেশের চাইতে সস্তা।
সত্যি কথা।
নিউমার্কেটের ইলিশ মাছ সত্যি সত্যি সিংগাপুরে রপ্তানী হওয়া মাছের চাইতে দাম বেশি। আরো বহুত আইটেমের। এই যদি হয় অবস্থা তাতে বেচারার রিকশা চালকদের ভাড়ার ইভোলিউশন একটু সিমপ্যাথীর দৃষ্টিতে দেখাই যায়। হাজার হইলেও বেচারাদেরতো সংসার চালাইতে হয়।
তবে ভাবসাবে মনে হচ্ছে অনতিবিলম্বে ঢাকার রিকশাভাড়া সিএনজি ছাড়িয়ে ট্যাক্সি ক্যাবের কাছাকাছি পৌছবে।
২.
রিকশাওয়ালা ইদানীং তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকে আরো পরিশীলিত হচ্ছে বোঝা যায়। দিন বেশি দূরে নাই যেদিন রিকশা চালকদের কাউকে বিনা দ্বিধায় সুধী সমাজের আলোচনায় ডাকা যাবে। সেদিন একজনকে রিকশয় মা পাশে থেকে বর্তমান রাজনীতির হালচাল নিয়া হালকা প্রশ্ন করতেই মহা পলিশড একটা বক্তৃমা শুনলাম যাতে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দর্শন অতি চমতকার উপস্থাপিত হইলো। কলম দিয়ে ধুয়া বের করা কলামিস্টরাও রীতিমতো লজ্জিত হইয়া যাইতো।
শুনে আমি মুদ্ধ ও যথারীতি বাক্যহারা। ঢাকার রিকশা চালকরা আগেও "ইনভিজিবল পলিটিক্যাল ইনটেলেকচুয়াল" ছিলো, এখনও আছে।
জয় বাংলা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।