একসময় সারা দুনিয়ায় পাট ও পাটশিল্প বাজারে আমাদের রাজত্ব ছিল। নানামুখী ষড়যন্ত্রের মুখে আমরা সে রাজত্ব হারিয়েছি। পাটকল মালিকদের নানা ধরনের হয়রানিতে ফেলা হয়েছে, একের পর এক পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অথবা মালিকরাই বন্ধ করে দিয়েছেন। আদমজীর মতো এশিয়ার বৃহত্তম পাটকলটিও বেচে দেওয়া হয় বিএনপির শাসনামলে। তখনো একজন মন্ত্রী সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশসহ উন্নত বিশ্বের স্বার্থে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের পরামর্শে ও তাদের দোহাই দিয়ে এসব করা হয়েছে।
পাটে আমাদের রাজত্বের রাজমুকুট এখন অন্যের মাথায়।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী আমাদের সবচেয়ে বড় খাত পোশাকশিল্পে আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্যতিক্রমী ঘটনা হচ্ছে, এবার এ বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা সৃষ্টিতে উসকানি দিয়েছেন লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পোশাকশিল্পের সার্বিক বিষয়াদি দেখভাল করার জন্য সম্প্রতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি বিজিএমএইএ'র কাছে একটি খারাপ বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যা বিজিএমইএ'র নেতারা মানেননি।
উল্টো তারা তা প্রধানমন্ত্রীর গোচরীভূত করলে ওই ভদ্রলোককে বাদ দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে কাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় সে পরামর্শ চাইলে বিজিএমইএ'র লীগপন্থি দুই-একজন শাজাহান খানের নাম বলেন। তাদের যুক্তি ছিল একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে তিনি এ শিল্পে পরিকল্পিত শ্রমিক অসন্তোষ মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারবেন। কিন্তু তিনিই শ্রমিকদের উসকে দেবেন এটা জানলে হয়তো কেউ তার নামই তুলতেন না প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আরও গুডবুকে থাকার জন্য তিনি তার যোগ্যতা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে পোশাকশিল্প শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনকে এক জায়গায় এনে গত ২১ সেপ্টেম্বর পোশাকশ্রমিকদের সমাবেশটি করেছিলেন।
আগামী নির্বাচনে শাজাহান খানের নেতৃত্বে এ শ্রমিকরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবে এমন ধারণাও হয়তো বা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন পরিবহন শ্রমিক নেতা, কখনো শিল্পশ্রমিক আন্দোলনে তার তেমন সম্পৃক্ততা ছিল না। এবার হতে চেয়েছেন লাখ লাখ পোশাকশ্রমিকের নেতা। ওই সমাবেশে তিনি বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন যে, তিনি সরকারের মন্ত্রী। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মালিকদের কাছে।
সরকার তার মধ্যস্থতা করবে। মন্ত্রী সরকারের অংশ। এখন মন্ত্রীই যদি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়া সর্বনিম্ন আট হাজার টাকা বেতন দাবি করেন, শ্রমিকরা তো এতে উল্লসিত হবে এবং তা না পেলে উত্তেজিত হবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে একটা ন্যায্য মীমাংসার দায়িত্ব যার বা যাদের, তিনি বা তারাই যদি দাবি তোলেন তা পূরণ করবে কে? মন্ত্রী কার কাছে দাবি জানালেন? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে কি তিনি এ দাবি তুলেছেন? মন্ত্রী নিশ্চয়ই জানেন এ দাবি অধিকাংশ গার্মেন্ট মালিক মানতে পারবেন না। তিনি আসলে শ্রমিকদের উত্তেজিত করতে চেয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।
সভায় মন্ত্রীর দাবি উত্থাপনের পরই বিভিন্ন পোশাকশিল্প এলাকায় শ্রমিকরা সর্বনিম্ন আট হাজার টাকা মুজরির দাবিতে ভাঙচুর, অগি্নসংযোগসহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
