আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালোবাসার সাইড এফেক্ট

আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।
ভালোবাসা নিয়ে ব্যাপক জ্ঞানগর্ভ গবেষণা এই পোস্টের প্রতিপাদ্য কোন বিষয় নয়। এই গল্পে স্বভাবসুলভ ভাবেই কিছু কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে। তবে এই গল্পটির মাধ্যমে আমি সাময়িক ভাবে গল্প লেখার প্রতি অবসর গ্রহন করছি। এই জন্য আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলেই খুশি হব।

তবে এই গল্পে জাতীয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের চরিত্র আনা হলেও তাদের প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা রেখে কাউকে কটাক্ষ করা হয়নি। গল্পের কাহিনী ও চরিত্র বিন্যাস নিতান্তই কাল্পনিক। বিজ্ঞ জনেরা বলে থাকেন অভাব যখন দরজায় এসে দাড়ায় ভালোবাসা নাকি তখন জানালা দিয়ে পালায়। কিন্তু সেই ভালোবাসা যখন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে এসে গলা চেপে ধরে তখন কি হয় ? আমি বলি তখনই মানুষ গান গায় আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙ্গাল। শরতচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস দেবদাস আমরা প্রায় সকলেই কম বেশি পড়েছি।

আর যারা পড়তে পারিনি তারাও এপার বাংলা আর ওপার বাংলার নাটক ও সিনেমার কল্যানে দেবদাস সম্পর্কে এখন সবাই জানি। এমনকি হিন্দিতেও দেবদাস নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়েছে। শুনেছি তামিল থেকে শুরু করে সেই হলিউডেও পর্যন্ত নাকি এই দেবদাস নিয়ে সিনেমা তৈরির কথা ভাবছে। শরতচন্দ্রকে এই জন্য হ্যাটস অফ যে তিনি প্রেমের এক বিস্ময়কর কাহিনী দিয়ে গেছেন পুরো পৃথিবীকে। যেন দেবদাস কোন উপন্যাস নয় একটি বাস্তব চরিত্র যাকে আমাদের পৃথিবীতে চোখের সামনে রোজই দেখতে পাই।

তবে আমার এই গল্পের সাথে দেবদাস কাহিনীর কোন রকম মিল নেই। এমনকি দেবদাস চরিত্রটির সাথেও এই গল্পের নায়কের কোন রকম মিল নেই। লিখে পাতা ভরার দরকার তাই এই প্রসঙ্গটি নিছকই তুলে ধরা। শেক্সপিয়র তার বিখ্যাত রোমিও-জুলিয়েট উপন্যাসটিতে লিখে গেছেন, O, she doth teach the torches to burn bright. It seems she hangs upon the cheek of night Like a rich jewel in an Ethiop's ear. (1.5.43-45), Romeo Give me my Romeo, and, when he shall die, Take him and cut him out in little stars, And he will make the face of heaven so fine That all the world will be in love with night, And pay no worship to the garish sun. (3.2.21-5), Juliet How fares my Juliet? that I ask again; For nothing can be ill, if she be well. (5.1.15-16), Romeo ভালোবাসা নিয়ে এমন হৃদয়কে ভেদ করে যাওয়া লেখা বানী খুব কমই বিশ্ব সাহিত্যে পাওয়া যাবে হয়ত। যাই হোক অনেক সূচনা লেখা হলো এবার মূল কাহিনীতে যাওয়া যাক।

আমাদের মহল্লায় একবার দিজেন্দ্রনাথ শর্মা সাহেব এসেছিলেন। দেবদাসের সাথে তিনি নাকি বিলেতে পড়াশোনা করেছিলেন। একই রুমেও তারা থাকতেন। আমাদের মহল্লায় প্রেমের কাঙ্গালেরা মিলে একটি সংগঠন করেছে, “প্রেমের চিরস্থায়ী কাঙ্গাল সংঘ” নামে। সেই সংঘের পরিচালক আকাশ আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু মানুষ।

