আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@সামাজিক সৌন্দর্য: অন্যের গৃহে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষই জগতের বুকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পেরেছে একথা যেমন সত্য, তেমনি এই মানুষেরাই অসামাজিকতার দিক থেকেও অগ্রণী। এটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক এবং শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটধারী বিবেক সম্পন্নদের জন্য লজ্জাজনকও বটে। সামাজিক বলেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন প্রণালীকে দু'টো ভাগে ভাগ করে নিতে পেরেছি। এক) বাহ্যিক এবং দুই) আভ্যান্তরীণ। সৃষ্টিজগতের অন্যান্য প্রাণীকুলের জন্য এ দু'টি ধারার তেমন প্রয়োজন না হলেও মানুষের বেলায় এর বিকল্প নেই।

বাহ্যিক যাবতীয় ব্যাপারাদিতে আমরা পরস্পরকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি এবং পারিও। কিন্তু আভ্যান্তরীণ বিষয়াদিতে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্টরাই পারে সহযোগিতা করতে আবার কখনো কখনো ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ একাকীই তার সমস্যার সমাধান করতে হয়। সে যাই হোক, বিস্তরভূমিতে প্রবেশ না করে এখন আমরা শুধু সমাজের আভ্যান্তরীণ বিভাগের দুর্গ হিসেবে গৃহসমূহের প্রবেশ পথকেই বিচার করে দেখবো। নিজের অথবা অন্যের গৃহ বা একান্ত আভ্যান্তরে প্রবেশের নিয়ম-পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে দারুন নির্লজ্জতা সুস্পষ্ট। তবে অবশ্যই সর্বত্র নয়, ধর্মীয় কৌলিণ্যতা ছাড়াও সাধারণ রক্ষণশীল পরিবারগুলোতে প্রায়শঃই দেখা যায় গৃহাভ্যন্তরে যে কেউর প্রবেশাধিকার এতটা সহজ নয়।

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই কারো ঘরের দুয়ার ঠেলে ঢুকে পড়া হয়। এ ক্ষেত্রে এই বিবেচনা করা হয় না যে, ভেতরের অবস্থা আদৌ একজন বাইরের আগমনকারীর দেখার অনুকুল কি না। অবশ্য চোর-ডাকাতদের ভয়ে মানুষ অনেক হুশিয়ার কিন্তু নিকট আত্মীয়দের কন্ঠস্বর কখনোই গৃহের লোকদেরকে বিব্রত করে না, তাই সে সুযোগটা সহজেই গ্রহণ করে নেয় অনেক অবিবেচক মানুষ। অন্যদিকে একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের ক্ষেত্রেও এই ঔদাসীন্যতা প্রকট। মা-বাবার কামরায়, বোনের কামরায়, কিংবা বোন ভাইয়ের কামরায় কিংবা অন্যান্য নিকটজনদের কামরায় প্রবেশের ক্ষেত্রেও বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে সীমাহীন লজ্জায় ফেলা হয় এবং নিজেও পড়ে যায়।

কেননা, প্রত্যেক মানুষেরই একটা ব্যক্তিগত দিক রয়েছে, যা অন্যদের নিকট প্রকাশ হওয়া কখনোই বাঞ্চনীয় নয়। বিশ্ব নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জন্য এই পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়ে গেছেন যে, কিভাবে অন্যের গৃহে প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে- আবূ মূসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "(গৃহবাসীর নিকট) তিন বার অনুমতি প্রার্থনা করবে। যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, তবে ঠিক আছে, নচেৎ ফিরে যাবে। " [বুখারী: ৬২৪৫, মুসলিম: ২১৫৩] রিব'ঈ বিন হিরাশ রাহিমাহুল্লাহ্ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: 'আমের বংশর এক লোক আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন: "তিনি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি স্বীয় খাদেমকে বললেন: এ লোকটি নিকট যাও এবং তাকে অনুমতি নেবার পদ্ধতি শিখিয়ে দাও। তাকে বলতে বল: আসসালামু 'আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? তিনি তাকে অনুমতি দিলেন, ফলে সে ভেতরে প্রবেশ করল।

" [আবূ দাউদ: ৫১৭৭] অন্য আরেকটি হাস্যকর ব্যাপারও আমরা অহরহই ঘটিয়ে থাকি, তা হলো- দরজায় আওয়াজ করার পর যখন ভেতর থেকে জানতে চাওয়া হয়: কে? আমরা জবাবে বলি: আমি। এই অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কেও প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন- জাবের রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন: "আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরজায় আওয়াজ দিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: কে? আমি বললাম: আমি। তিনি বললেন: আমি আমি। (জাবের বলেন) তিনি যেন এ জবাব অপছন্দ করলেন।

" [বুখারী: ৬২৫০, মুসলিম: ২১৫৫] এভাবেই জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগ নিয়ে ইসলাম আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়ে রেখেছে সার্বিকভাবে। অথচ আমরা কি পেরেছি এখনো জীবনকে সাজাতে, সুন্দর করে গড়ে তুলতে এই আলোয়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.