সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...
প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে চলছে বৃক্ষ নিধন মহোৎসব। স্থানীয় বন বিভাগ ও নিসর্গ প্রকল্পের টহল দলের সহযোগিতায় পার্কের মূল্যবান বৃক্ষ কেটে পাচার করছে সংঘবদ্ধ গাছ চোর চক্র।
সরেজমিন জানা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে লাউয়াছড়ার সংরতি বনাঞ্চল থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকার সেগুন কাঠ।
লাউয়াছড়া বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১২৫০ হেক্টর ভূমি নিয়ে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক ঘোষনা করা হয়। ইউএসএইডের অর্থায়নে নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প ১৯৯৬ সাল থেকে এ পার্কের বৃক্ষ, জীব বৈচিত্র রনা বেন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার কাজ শুরু করে।
এর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৭৫ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পের অধীনে গঠন করা হয় কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি। বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষ রক্ষার্থে গঠন করা হয় ৪০ সদস্যের পেট্রোলিয়াম গ্রুপ নামীয় টহল দল। কিন্তু এ টহল দলের অধিকাংশ সদস্যই এলাকায় বনদস্যু হিসাবে পরিচিত। টহল দলের ২-১ সদস্য ছাড়া প্রত্যেক সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭ থেকে সর্ব্বোচ্চ ৩৭টি মামলা।
এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ধর্ষন ও বন বিভাগের অস্ত্র লুটসহ নির্যাতনের মামলা রয়েছে।
প্রথমদিকে এ সকল পেট্রোলিয়াম গ্রুপ বা টহল দলের সদস্য দিয়ে বনাঞ্চল রার সফলতা আসলেও গত ২-৩ মাস ধরে বনাঞ্চল থেকে কেটে অবাধে পাচার করা হচ্ছে মূল্যবান বৃক্ষরাজি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারী থেকে ৭ মার্চ এই ১ সপ্তাহেই পাচার হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকার সেগুন কাঠ। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ছনখলা থেকে শুরু করে গুলটিলা, লতউনির মুখ, পুড়াটিলা, জোরা সাইনবোর্ড, ২০০৫-২০০৬ সনের লাগানো এনরিচমেন্ট বনায়ন এলাকা, ফাড়াবট, কচুউনি ও চেরচেড়ি টিলা আশপাশ এলাকার সেগুন বাগান যেন বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গাছ চোররা পাহাড়েই গাছগুলো কেটে সাইজ করে নিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা হেয়ায়েত হোসেন, বাঘমারা বন বিট কর্মকর্তা শাহিন আহমেদ ও টহল দলের একাধিক সদস্যের সহযোগিতায় বালীগাঁও, বটরতল, বাঘমারা, ভেড়াছড়া, কালাছড়া ও শ্রীমঙ্গলের বিরাইমপুর, ভাড়াউড়া, কালাপুর, চাউতলি এলাকার চিহিত গাছ চোররা মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ্য দিবালোকে ওই এলাকার গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এখনও প্রতিদিন গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে। বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষ পাচারে সহযোগিতা করার অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তা ও বাঘমারা ক্যাম্প কর্মকর্তার বেতন গত ডিসেম্বর থেকে ৩ মাস বন্ধ ছিল। গাছ চুরি প্রতিরোধে এ দু’ কর্মকর্তা সহ টহল দলের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আজ অবধি বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গাছ পাচার অব্যাহত রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক মদিনুল হাসান গাছ পাচারের কথা স্বীকার করে বলেন, পাচারকৃত অধিকাংশ কাঠই জব্দ করা হয়েছে।
গাছ পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন কাঠ পাচারের কথা স্বীকার করে বলেন, এ জন্য নিসর্গের টহল দল দায়ী। তিনি বলেন, বনাঞ্চল থেকে গাছ চোরদের বেরিয়ে যাওয়ার রয়েছে শতাধিক পথ। এর ফলে তাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। গাছ চুরির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এটা সেফ-গুজব।
তবে ক্যাম্প কর্তকর্তা শাহিন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।