পোশাকশিল্প শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। তবে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া দরকার। মালিকপক্ষও একটি বিষয় সাধারণের কাছে পরিষ্কার করতে পারেনি যে, পোশাকশিল্পে একজন শ্রমিক নিম্নতম মজুরি পান মাত্র দুই মাস। তখন তারা থাকেন সম্পূর্ণ আনাড়ি, কাজকর্ম কিছুই জানেন না।
দুই মাসে কিছু দক্ষতা অর্জন করার পর অর্থাৎ কিছুটা শেখার পর তার বেতন বেড়ে যায় ছয় থেকে আটশত টাকা। এভাবে দুই বছরের মধ্যে তার বেতন বর্তমান বেতন কাঠামোতেই প্রায় ছয়-সাত হাজার টাকা স্পর্শ করে। আমরা মনে করি, দুই মাসের জন্য হলেও সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো এমন হওয়া উচিত যাতে বছর তিনেক কাজ করলে ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ নয়-দশ হাজার টাকা স্পর্শ করে। বেতনের উছিলায় বার বার বিভিন্ন পোশাক শিল্পাঞ্চলে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হলেও আসলে কি বেতন বৃদ্ধিটাই একমাত্র উদ্দেশ্য? সাধারণ শ্রমিকদের কাছে হয়তো তা-ই। কিন্তু এ শিল্পে ৬০টির মতো শ্রমিক সংগঠন, প্রায় ৩৮-৪০টির মতো এনজিও কি এ শ্রমিকদের জীবনের মনোন্নয়ন, নূ্যনতম বেতন নির্ধারণের জন্যই কাজ করছে?
বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ শোনা যায়, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প অন্যত্র স্থানান্তরের উদ্দেশ্যেই প্রায় এনজিও এবং ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো শ্রমিক সংগঠনগুলো কাজ করছে।
গবেষণার নামে কিছু জ্ঞানপাপীও একই কাজ করছেন বলে মনে হয়। শ্রমিক আন্দোলন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য হয়, যে প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করে সে প্রতিষ্ঠান বা সে কলকারখানার বিরুদ্ধে নয়। পাকিস্তান আমলে বহু শ্রমিক আন্দোলনের তীব্রতার কাছে মালিকপক্ষ এবং সরকার পর্যন্ত নত হয়েছে, কিন্তু কয়টা কলকারখানা ধ্বংস করা হয়েছে বা আগুন লাগিয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে? আর এখন পোশাকশিল্পে কী হচ্ছে? একটা কিছু হলেই সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ। যেসব এনজিও এবং শ্রমিক সংগঠন পোশাকশিল্প শ্রমিকদের জন্য কাজ করছেন বলে দাবি করেন তাদের কাছ থেকে এ জবাবটা কী পাওয়া যাবে যে, তাদের অযৌক্তিক ভূমিকার কারণে এ পর্যন্ত দেশে কয় হাজার পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে? কত লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে? শ্রমিক স্বার্থে যারা কাজ করেন তারা কোনো কলকারখানা বন্ধের মুখে ঠেলে দেন না। শোনা যায়, যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শিল্প মালিকদের নিরুৎসাহিত করছেন এবং এই ব্যবসায় বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে দিচ্ছেন তারা বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী বিদেশি মহলের সঙ্গে জড়িত।
ষড়যন্ত্রের কথা বললে শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়। কিন্তু অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, অনেক শিল্পোন্নত ধনী দেশও বাংলাদেশের এ অর্থকরী শিল্পের পেছনে লেগেছে। তারা স্ব-স্ব দেশে নিজেদের ডোমেস্টিক প্রডাক্ট বাজারজাত করতে চায়, চায় নিজ দেশে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। এ উদ্দেশ্যে তারা কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন গড়ে তুলেছে। এরা শ্রমিক স্বার্থে কাজ করার এবং পরামর্শ দেওয়ার নামে তৃতীয় বিশ্বভুক্ত বিভিন্ন দেশে দরদি সেজে কাজ করছে।
