মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সকাল সকাল নাস্তা করে আমরা ট্রেইন ধরলাম;যথারীতি জগজিৎ আমাদের ট্রেইনে ঊঠিয়ে দিল আর আমরাও তার উপযুক্ত পাওনা মিটিয়ে দিলাম। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আমরা পৌছে গেলাম আটারি বর্ডার। এখান থেকে চেপে বসতে হবে লাহোরের ট্রেইনে। ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করাতে গেলাম;ওখানে কর্মকর্তা আমাদের পাসপোর্ট দেখে বললেন “আপনাদের একটু সমস্যা আছে,আপনারা একটু অপেক্ষা করুন”। আমরা তো ভয়ে অস্থির;আল্লাহর নাম নিতে শুরু করেছি।
ওই ইমিগ্রেশ্ন অফিসার একটু পরে একজন ছোটখাট আকৃতির লোককে নিয়ে হাজির হলেন। লোকটা বললেন “আপনাদের সাথে কথা আছে”। আমরা অনুমান করলাম,ইনি গোয়েন্দা হবেন। আমরা ভয়ে ভয়ে কথা বলছি উনার সাথে। তৌহিদের পরনে ছিল রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ছবিওয়ালা টি-শার্ট।
লোকটা বললেন “oh you like TAGORE? Good, very good".” উনার সাথে ইংরেজিতেই কথা হচ্ছিল হঠাৎ করে হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করলেন আবার বারবার জিজ্ঞেসও করছেন, হিন্দি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে কিনা? না আমরা বললাম না আমরা বুঝতে পারছি। এভাবে কথা চলছিল, এক সময় উনি আমাদের বললেন বাংলায় কথা বলতে; আমরা বললাম-আপনি বুঝতে পারবেন না। তারপরও উনি বারবার রিকোয়েস্ট করে যাচ্ছেন। আমি বললাম ঠিক আছে-কিছু গালি দেয়া যাক। আমি আর তৌহিদ কতক্ষণ মুখ দিয়ে গালির ঘুর্ণিঝড় ঘটালাম।
হঠাৎ করে উনি বললেন “আমি তোমাকে ভাল্বাসি” একেবারে স্পষ্ট বাংলায়; আমরা দু’জন তো হতভম্ব। আমরা জিজ্ঞেস করলাম-আপনি কি বাঙালী? উনি হিন্দিতেই কথা বলে যাচ্ছেন। এভাবে কথা বলতে বলতেই এক সময় উনি বললেন “দেশে গিয়ে পদ্মার ইলিশ খেয়েছো?” স্পষ্ট বাংলায়। এবার তো আর কোন সন্দেহ রইলো না যে, উনি বাঙালী। অবশেষে উনি স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে উনি বাঙালী,কলকাতার লোক, এখানে ইমিগ্রেশন অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।
এরপর উনার সাথে বাংলায় আমাদের আলাপ শুরু হল। ইতোমধ্যেই আমাদের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হয়ে গেছে তারপর আমরা কাস্টমস ক্লিয়ার করলাম। এরপর কলকাতার সেই দাদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা উঠে পড়লাম “সমঝোতা এক্সপ্রেস” এ। দুপুর ২টায় ট্রেইন ছাড়লো। মন্থর গতিতে ট্রেইন চলছে।
সামনে কাঁটাতারের বেড়া-তার মানে ভারত্যীয় সীমান্ত শেষ। ট্রেইন থেকে ভারতীয় সৈন্য নেমে গেলো। ওখান্টায় ইংরেজিআর হিন্দিতে লেখা ধন্যবাদ। সামনের কিছুটা অংশ নো ম্যানস ল্যান্ড-না পাকিস্তানের না ভারতের। ট্রেইন চলছে মন্থর গতিতে,সামনে আরেকটি কাঁটাতারের বেড়া,পাকিস্তান সীমান্ত-ওয়াগা।
আমরা পৌঁছে গেলাম পাকিস্তানে,এখানেও এক ইশাল সাইনবোর্ড আমাদের স্বাগতম জানাচ্ছে “খোশ আমদেদ””welcome” । আবার ইমিগ্রেশন-কাস্টমস ক্লিয়ার করে চেপে বসলাম ট্রেইনে। সন্ধ্যা ৭.০০টায় আমরা পৌঁছলাম লাহোর রেলস্টেশনে। অসাধারণ একটা ভ্রমণ।
যাত্রাটার কথা চিন্তা করলেই আমি শিহরিত হই,পুলকিত হই আর ভাবি বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান এর মাঝে যেমন সম্পর্কই হোক না কেন, আমি এই তিনটি দেশকে একই মালায় গেঁথেছি।
বেনাপোল থেকে ওয়াগা কী অপূর্ব এক সেতুবন্ধন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।