তারাই নিমন্ত্রন করে এনেছিলো দিজেন্দ্রনাথ শর্মা সাহেবকে দেবদাসের মৃত্যু বার্ষিকীতে কিছু স্মৃতিচারণ মূলক মূল্যবান বক্তব্য রাখার জন্য। রীতিমত একেবারে তাকে ঘোড়ার গাড়িতে করে এনে হাজির করা হলো। উৎসুক জনতার ভিড় তাকে ঘিরে। যতটুকু বুঝলাম উৎসুক জনতার চোখ সাহেবকে যতনা দেখছে তার চেয়ে বেশি আমোদিত হচ্ছিলো এমন এলাহি কান্ডকারখানা দেখেই। একেবারে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে তাকে বরণ করা হয়েছিলো।

আমার কাছ থেকে মোটা অংকের ডোনেশন খসিয়ে নিয়েছিলো বদ ছেলেগুলো। সেই দুঃখ আমি আজো ভুলতে পারিনি। যাই হোক আমাকে সেই আলোচনা সভার সভাপতি করা হয়েছিলো। আমিও খুব ভাব নিয়ে সভায় থেকে আমার স্বরচিত একটি প্রেমের বিষাদমাখা কবিতা আবৃত্তি করে এসেছিলাম। ফেরার পথে দিজেন্দ্রনাথ শর্মা সাহেবকে শোভনের অনুরোধে ওদের বাড়িতে আনতে বাধ্য হয়েছিলাম।

শোভন আবার দেবদাসের ভীষণ ফ্যান কিনা তাই। ঘরে মোরগ-পোলাওর আয়োজন করে রেখেছিলো শোভন। আমি অবশ্য তাতে তেমন কিছুই মনে করিনি কারন আমরা বাংলাদেশিরা আর যাই হোক প্রচন্ড অতিথি পরায়ণ। দিজেন্দ্রনাথ শর্মা লোকটা দেখতে ইংরেজ সাহেবদের মতোই, একেবারে সাহেবিয়ানা ভাব পুরো চেহারায়। হালকা পাতলা গঠনের মুক্তমনা প্রগতিশীল একজন খাঁটি মানুষ।

এমন একজন মানুষের সাক্ষাৎ পাওয়াও নাকি পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। হ্যাঁ, সৌভাগ্যতো বটেই। তিনি যে একজন মুক্তমনা প্রগতিশীল মানুষ এটা আমি পেয়েছি তার ভিজিটিং কার্ডের লেখা থেকে। সেখানে তিনি লিখিয়ে রেখেছেন মুক্তমনা প্রগতিশীল ড. দিজেন্দ্রনাথ শর্মা ( পি এইচ ডি, লন্ডন )। তিনি নাকি চিরকুমার।

বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধনে বিশ্বাস করেন না। আর এই কারনেই দুইজন নারীর সাথে একই ঘরে সংসার করেও তিনি আজো অবিবাহিত একজন চিরকুমার মানুষ। আধুনিক সমাজ ব্যাবস্থা যাকে লিভ-টু-গেদার নামে আখ্যায়িত করে থাকে। যাওয়ার আগে দেখলাম তিনি শোভনকে কি সব প্রেম বিষয়ক জ্ঞান দান করছেন ! সেসব জ্ঞান যদিও আমি মনে করি শর্মা সাহেবের চেয়ে আমাদের শোভনের অনেক বেশি। চাইলে শোভনও তাকে আরও বেশি জ্ঞান দান করতে পারত কিন্তু নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে শোভন শুধু হেসে মাথা নাড়িয়ে গেছে।

এই জন্য আমি পরে শোভনকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেছিলাম গুরু আমাকে কিছু জ্ঞান দেন না প্রেম বিষয়ক। আমিও প্রেম করতে চাই। প্রেমের মহাসাগরে এমন ডুব দিতে চাই যেন অভিজ্ঞ ডুবুরিরাও আমাকে খোঁজ করে আবিষ্কার করতে না পারে। শোভনের ঠোঁটে সেদিন যে হাসি দেখেছিলাম তার অর্থ বুঝেছি অনেক পরে। বেঁচে থাকার অপর নাম হল ঘুম।

