পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
অনেক পিচচি কাল , সেই ন্যাদা বাচচা ধরনের সময় থেকে রসুনের সাথে আমার নাড়ির যোগ । মার পেট থেকে বের হওয়ার পরে সরিষার খাঁটি তেল , রসুন সহযোগে গরম করে আমার নাড়িতে দেওয়া হতো! ফলে , সুন সুন করে রসুনের প্রতি প্রেম বেড়েছে , নাদান থেকে দান বয়স পর্যন্ত ।
দান মানে দান খেলার বয়সে , মুখ ব্যাদান করে খকর খকর খকর খক , আমার নাম ____ হক - ছড়া কেটে আমার দান গুজরান হইতো। টন টনে মনে আছে , টন্সিলাইটিস নিয়ে দিনের পর দিন রসুন গরম করে আম্মু বলতো , বসুন! বুকে পিঠে ডলে দেই ! সেই থেকেই বুঝেছি , রসুন বুকে আলিঙ্গনের জিনিস ।
বুকের গোলাপ কিংবা মাংসের গন্ধ নয় , অ-বরুনিক আমি - নেহায়েত রসুনের গন্ধ নিয়েই মেডিকেলে ঢুকে জানলাম, রসুনের সাথে হৃদ্যতা থাকা আবশ্যক।
প্রতি রাতে এক কোয়া রসুন স্নেহের আধিক্যে অক্কা পাওয়া হইতে আপনার হৃদকে রাখিবে সুশীল ও চিক্কন!
জীবনের লক্ষ্য বীক্ষন উত্তর এ আমার রসুন প্রেম বাড়িয়ে দিলো শত সহস্র গুণে। আমি পণ করিলাম , " এই রসুন রে নিবো আমি সেই রসুনের কাছে এ এ এ এ এ । "
তখন আমেরিকা থেকে খালামনি বারে বারে ফোন করে আর জিগায় , এই তোমাদের জন্য কি পাঠাবো , বলো তো? কালের ফেরে , রসুনের গুনে , ঢাকায় সবই পাওয়া যায় । আদার ব্যাপারিও গার্লিকের খবর রাখে । তাই আমরা , বলি যা তোমার লাগে ভালো , তাই! খালামনি বোতল ভরে পাঠায় আমেরিকান রসুন থেতো , মতান্তরে , রসুনের ক্রিম।
কয় দিন কুকুর গরম করে খাওয়া চললো বেশ!
থার্ড ইয়ারের পর ইয়ারদের নিয়ে গেলুম আমার দাদাবাড়ি যশোর । গ্রামের প্রকৃতি আর বিল - হাওড়ের সৌন্দর্য শত গুনে ম্যাগ্নিফায়েড হয়ে ধরা দিলো পেটে - যখন নিয়মিত টাটকা মাছ , মুরগী , শব্জির শিল্পিত , উত্তপ্ত রূপ রসনায় দিলো ঘাই । আমরা রসুনের নেশায় হাই!
দেখলাম, ফুফাত বোনটা মুরগী রান্নার ঠিক দশ মিনিট আগে ধরে ছুরি চালায় । তারপর কেটে ছেটে স্রেফ তেল আর কাটা শুকনা মরিচ দিয়ে কষায় অনেক্ষন । বেশ একটু হয়ে এলে পানি ঢেলে , চুপি চুপি , যে ঘরে দাদীর সিন্দুক থাকে , সেই ঘর থেকে কি যেন নিয়ে এসে ভরে দেয় তরকারিতে ।
তার মায়ায় , নেশায় আমরা এক প্লেট এর পরে আরো দুই প্লেট ভাত খেয়ে ভাবি , এবার তাহলে খাওয়া যাক। খিদেটা চাগিয়ে উঠেছে !
একদিন, কেউ ঘুম থেকে উঠার আগে , চুপি চুপি ঊঠে গেলাম দাদীর ঘরে । দাদী তখন, ফজরের নামাযের জন্য ওযু করতে বেরিয়েছেন । এর মাঝে টুক করে ঘরে ঢুকে আঁতি পাতি খুঁজি ! কি এই জিনিস? তরকারির মধ্যে ভেসে থাকে তারার ফুল হয়ে। ঠোঁটে লাগিয়ে একটা সুরুত করে টান! অমৃত অমৃত ! কিন্তু জিনিসটা কি?
কোথাও সেই গুপ্ত ধনের খোঁজ না পেয়ে শেষে হতাশ হয়ে আল্লাহকে ডাকার জন্য যেই মুখ তুলেছি আকাশে - দেখি! ছাদের খুব কাছে , সার সার মাচান বেঁধে রাখা আর তাতেই ।
হ্যাঁ হ্যাঁ , ঐ খানেই ! সেই মহার্ঘ্য সুলেমান'স মাইনের ডায়মন্ডকে হার মানিয়ে ঝুলছে !
আর কি?
রসুন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।