বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা
এই রাতে আড্ডা দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না। ঘুমোতে গেছি। সেই আবার যন্ত্রণা। দরজায় নক। মামা মামা বলে ডাক।
মামা, "ঘুমিয়ে আছো? একটু কথা বলব"। হায়রে কপাল, বোনরে তুই একি যন্ত্রণার মধ্যে আমাকে রেখে গেলি। এই ভাগ্নে আমাকে সকাল রাত তাড়িয়ে বেড়ায়। রাগলেও হাসে। বকা দিলেও হাসে।
হাসি মুখে, হাসি সর্বত্র। ভাবটা পুরো দেশবাসী ওকে কাতুকুতু দিয়ে রাখছে।
দরজা খুলতেই এবার ভাগ্নের প্রবেশ। মামা, "কলেজে গণতন্ত্র নিয়ে একটা পেপার লিখছি। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত ফিলিপস বাততির মতো একদম ফকফকা"।
তত্বাবধায়ক সরকার অসম সাহসিকতার সাথে ভাঙ্গাচুরা গণতন্ত্রের ঘর বাড়ী ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী করছে যেখানে নাগরিক অধিকার আর স্বাধীনতার সোডিয়াম লাইট দিনরাত সারা দেশে জ্বলবে। লোকজন লাইন ধরে রেশনের মাল কিনবে আর খাবে। উঠতি নেতারা উন্নয়নের রকেটে করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বক্তৃতা দিবে। ব্যারিস্টার মওদুদের জায়গায় ব্যারিস্টার মঈনুল বসে আইনের মারপ্যাঁচের দীক্ষা জাতিকে দিবে। ট্রাকের পেছনে লেখাগুলো স্পস্ট হয়ে উঠবে, "জন্ম থেকেই জ্বলছি"।
ভাগ্নের এই কথকতায় আমি ক্লান্ত। নব্বই তো দেখেছি। এখন গণতন্ত্র নিয়ে আবার কপচানো বুলি দিয়ে ছাএ-ছাত্রীরা আশায় বুক বাঁধবে। গণতন্ত্র দেখা হবে সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর লেন্সে। দেশের উততরন হবে।
আমরা টুনাটুনীরা সুখে শান্তিতে বাস করব।
আমার কলেজ পড়ুয়া মামা আমার ঘুম তাড়িয়ে দিল। পড়তে পড়তে দেখি, ভাগ্নে লিখেছে তার পেপারে, বর্তমান সরকার আইনের শাসন করতে কতোটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তা দেখা যায় নতুন নতুন মামলাগুলোর দিকে তাকালে। সামান্য গরু ব্যবসায়ীও আজ তার ট্রলার ডুবে ২৬টি গরু মারা যাওয়ার জন্য মামলা দায়ের করতে পেরেছে। করিতকর্মা সরকার যুবরাজের বিরুদ্ধে এই মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন।
দেশ ঠিক ট্র্যাকে আছে। এগুলো কি কেউ তিন মাস আগে কল্পনাও করেছে? এক নেত্রীকে বিদেশ পাঠাচ্ছে। আর আরেক নেত্রীকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, তিনি দেশের নিরাপততার জন্য বিশাল হুমকি। বড়ো দুই দলই আলোচনা করছে তাদের দলীয় সংস্কার আনার জন্য।
দলগুলো এখন ৪/৫ টুকরো না করলে গণতন্ত্র আসে কিভাবে? এগুলো আইনের শাসন আর গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। আমি ভাগ্নের পেপারে গরুর কেসের উদ্ধৃতি দেখে হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলাম না। ২৬টা মরা গরুর বিচার কি ৪২ স্যুটকেস আর হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাটের প্রতিকার করবে? আর আমার ভাগ্নের মতো বলাইরা গণতন্ত্র বলতে বলতে কলমের আগা ভেঙ্গে ফেলবে।
আমার ভাগ্নে কি বাসুনিয়ার রক্তের দাগ দেখেছে? দেখেছে নুর হোসেনের লেখনী? না দেখেনি। আমার নিজের মা মরে গেল বিশ্ববেহায়া এরশাদের প্রস্থান দেখার আগেই।
সত্য আমরা কখনও জানি না। মিথ্যের মাঝে আমাদের বসতি। সক্রেটিস বিষপাত্র হাতে নিলেন "নিজেকে জান বলে"। আর আমরা ভুলতে চাই। ইতিহাস বিস্মৃতির মধ্যে অহংকার খুঁজি।
জানতে চাই না। সক্রেটিসের মৃত্যু কি ভীষণভাবে ব্যর্থ!! নির্বাচন কমিশন সংস্কার, গ্রহণযোগ্য ভোটার লিস্ট আর প্রশাসনিক সংস্কার করে দ্রুত গণতন্ত্র উততরন হয়তো সম্ভব ছিল। কিন্তু ক্ষমতার লোভের রসনা অনেক দীর্ঘ হয়। সেই রসনার অতৃপ্ত তৃপ্তির জন্য শুরু হয়েছে নতুন রন্ধনযজ্ঞ। সেই যজ্ঞকর্ম সম্পন্ন করার জন্য দরকার সত্যের ও নীতিবোধের নির্বাসন।
নিজের ঘুমের বারোটা বাজাতে আবৃততি শুরু করলাম সুকান্তের "ঘুম নেই" কবিতাটা:
"দৃঢ় সত্যের দিতে হবে খাঁটি দাম
হে স্বদেশ, ফের সেই কথা জানলাম।
জানে না তো কেউ পৃথিবী উঠছে কেঁপে
ধরেছে মিথ্যা সত্যের টুঁটি চেপে,
কখনো কেউ কি ভূমিকম্পের আগে
হাতে শাঁখ নেয়, হঠাত সবাই জাগে?
যারা আজ এত মিথ্যার দায়ভাগী,
আজকে তাদের ঘৃণার কামান দাগি।
ইতিহাস, জানি নীরব সাক্ষী তুমি.."
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।