সময় পেলেই ঘুমাই। তেমনি এক রাতে ঘুমের মাঝে কবি নজরুল আমার স্বপ্নে এলেন। তিনি আমাকে ধমক দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললেন। তিনি আমাকে বললেন, "এখন আমি কান্ডারীকে হুশিয়ার হতে বলি না, কারন আমি জেনে গেছি সে এখন অথর্ব, সামুতে আর ফেসবুকে তার আইডিটা আমি দেখেছি" ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি উনার হাতে প্রাণ মেঙ্গোবার। উনি মাঝে মাঝেই খুব তৃপ্তি নিয়েই তাতে একটু জিহ্বা লাগাচ্ছেন।

দূরে একটি মেয়ে দাড়িয়ে ছিলো, বেদুঈন মোনালিসা। তবে এই মোনালিসা ভিঞ্চি সাহেবের আঁকা রহস্যময়ি সেই মোনালিসা কিনা বলা যাচ্ছেনা। তবে চেহারায় অনেকটা মিশরীয় ফারাওদের ছাপ রয়েছে মেয়েটির। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। মোনালিসা, মেয়েটা উকি ঝুকি দিচ্ছে দূর হতেই, আর কবির চেহারায় অসস্তির ছাপ, মনে হচ্ছে যেন তিনি বলতে চাচ্ছেন, “কান্ডারী তুই এখন যা আমি ব্যাস্ত আছি” কবির মোবাইল ফোনটি বেজে উঠল।

স্যামসাং এস ফাইভ। বাহ ! কবি, রবী ঠাকুর দেখলে হয়ত এতক্ষনে হিংসায় জ্বলে যেতেন আপনার আজকের এমন ঠাট বাট দেখলে। হয়ত তিনি আপনাকে মোবাইলে ভিডিও চ্যাটে এসে বলেই ফেলতেন কাজী তোর মোবাইলটি আমাকে একদিনের জন্য ধার দিস। তোর বউদিকে একটু ইমপ্রেস করব। যাই হোক, কবি ফোন রিসিভ করলেন।

কে যেন তাকে ফোন দিলো , আর তিনি ধমক দিলেন, “ অই ব্যাটা ! দুখু মিয়া বলে আর ডাকবি না, আমার বর্তমান স্ট্যাটাস কি আর সেই রকম আছেরে ? এখন দুখু মিয়াঁ ট্যাগ পেয়েছে আমাদের কান্ডারী অথর্ব। এখন হতে সেই হল প্রকৃত দুখু মিয়াঁ। অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে আমি কবির কাছে পরামর্শ চাইলাম, প্রিয় কবি, আমি এমন একটি মেয়ের প্রেমে পরতে চাই যে হবে একজন জলদেবী। যে কিনা রুপেগুনে হবে ক্লিওপেট্রার মতো অনিন্দ সুন্দরী। যে কিনা তার ভেজা শরীর নিয়ে আমার সাথে ডেটিং এ আসবে; বোটানিক্যাল গার্ডেনে।

বালু আর লবণের সাথে সূর্যের আলো লুকোচুরি খেলবে তার পুরোটা শরীর জুড়ে। কবি ধমকে উঠলেন,"যাহ ব্যাটা ইতর ! সারাজীবন মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে ফিরেছিস, এখন আমার কাছে আসছিস প্রেম শিখতে ? আরে প্রেম কাকে বলে, সেটা শিখেনে কবি জীবনানন্দের কাছ থেকে" পরে আমারা দুজনে মিলে চা খেলাম, সাথে পাউরুটি ভিজিয়ে খেলাম। তিনি দুটা কাপ নিয়ে চা খেতে বসেছেন। একটা কাপের চা ডাইরেক্ট খাচ্ছেন, আরেকটা কাপে পাউরুটি ভিজিয়ে খাচ্ছেন। পাউরুটি খেতে খেতে দীর্ঘশ্বাস ছেরে বললেন, "আহারে পাউরুটি তুই এখন ভরসা ! টোস্ট তো খেতে পারি না, দাত নেই" “কান্ডারী সিগারেট আছে ?” কবি জানতে চাইলেন।