বাংলাদেশেও তাদের অফিস আছে, তৎপরতা আছে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পে কাজ করা এনজিও ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর এদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা অনুসন্ধান করে দেখা দরকার সরকারের। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, উন্নত বিশ্বের মালিক-শ্রমিকরা যৌথ সংগঠন করেও কাজ করছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অন্যান্য ভারী শিল্পের মতো পোশাকশিল্প স্থায়ী শিল্প নয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য যা প্রয়োজন সে পরিমাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবশ্য স্থায়ীভাবেই থাকবে।
কিন্তু রপ্তানির ক্ষেত্রে তত দিন এ শিল্প টিকে থাকবে যত দিন ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করা যাবে। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি কম দামে, ভালো মানে ও সময়মতো সরবরাহে। পৃথিবীর বহু দেশ এসব চাহিদা পূরণ করতে না পেরে বাজার হারিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশে অনেক বড় বড় ব্যাকোয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠেছে। যেখানে সুতা-কাপড়সহ পোশাকে ব্যবহৃত সব কিছু উৎপন্ন হয়।
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদার সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে ওইসব শিল্প। কিন্তু ফরোয়ার্ড লিংকেজ অর্থাৎ পোশাক তৈরির কারখানা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছে। শ্রম সস্তা বলেই ক্রেতারা আমাদের দেশে আসছে। মানও ভালো। আমাদের প্রতিবেশী দেশটি বিশাল।
সেখানে এমন সব অঞ্চলও আছে যেখানকার মানুষ সভ্যতার আলো এমনকি মোটরযানও দেখেনি। দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে তাদের বাস। শ্রম আমাদের দেশের চেয়েও সস্তা। ওইসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে, গড়ে তোলা হচ্ছে পোশাকশিল্প নগরী। তারা তো চাইবেই পোশাকশিল্পের রাজা হতে, আমাদের রাজত্ব কেড়ে নিতে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞজনরা বলছেন, দামে এবং আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রে আমাদের কিছু প্রতিযোগী হয়তো তৈরি হচ্ছে, উন্নত বিশ্ব তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের পোশাক চাহিদা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য দিয়েই মেটাতে চাচ্ছে, তারপরও কমপক্ষে আরও দুই দশক আমরা আমাদের পোশাকশিল্পের বাজার ধরে রাখতে পারি ভালোভাবে। এ বিশ বছরে পোশাক খাতে অর্জিত বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আমরা অন্য কোনো নতুন খাতে বিনিয়োগ করে অর্জনের নতুন পথ করে নিতে পারি। আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের সে মেধা আছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের সে সুযোগ দিতে চায় না। বলে নেওয়া দরকার যে, আমাদের পোশাকশিল্পের যে বিকাশ ও অগ্রগতি তার পেছনে সম্পূর্ণ অবদান বেসরকারি মেধাবী উদ্যোক্তাদের।
তারা শুধু শিল্পে বিনিয়োগই করেননি, নিজেদের শ্রম ও মেধায় বহির্বিশ্বে বাজারও সৃষ্টি করেছেন। আমাদের বিদেশি মিশনগুলো এ ব্যাপারে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু তাদের ভূমিকা খুবই হতাশাজনক। আমেরিকান জিএসপি সুবিধা বাতিল নিয়ে নানারকম কথা। অথচ সে দেশে আমাদের পোশাকশিল্পের জন্য জিএসপি সুবিধা কখনো ছিলই না।
শুল্ক দিয়েই আমাদের দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা আমেরিকার বাজার ধরে রেখেছেন। এ মালিকরা কী গাড়িতে চড়েন, কী রকম বাড়িতে থাকেন তা নিয়ে সমালোচনা হয়, কিন্তু লাখ লাখ কর্মহীনের কর্মসংস্থান, এ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমজীবী মহিলাদের সামাজিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাকরণ এবং সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল অবদানের কথা একই নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয় না। আমি মালিকদের পক্ষে বলছি না, আমি আমাদের পোশাকশিল্পের কথা বলছি। এ শিল্পকে জাতীয় স্বার্থেই আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রতিযোগিতায় না টিকতে পারলে এ শিল্প এমনিতেই নিস্তেজ হয়ে পড়বে।
