আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের দূর্নীতি ও আমরা চারজন

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

গাড়ীতে আমরা চারজন। একজন লেবানীজ, নাম মুনসাফ, একজন রুমানীয়ান - নাম আড্রিয়ানা, অন্যজন ইউসেফ - একজন ইথিওপিয়ান আর আমি বাংলাদেশী। জন্মসূত্রে ভিন্ন হলেও এখনকার আমাদের পরিচয় - আমরা কানাডিয়ান এবং একই কোম্পানীতে কাজ করি এবং ট্রেনিংএর জন্যে অটোয়া যাচ্ছি। গাড়ী চালাচ্ছে ইউসেফ আর নানান বিষয়ে কথা বলছে। আমরা তার সাথে তাল মিলাচ্ছি।

কথা প্রসংগে মুসসেফ লেবাননের রাজনীতির প্রসংগ উঠালো। মূলত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রী সভার সদস্যদের দূর্নীতির বিষয়টাই বেশী উঠে আসলো। সে নিহত প্রধান মন্ত্রী রফিক হারিরি প্রসংগে বললো - হারিরি এখনও একজন সর্বোচ্চ দূর্নীতিবাজ লেবানিজ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কিন্তু আমেরিকান এবং সৌদী সরকারের সমর্থনের বদৌলতে দূর্নীতিবাজ লোকগুলোই বারবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। জানতে চাইলাম - এর প্রতিকার কি? উত্তরে সে বললো - একটু ভাল ভাবে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবে - হেজবুল্লাহ্ এগিয়ে আসছে শুধু মাত্র তাদের সততার জোরে।

সেই জন্যেই ৩৪ দিন প্রবল যুদ্ধে হেজবুল্লাহকে এক ইঞ্চিও সরানো যায়নি এবং ইসরায়েল আর আমেরিকা তাদের নতুন হিসাবে খুঁজছে। এড্রিয়ানা শুরু করলো তার গল্প। নিকোলাই চচেষ্কুকে হত্যাকান্ডকে সে কোন বিপ্লব বলে মনে করে না। এড্রিয়ানার মতে চুচেষ্কুকে তার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে একাংশ পশ্চিমা মদদে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে মূলত দেশটাকে একটা দূর্নীতির অবাধ অরন্যে পরিনত করেছে। তারা জার্মান এবং ফরাসী উদ্যোগতাদের সাথে নিয়ে মূলত নিজেদের পরিবারকে সমস্ত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কল কারখানা নাম মাত্র মূল্যে হস্তান্তর করেছে।

তার মতে রুমানীয়াতে এমন কোন কাজ নেই যা ঘুষের বিনিময়ে করা যায় না। সেখানে একদল আকাশ-পাতাল সম্পদের মালিক হয়েছে। আর কমহীনতা আর দারিদ্রতা দেশটাকে ছেয়ে ফেলেছে। এবার জানতে চাইলাম সমাধানটা কি? ওর মতে কমিউনিষ্টদের মধ্যে একটা সততা ছিল এবং ছিল কঠোর শৃংখলা। হয়তো আবার কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসলে আবারো একটা সম্ভাবনা তৈরী হবে।

এবার ইউসেফ শুরু করলো হাসি। তার মতে - বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে বেশী খাদ্য সাহায্য পায় ইথিওপিয়া। কিন্তু সমুদ্র বন্দর না থাকায় আফ্রিকার নানান বন্দর ব্যবহার করার সময় তার বেশী অংশই বিক্রয় করে দেয় ক্ষমতাশীন রাজনীতিকরা। ফলে একই অবস্থা দেশে দূর্নীতি একটা সাধারন ঘটনা। আমি এই সব শুনছিলাম আর ভাবছিলাম কি বলবো।

একজন বস্তিবাসী যুবক একজন প্রায় প্রবল জনপ্রিয় ও নিরেট নেত্রীর পাশে বসে থেকে ভুবনমোহনী হাসি বদৌলতে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সর্বগ্রাসী এই তস্করের খাদ্য তালিকায় শুধু টাকাই নয় - ছিল ত্রানের টিন - ছিল বনের হরিণ। সেই নেত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ লোক - যিনি বাংলাদেশে প্রশাসনকে ভেংগে চুরমার করতে গিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। সেই লুটেরার পছন্দের মধ্যে ছিল দামী গাড়ী আর বনের সুন্দর পাখী ময়ুর। আর সেই নেত্রীর পুত্র - যিনি নিজেকে মোটামুটি রাজপুত্র হিসাবে বিবেচনা করেছে বিগত পাঁচ বছর - তার ইয়ার দোস্তরা শতশত কোটি টাকা লুটপাট করে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে কয়েক যুগ পিছিয়ে দিয়েছে।

নাকি বলবো, আমার পেশার মানুষ আকতার ভাইয়ের কথা - যিনি অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে পদ্মোতি পেয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে স্ববির করে দিতে গিয়ে দূর্নীতির আর অব্যবস্থার রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। নাকি বলবো - বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের স্ত্রীরা কোন কাজ না করেই বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার গোপনমন্ত্র আবিষ্কার করেছে। বলতে পারি - বাংলাদেশে ঢেউ টিনের খনি পাওয়ার গল্প। এই সব এলোমেলো ভাবতে ভাবতে ভেসে উঠলো ড. ফকরুদ্দিনের কঠিন মুখচ্ছিব - যিনি দৃপ্ত কন্ঠে দূর্নীতির বিরুদ্ধে “জিহাদ” ঘোষনা করছেন। যদিও এরশাদের ক্ষমতা দখলের দিনের ভাষনের কথা মনে হলে মনটা একটু খচখচ করে - তারপরও আশাই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।

এই ভাবনার মাঝেই দেখলাম গাড়ীটা একটা টিম হর্টনের সামনে দাড়িয়ে - কফি ব্রেক। যা হোক আমাকে আর দেশে নিন্দা করতে হলো না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া দেশটাকে হয়তো আমারা অন্যদের চেয়ে বেশীই সন্মান করি এবং বারবার আশার আলো খুঁজে বেড়াই বলেই দেশকে কোন ভাবেই ছোট করতে হলো না বলে হয়তো একটা চাপা আনন্দ নিয়ে কফির জন্যে লাইনে দাড়ালাম। মনে মনে হাজার বার আল্লার কাছে প্রার্থনা করলাম - এবার যেন আর মানুষকে প্রতারিত হতে না হয় - এবার যে, একটা স্বপ্নের বাংলাদেশের ভিত্তিটা তৈরী হয় - কঠিন ভাবে - মজবুত ভাবে - যেন আর কেহ মিথ্যার আর প্রতারনার মাধ্যমে দেশটাকে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে না যেতে পারে। বারবার বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর কথায় আর চমৎকার বাক্যবানে বিভ্রান্ত হয়েছে - এবার যেন এমন একটা ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়ে যাতে সৎ মানুষকে বোকা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে সমাজে কোনঠাসা হতে না হয় - যেন দূর্নীতিবাজরা মাথা উচু করে কথা বলতে লজ্জা পায়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.