আমি আমার পকেটে রাখা প্যাকেটটি কবির সামনে এগিয়ে দিলাম। কবি বললেন, “যা সিগারেটের প্যাকেটটি নিয়ে ওই যে মেয়েটি দাড়িয়ে আছে ওকে দিয়ে আয়” আমি অবাক হয়ে কবিকে প্রশ্ন করার আগেই কবি আমাকে ধমকে বললেন, “কিরে গাধা হা করে দেখছিস কি ? যা প্যাকেটটি দিয়ে আয়। রবী দা সিগারেট নেয়ার জন্য ওকে পাঠিয়েছেন। সময় মত না পেলে তিনি আবার দীর্ঘ একটি কবিতা রচনা করে আমাকে ফেসবুকে ইনবক্স করবেন। আর আমার ইনবক্স সেই লোড নিতে পারবেনা” মোনালিসার হাতে সিগারেটের প্যাকেট তুলে দিতেই মেয়েটি এক রহস্যময় হাসি দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।

ফিরে এসে দেখি কবি নেই। তিনি চলে গেছেন। কান্ডারী ভাই, ও কান্ডারী ভাই, উঠেন আর কত ঘুমাবেন ? আমি চোখ খুলে দেখি পাশে দাড়িয়ে আছে শোভন। তাহলে এতক্ষন আমি স্বপ্ন দেখছিলাম ! -কি হল ভাই যাবেন না ? -কোথায় ? -ভুলে গেছেন আজ না আমাকে নিয়ে আপনার মোনালিসাদের বাসায় যাওয়ার কথা ! -নাহ ভুলি নি। -তুই একটু বস।

আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি। ততক্ষন এই নে সিগারেট টান বসে বসে। -কান্ডারী ভাই রাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলাম। কবি জীবনানন্দ দাশ এসেছিলেন আমার স্বপ্নে। -কি বলিস ! আমিও এক স্বপ্ন দেখলাম তবে স্বপ্নে কবি নজরুল, রবী ঠাকুর ছিলেন।

-তাই নাকি ? -হুম তা তুই কি স্বপ্ন দেখলি ? -স্বপ্নে দেখি কবি আমাকে বলছনে মোনালিসার সাথে আমার বিয়েটা হচ্ছেনা। -ধুর ! তুই এইসব স্বপ্ন নিয়ে মন খারাপ করিস ? স্বপ্নত স্বপ্নই, সেগুলো আবার সত্যি হয় নাকি কখনও ? -কি জানি কান্ডারী ভাই ! আমার স্বপ্ন দেখার পর হতে ভীষণ খারাপ লাগছে মোনালিসার জন্য। অশুভ কিছু একটা হবে বলেই আশঙ্কা হচ্ছে। -হুম ! বুঝতে পেরেছি। চল আজকে মোনালিসাদের বাসায় গিয়ে তোর সাথে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে আসব।

-তাই ভালো হবে ভাই। মোনালিসাদের বাড়ির ভেতর অনেক ভিড়। গুমোট একটা পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো বাড়ি জুড়ে। আমরা ভিড় ঠেলে ভেতরে গেলাম। সবাই গম্ভীর মুখ করে দাড়িয়ে আছে।

মোনালিসার বাবা মেঝেতে বসে কাঁদছেন। ভোরের দিকে মেয়েটি একটি চিঠি লিখে রেখে দিয়ে বাড়ি হতে পালিয়ে গেছে। মোনালিসার বাবাকে কি আর সান্তনা দেব শোভনের দিকে তাকিয়ে ভীষণ কষ্ট হল। শোভনের চোখে অশ্রু দেখে আমিও কেঁদে ফেললাম। একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে কতটা ভালোবাসলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে মোনালিসা তার উৎকৃষ্ট উদাহরন।

মেয়েটি যে ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে ছেলেটি শোভনের বন্ধু। শোভনের ইচ্ছে তাকে একবার পেলে গুলি করে হত্যা করার। অনেক বোঝালাম শোভনকে কিন্তু কোন কাজ হলনা। দেখতে দেখতে শোভন কেমন যেন হতাশা গ্রস্ত হয়ে পরেছে। মহল্লার সবাই তাকে দেবদাস বলতে শুরু করেছে।

