আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংলাপে জট খুলছে না তবু আগ্রহী দুই দল

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের টেলিফোনের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়ে সংলাপের তাগিদ দিলেও জট খুলছে না। সরকারদলীয় কোনো কোনো মন্ত্রী-নেতা অতিকথনে নামলেও দুই দলের দায়িত্বশীল নেতারা সংলাপ চান। তারা সংলাপ হবে এমনটি আশাও করেন। কূটনীতিক ও দাতারা পর্দার আড়ালে সংলাপের জোর চাপ দিচ্ছেন দুই পক্ষকেই। বিএনপি সংসদের প্রায় শেষ অধিবেশনে যোগ না দিলেও বলেছে তারা বর্জন করেনি।

সরকারের উদ্যোগের অপেক্ষায় আছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল বিশ্বাস করে সংলাপেই সমাধান হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিদ্যমান সংকটের বা সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের বাধা দূর হতে পারে। তবে বন্ধ দুয়ার না খুললে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই পরিণতি শুভ হবে না বলেও আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পর্দার আড়ালে প্রাথমিক পর্যায়ে সংলাপ চলছে। এ ক্ষেত্রে কূটনীতিকরা সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন।

দু-এক দিনের মধ্যে উভয় দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় সংলাপের পক্ষে। সরকার সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করলেও বিএনপি তা নষ্ট করেছে। একেক সময় তারা একেক রকম কথা বলেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সংলাপ হওয়া উচিত এবং তা হতেই হবে।

চলমান রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।

তবে সংলাপ না হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতায় প্রস্তুত। কিন্তু সরকারই সেই পরিবেশ সৃষ্টি করছে না। এখনো সময় আছে, সংলাপ-সমঝোতা না হলে দেশ সংঘাতের পথে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু থাকবে না। এই সংসদের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আছে।

সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সংসদের ভেতরে-বাইরে যে কোনো স্থানেই সংলাপের উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু আমরা সংসদে নতুন কোনো প্রস্তাব দেব না। সংলাপ ইস্যুতে চলতি মাসের শুরু থেকে নিয়মিতই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে বসছেন কূটনীতিকরা। আবার কোনো কোনো অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও কূটনীতিকদের দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে। চলমান সংকট নিরসনে সংলাপে বসতে সম্প্রতি ফোনে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।

এ নিয়ে দুই নেত্রীকে পৃথক চিঠিও পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। একই ইস্যুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইউউ) প্রতিনিধি দল এখনো ঢাকায় অবস্থান করছে। তারা এরই মধ্যে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদিকে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরাও চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রধান দুই দলকেই সংলাপে বসার অনুরোধ জানাচ্ছেন। এর পরেও যেন সংলাপের দরজা খুলছে না।

তবে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের স্বার্থে কোনো শর্ত না দিয়ে প্রধান দুই দল সংলাপে বসলে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নিজ নিজ অবস্থানে অনড় না থেকে উভয় পক্ষকে কিছু ছাড় দিতে হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সংলাপ ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন করে প্রতিনিধিকে নিউইয়র্কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে আওয়ামী লীগ অনীহ থাকায় বিএনপিও নিউইয়র্কে যাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ভাষ্য হলো- 'আমরা কোনো সময়ই বলিনি সংলাপ হবে না।

সংসদ হচ্ছে আলোচনার উত্তম স্থান। অধিবেশন শুরু হয়েছে। আশা করি বিরোধী দল সুযোগটা গ্রহণ করবে। ' দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত। এ অধিবেশনে তারা যদি রূপরেখা দেয়, তাহলে সেখানে আলোচনা হবে।

এ জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পরও যদি তারা প্রস্তাব দেয়, তখনো আলোচনা হতে পারে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, সরকারের ওপর নির্ভর করছে সংলাপ। আমরা শুরু থেকেই সংলাপ-সমঝোতায় বিশ্বাসী। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সরকার চাইলে আমরা যে কোনো স্থানেই সংলাপে রাজি।

সংলাপ ছাড়া সামনে আর কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল না গেলে বিএনপিও জাতিসংঘে যাবে না বলে জানান সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুকের মতে, প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে সংলাপ-সমঝোতায় বিস্তর ফারাক। তবে এখনই সংলাপের আশা শেষ হয়ে যাচ্ছে- এ কথা বলা ঠিক হবে না। সামনে এখনো সময় আছে।

শেষ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার থাকবে- এমন আশ্বাস আওয়ামী লীগকে দিতে হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।