হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!
হিমু হুমায়ূন আহমেদের এক অসাধারণ সৃষ্টি। হিমুর সৃষ্টি এবং পথচলা সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ নিজেই লিগেছেন ময়ূরাক্ষীর তীরে প্রথম হিমু। লেখাটি সম্ভবত কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আমি এটা সংগ্রহ করেছি বাংলাদেশ ইনফো ডট কম থেকে। আমার কাছে অবশ্য হিমুর বইগুলো তেমন ভালো লাগে না। হিমুর চেয়ে আমার রবং মিসির আলীকেই বেশি পছন্দ। আমার কাছে ভালো না লাগলেও ব্লগে হয়তো এমন অনেক পাঠকই আছেন, যাদের প্রিয় চরিত্র হিমু। তাদের জন্যই এই লেখাটি দেওয়া হল।
পূর্ববর্তী পর্ব থেকে চলমান ...
আমাদের দখিন হাওয়ার ছাদে অনুষ্ঠান হচ্ছে| আমার সর্বকনিষ্ঠ পুত্র নিষাদ হুমায়ূনের নামকরণ অনুষ্ঠান| হৈচৈ হচ্ছে, গান-বাজনা হচ্ছে| হঠাৎ আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার| তিনি ঢাকায় এসেছেন এটা জানি| কোথায় উঠেছেন জানতাম না বলেই নিমন্ত্রণ করা হয়নি| অনেকদিন পর তাকে দেখে ভালো লাগল|
আমি তার হাত ধরতেই তিনি ধমকের গলায় বললেন‚ আপনি নাকি হিমুকে বিয়ে দিয়েছেন| এটা তো আপনি করতে পারেন না| হিমু কেন বিয়ে করবে?
আমি হিমুর বিয়ে দেইনি| একটা বই লিখেছি - আজ হিমুর বিয়ে| বইটিতে হিমু বিয়ে করে ফেলে জাতীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়| বইটির প্রকাশক অন্যপ্রকাশ| প্রায় নিয়মিতই তারা বইমেলা উপলক্ষে হিমু বিষয়ক একটা বই পায়| বইটির প্রকাশনা উপলক্ষে নানা আয়োজন করে| এইবার বিয়ের আয়োজন করে ফেলল| একজন পাগড়ি মাথায় বর সাজল‚ আরেকটি মেয়ে সাজল বউ| বর-কনে অন্যপ্রকাশের স্টলে বসে রইল| দর্শকদের আগ্রহ এবং কৌতূহল তুঙ্গ স্পর্শ করল| চারদিকে দারুণ উত্তেজনা| বইমেলায় এমন মজার দৃশ্য আগে হয়নি| দু-একজন অবশ্য গম্ভীর গলায় বললেন‚ বইমেলার শুচিতা নষ্ট হচ্ছে| মহান একুশের ঐতিহ্য ভুলুন্ঠিত হচ্ছে ইত্যাদি|
হিমুর বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম না| টেলিভিশনে দেখেছি| আমার কাছে মনে হয়েছে‚ মেলা মানেই আনন্দ| মেলার পবিত্রতা রক্ষার জন্য সবাই অজু করে মেলায় আসবেন এবং ফিসফিস করে কথা বলবেন তা কেন হবে? একজন প্রকাশক যদি বুক প্রমোশনের জন্য কিছু করেন তাতেই বা দোষ কোথায়?
ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় দেখেছি‚ রান্নার বই প্রকাশনা উপলক্ষে রান্নার বিপুল আয়োজন| বইয়ের রেসিপি দেখে রান্না হচ্ছে| সবাই মহানন্দে খাচ্ছে| একদিকে নাচের জলসা হচ্ছে| একদল ছেলেমেয়ে উদ্দাম নৃত্যে মেতেছে| বইমেলার ভেতরই বিয়ারের দোকান খোলা| প্রচুর বিয়ার খাওয়া হচ্ছে|
থাক এসব কথা‚ বিবাহ অনুষ্ঠানে ফিরে যাই| হিমু যে হয়েছে সে মৈনাক পর্বতের কাছাকাছি| কনে লাক্স সুন্দরী| যথেষ্টই রূপবতী| একদল হিমু গেল রেগে| তারা মৈনাক পর্বতকে হিমু মানতে রাজি না| পাল্টা মিছিল শুরু হলো-
‘হিমুর বিয়ে‚ মানি না মানি না|’
অনেকদিন আগে বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনা হেরে গিয়েছিল| আমি তখন ময়মনসিংহে অয়োময় নাটকের শুটিংয়ে ব্যস্ত| আর্জেন্টিনার পরাজয়ে বিশাল মিছিল বের হলো| স্লোগান - ‘আর্জেন্টিনার পরাজয়‚ মানি না মানি না|’
তারা জানে ‘মানি না মানি না’ বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ফেললেও কিছু হবে না| তারপরেও স্লোগান দিতে হবে| জাতিগতভাবে আমরা স্লোগান দিতে ভালোবাসি| বাকের ভাইয়ের ফাঁসি বন্ধ করার জন্য স্লোগান দিয়েছিল| হিমুর বিয়ে বন্ধ করার জন্যও স্লোগান| বেচারা হিমু কি কোনোদিনই বিয়ে করতে পারবে না? তার সুখী সুন্দর সংসার হবে না? কোনো শিশু হিমুকে ‘বাবা’ বলে ডাকবে না? এত নিষ্ঠুর কেন আমরা?
চলবে ...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।