কিন্তু শিল্পে অশান্তি ও গোলোযোগ সৃষ্টি করে ক্রেতাদের ভড়কে দেওয়া এবং আমাদের দেশের ক্রয়াদেশ বাতিল করিয়ে আমাদের চেয়ে উচ্চমূল্যের দেশে এ বাজার পাঠিয়ে দেওয়ার যে কোনো তৎপরতা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেই চিহ্নিত হতে পারে। পোশাকশিল্প শ্রমিকদের অধিকাংশই নারী। আমরা তাদের প্রতি মানবিক আচরণ চাই। তাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে থাকার। এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।
সব ফ্যাক্টরির পক্ষে কলোনি তৈরি বা গাড়ির বন্দোবস্ত করে দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা। শ্রমিক সংগঠনগুলো এসব নিয়ে কখনো পোশাকশিল্পে কর্মবিরতি বা ধর্মঘটের মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কবে করেছে মনে নেই; অথবা অন্য কোনো ন্যায্য দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ কোনো আন্দোলন কী করেছে? গার্মেন্টে আন্দোলন মানে ভাঙচুর, আগুন, ধ্বংস- এটাই আমাদের অভিজ্ঞতা।
এখন সর্বনিম্ন মজুরির যে দাবি তোলা হয়েছে এ দাবি নতুন নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি বেতন কমিশন গঠন করেছে।
নভেম্বরে কমিশন তার প্রস্তাব দেবে। এখানে একটা কথা বলা দরকার। সব কারখানা কী একই সর্বনিম্ন মজুরি দিতে পারবে? সংবাদপত্রে যে ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হয়েছে তাতে কয়েকটা ক্যাটাগরি ভাগ করা হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো বা কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাকের সম্পাদক যে বেতন পান বা পাবেন, দৈনিক হাজারিকার সম্পাদক সে বেতন পাবেন না। পোশাকশিল্পেও এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত।
মন্ত্রী শাজাহান খান জানেন, আগামী নভেম্বরে পোশাকশিল্প শ্রমিকদের বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে সরকার। সেপ্টেম্বরেই তিনি গোলমাল পাকালেন কেন? শ্রমিকদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়াই কি তার উদ্দেশ্য? তিনি কার পক্ষে কাজ করলেন_ শেখ হাসিনার সরকার তথা বাংলাদেশের পক্ষে, নাকি যারা আমাদের পোশাকশিল্পের বাজার বন্ধ করে দিতে চায় কিংবা দখল করতে চায় তাদের পক্ষে?
আমাদের পোশাকশিল্পের এখনো যে সম্ভাবনা আছে তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন জাতীয় উদ্যোগ। সরকারি দল, বিরোধী দল, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ কোনো মালিকের পক্ষে নয়, এ শিল্পের পক্ষে দাঁড়ানো জরুরি। পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা তাদের বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ন্যায্য দাবিতে মালিকের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই লড়াই করবেন। কিন্তু তাদের সে লড়াইকে কোনো চক্রান্তকারী যাতে শিল্প ধ্বংস ও বিনাশের ধ্বংসাত্দক পথে নিয়ে যেতে না পারে, সংশ্লিষ্ট সবার উচিত সন্ত্রাস-নৈরাজ্য বন্ধ করে পোশাকশিল্পে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং মালিক-শ্রমিক-সুসম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পন্থায় উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।
জোর দিয়েই বলব, যাদের শ্রমে-ঘামে এই শিল্পের বিকাশ, তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য যেন তারা পায়। আমাদের রাজনৈতিক নেতা, এনজিওজীবী, শ্রমিক নেতা, পেশাজীবী, এমপি, মন্ত্রী-মিনিস্টার কেউ যেন অর্থের বা অন্য কিছুর নেশায় পড়ে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিদেশিদের ক্রীড়নক হয়ে কাজ না করেন_ এ প্রত্যাশা সব দেশপ্রেমিক নাগরিকের।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ই-মেইল : kazi.shiraz@yahoo.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।