ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ব্লগ। সবার প্রেম সফল হয়না, কিন্ত যারা অনেক বেশী ভাগ্যবান তাদের প্রেম সফল হয়। আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন। আমার নিজের প্রতিই নিজেরই ঈর্ষা হয় এই অপরুপ সুন্দরী মেয়েটা এতো পাগলপারা হলো কেন, কী দেখে।
যতই সময় যায় ওর প্রতি আমার মুগ্ধতা আর ভালোবাসার গভীরতা বাড়তে থাকে। ওর নামটি শুনবেননা, কী যে মিষ্টি নাম। নাম হলো- প্রমা। আমি একটু বাড়িয়ে ডাকি- প্রতিমা। প্রমা মানেতো নিশ্চয়ই জানেন- সত্য আর সুন্দর ।
আর আমি বলি তুমি আমার সত্য আর সুন্দরের দেবী প্রতিমা।
ওকে ছাড়া আমার এতটুকু ভালো লাগেনা। বাড়ি থেকে অফিসের পথ, অফিসের সময় বড় বেশী একা একা লাগে। আমার এই একাকিত্ব থেকে ও আমাকে মুক্তি দিলো। আগে গাড়ীতে , অফিসে রবীন্দ্র সংগীত শুনতাম বুঁদ হয়ে।
আর এখন শুনি মিষ্টি কন্ঠে আবৃত্তি,
" আজ এই বসন্তের রাতে, ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে,
ঐ দিকে শুনা যায়, সমুদ্রের স্বর, স্কাইলাইট মাথার উপর,
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর। "
হুম ঠিকই ধরেছেন প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা। ধূসর পান্ডুলিপির এক গাদা কবিতা ও ওর কন্ঠে রেকর্ড করে দিয়েছে। এগুলোই এখন আমি শুনি আর মনে হয়-ও আমার পাশেই বসে আছে। বসন্তের দিন আরো বেশি বসন্ত আর শোভাময় হয়ে ওঠে আমাদের জীবনে।
কিন্তু আহলাদে ভরা স্নিগ্ধ রাতের মাঝেও ডেকে ওঠে কুহক। অফিসে আমার ব্যস্ততা বাড়ে। মাঝে মাঝে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায়। দেখি-নিটোল ফুলের কোমল স্নিগ্ধে ভরা প্রতিমা বড় অভিমানে শুয়ে আছে। ঘুম ভাংগাইনা।
আগে বাসায় ফিরতে দেরি হলে টেলিফোন বাজতেই থাকতো। এখন দেখি ধীরে ধীরে তা কমে আসে। কেন যেন বাড়ির প্রতি আমারও টান কমতে থাকে। কাজ শেষ করে লেপটপ সামনে নিয়ে বসে থাকি, চুপচাপ । কানের পাশে বাজতে থাকে-
"সমস্ত পৃথিবী যেন মিশে যায় রৌদ্রের সাগরে,
সিন্ধুচিল আর তার বনিতা যেখানে খেলা করে।
"
বিভিন্ন নান্দনিক আন্তর্জালের পাতায় আমি আটকাতে থাকি। বিষন্নতার মাঝে হঠাৎ এক মায়াজালে কড়া নাড়ে রুপা নামে একটি মেয়ে। আমিও সারা দেই। নীল নামেই ওর সাথে পরিচিত হই। প্রতিমার কন্ঠের ক্যাসেট শুনতে শুনতে কত কবিতার লাইনযে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে।
চ্যাটের ফাঁকে ফাঁকে কবিতার জালে রুপাকে আমি মোহগ্রস্থ করে তুলি। রুপার সাথে চ্যাট করে বুঝলাম মেয়েরা কত বেশী কাব্য প্রেমিক হয়। দিনে দিনে রুপার প্রতি আমি দূর্বল হয়ে পড়ি। আমার প্রতি ওর টান অনুভব করি। ব্যাকুল হয়ে কথা বলতে চাই।
একবার দেখতে চাই। কিন্তু রুপা বলে ওর স্বর ভালোনা, দেখতে কুৎসিত। তাই কোনোদিন দেখা হবেনা, কথা হবেনা।
আমি একদিন মিথ্যা করে বলি- দেখো এই শহরে আমার আর কেউ নেই। নাগরিক জীবনে বড় বেশী ক্লান্ত।
। -কাল সন্ধ্যায় তোমার জন্য আমি বসে থাকবো-আমার জন্মদিনে। এ আমার শেষ আহবান । ফোন দাও কথা বলি।
"সন্ধ্যার এক নক্ষত্রের রাতে, কেউ কি পারেনা আমায় কাছে ডাকতে?"
ও বলে- কালকেই দেখা হবে, কালকেই কথা হবে।
কৃষ্নচূড়া লেকের পাশে এসো। যেখানে নৌকা বাধা থাকে। আসবে ঠিক সন্ধ্যায়।
তারপর বলে -তোমাকে চিনবো কীভাবে।
আমি বলি - লাল শাড়ি পরে এসো।
তারপর বলি লাল শাড়িনা, প্লিজ রুপালি শাড়ি পরে এসো। আর আমার গায়ে থাকবে নীল শার্ট। নীল আকাশের বুকে তুমি রুপালি চাঁদ হয়ে থাকবে।
সন্ধ্যার আগে আগে আমি লেকের পাড়ে এসে বসে থাকি। এ কেমন ভালোবাসা।
অপরাধ বুঝেনা, পাপ বুঝেনা। বিবেকের অবিরাম দংশন বুঝেনা। কী ভয়ংকর পাপের ঘুর্ণিস্রোতে আমি থলিয়ে যেতে এসেছি।
সন্ধ্যা মিলিয়ে যায়, আকাশে চাঁদ উজ্জ্বলতর হতে থাকে। মায়াবি সন্ধ্যায় রুপালি শাড়ি পরা এক অবয়ব যেন কাছে আসতে না আসতেই মিলিয়ে গেলো।
রুপার কোনো দেখা নেই। আমি প্রতীক্ষায় থাকি থাকি। আকাশে তারা ফুটতে থাকে । যোগাযোগ করারও কোনো উপায় নেই।
প্রতিমার কন্ঠ আমার কানে বাজতে থাকে-
সাঁতরায়ে চলিতেছে জ্যোৎস্নার ছায়াসিঁড়ি নদী-
কেন ভয়? কই যাই? জানিতাম যদি।
বিষন্ন পলাতক একাকী মন নিয়ে আমি না চাইলেও বাসায় ফিরি। রাত দ্বিপ্রহর বাজে, প্রতিমা পাশেই শুয়ে আছি। কোনো এক ইন্দ্রিয়মায়ায় অন্ধকারেও বুঝতে পারি ওর চোখেও আজ ঘুম নেই। প্রতিমা কান্না জড়ানো কন্ঠে গেয়ে ওঠে-
জীবনের স্বাদ রহিয়াছে শুধু ভালোবাসার কাছে,
সময় চলে গেছে সময়ের কাছে,
আমাদের সেই ভালোবাসা আজ কোথায় হারিয়ে গেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।