আকাশ তার সংঘের স্থায়ী সভাপতি হিসেবে শোভনকে নিয়োগ দিয়েছে। এরই মাঝে একদিন কবি নজরুল আবারও আমার স্বপ্নে দেখা দিলেন। তিনি আমাকে বললেন মোনালিসা ভীষণ কষ্টে জীবন যাপন করছে। আমি যেন তাকে গিয়ে একবার দেখে আসি। কিন্তু আমি কোথায় খুঁজব মোনালিসাকে ? কবি বললেন কবি জীবনানন্দের কবিতার পথ ধরে খুঁজতে।

যেন আমি হাজার বছর ধরে পথ হেটে চলে অবশেষে খুঁজে পেলাম মোনালিসাকে সাদা রঙের শাড়িতে। বাড়ির সামনে পুকুর ঘাটে বসে হাড়ি-পাতিল মাজছে। চেহারায় সেই আগের লাবন্য নেই। বোঝা গেলো শ্বশুর বাড়ির অযত্ন আর নিপীড়ন তার জীবন বিষিয়ে তুলেছে। শুধু মাত্র লোকলজ্জার ভয় আর সমাজের শৃঙ্খল তাকে বাধ্য করছে এই নিপীড়ন ভোগ করে যেতে।

প্রতি নিয়ত স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির লোকেদের যৌতুকের জন্য অত্যাচার তিলে তিলে তাকে শেষ করে দিচ্ছে। তবু নিজ বাড়িতে বাবার কাছে ফিরে যাওয়ার মুখ তার নেই। যে ছেলেটির হাত ধরে মোনালিসা ভালোবাসার পথে পা বাড়িয়েছিলো আসলে সে মানুষ নয়। তাকে মানুষরুপী পিশাচ বলা যেতে পারে। সামান্য কিছু টাকার জন্য একজন মানুষ, যাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছে, সেই তার বিবাহিত স্ত্রীকে নাহলে কিভাবে অত্যাচার করে কিছুতেই তার হিসাব মেলাতে পারিনা।

আমি মোনালিসাকে দিয়ে আইনী ভাবে ডিভোর্সের ব্যাবস্থা করে তাকে নিয়ে অবশেষে শোভনের কাছে এলাম। যে শোভন একসময় মোনালিসাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলো। ভালোবাসার জন্য প্রয়োজনে প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকত সেই শোভন তার একসময়ের প্রাণ প্রিয়া মোনালিসাকে অবজ্ঞা ভরে ফিরিয়ে দিল। যদিও প্রেমের চিরস্থায়ী কাঙ্গাল সংঘের সাথে নিজেকে জড়িত রেখে সেই দেবদাস হয়েই প্রেমের জন্য মেয়েদের দরজায় ভিক্ষা করে করে ফিরছে তবু মোনালিসা নামক বর্তমান এই সমাজের উচ্ছিষ্টটাকে গ্রহন করতে তার রুচিতে বাঁধল। অথচ একসময় এই মেয়েটির সাথে এক মুহূর্ত দেখা না হলে পাগলের মত হতে দেখেছি শোভনকে।

এখন আমি কোথায় যাব মোনালিসাকে নিয়ে। একমাত্র মেয়ের সাথে বিচ্ছেদের শোক মোনালিসার বাবাকে নিয়ে গেছে মৃত্যুর দেশে। আর তার মা, তিনিও চলে গেছেন মেয়েটির জন্মের সাথে সাথেই। মাথায় কিছুই কাজ করছেনা। শোভনের বাড়ি থেকে বের হয়ে রিক্সা নিলাম একটি।

-এই রিক্সা যাবে ? -কোথায় যাইবেন স্যার। -চল যেতে থাকি ! যেখান পর্যন্ত গিয়ে তুমি রিক্সা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরবে সেখানেই আমাদের দুজনকে নামিয়ে দিও। রিক্সা ধীরে ধীরে আমাদেরকে নিয়ে চলছে অজানা গন্তব্যের পথে। আমার হাতে সিগারেট পুড়ছে। মোনালিসা তার মায়াবী কণ্ঠে গাইছে, আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি আমায় আর কান্নার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই......
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.