ঙ
এখন আর পাটের গন্ধে ঘুম ভাঙে না। এখন বলছি কেন। সময়ের হিসাবে তা অনেকদিন। ঠিক করে বলতে পারছি না। তবে এক যুগেরও বেশি।
জন্ম নারায়নগঞ্জ শহরে। শহরের যে প্রাইমারি স্কুলটাতে পড়তাম তার কাস শুরু হতো সাত সকালেই। সকাল সাতটায়। বাসা থেকে সাড়ে ৬টা নাগাদ মার হাত ধরে বেরিয়ে পড়তাম। মা ওই স্কুলেরই শিক ছিলেন।
স্কুলে যাওয়ার সময় চোখে পড়ত সারি সারি পাট বোঝাই ট্রাক। দাড়িয়ে আছে শহরের রাস্তা জুড়ে। কুমুদিনির সামনে বিশাল সারি। সারারাত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে। সারাদিনে পাট খালাস করে ফিরে যাবে।
শুধু কুমুদিনি কেন। মন্ডলপাড়া বিজ্র, তামাকপট্টি, পাঁচ নম্বর ঘাট। সব খানেই পাট ভর্তি ট্রাক। আদমজীর কথা বললাম না। কারণ সেটা শহরের বাইরে।
আরেক দিকে। এ নিয়ে আলাদা করে লিখতে হবে।
আমরা পাট নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে দুই ধরনের কথা শুনি। পাটকলগুলোতে ক্রমাগত লোকসান হচ্ছে। আবারে বিদেশে পাটজাত পন্যের চাহিদা বাড়ছে।
কোনটা ঠিক বঝুতে পারি না। তবে আমাদের পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক। স¤প্রতি খুলনায় যেভাবে বন্ধ হয়ে গেল।
পাটকলগুলোকে রার নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পাটকলগুলো। মনে হয় নিয়ত ঠিক না।
বন্ধ হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতল্যার দুই পাশের পাটকলগুলো। এ পাটকে ঘিরেই ছিল শীতল্যার জৌলুস। নদীজুড়ে পাট বোঝাই বড় বড় নৌকা।
নানা রং এর পাল। রোদে যখন ঝিলিক দিয়ে ওঠতো সোনালী পাট সেটা দেখতে ভালোই লাগতো।
গ্রাামের বাড়ি থেকে পাট নিয়ে আত্মীয়স্বজন পাট বিক্রি করতে আসতেন। পাট বিক্রির সময় আমাদের নারায়ণগঞ্জের বাসা আত্মীয়স্বজনে জমজমাট থাকতো। পাটের সে সুদিন নেই।
পাট ব্যবসায়ী আত্মীয়স্বজনের আর্থিক অবস্থারও অবনতি হয়েছে। পাট বিক্রি করে আর মনে সুখে বেড়াতে পারেন না।
সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী পাটকল থেকে শুরু করে ভাটিতে তামাকপট্টি পর্যন্ত নদীর দুই পাশে পাট নিয়ে ছিল বিশাল যজ্ঞ। পাটকল বন্ধ করে দিয়ে জমি আবাসিক প্লট হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে শুনেছি। এ নিয়ে হয়েছে আবার নানা করবার।
অভিযোগ রয়েছে কম দামে এ পাটকলের জমি ও যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। জড়িত ছিলেন সব আমলের রাজনৈতকি নেতারা।
এখন খুব একটা নারায়নগঞ্জে থাকা হয় না। চাকরির কারণে ঢাকাতেই থাকি বেশিরভাগ সময়। যখন যাই সকালে বের হই।
বাজারে যাওয়ার জন্য। তবে পাটের গন্ধ আর পাওয়া যায় না। সেখানে থাকে ময়লা পুঁতিগন্ধ। শীতল্যারও আর সেই জৌলুস নেই। এ নদীর পানি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে বিচিত্র বর্ণ ধারণ করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।