ছোট বেলায় ইস্কুলে হুজুর পড়াতেন কৌতুক করিয়াও মিথ্যা কথা বলিবেনা। হুজুরের জন্ম বরিশালে। বলতেন মিছা কথা কইলে গুনা হইবে। হাদিসের কথা মাইনা চলতে হইবে।
মিথ্যা কথা বলার মত সাহস ছোট বেলায় কম ছিলো।
কেন যেন ভয় করতো। কিন্তু ইস্কুলতো পালাতেই হবে। মনে সাহস টাহস জুগিয়ে ইস্কুল ফাঁকি দেয়ার জন্য কারণ দেখাতাম পেট ব্যাথা। থার্মোমিটার ধরে বোঝা যেতোনা আসলে পেট ব্যাথা কিনা। তবে মিথ্যা বললেও বাবা মার ঝারিতে আসল কথা বেড়িয়ে পড়তো।
যতই বড় হতে লাগলাম ততই দেখি মিথ্যা বলার পরিমাণ বাড়তে লাগলো এবং বুঝলাম "কৌতুক করিয়াও মিথ্যা কথা বলিবেনা" এটা মানা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব!
বেশিরর ভাগ মিথ্যা কথা গুলো বলি ছোট খাটো বিষয় নিয়ে কারো অনিষ্ট করার জন্য নয়। আমিযে মিথ্যা বলি তার পেছনে যুক্তিও দাঁড় করিয়ে ফেলেছি। আমার কাছে মনে হয় যুক্তিটা বেশ শক্ত। তবে পরকালে যুক্তিতে কাজ হবে কিনা জানিনা। আমি মনে করি আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে মিথ্যাবাদী।
তবে আমরা কেউ মিথ্যা বলি শুধু মাত্র জীবনটাকে সুন্দর করার জন্য। কাউকে আঘাত দিতে কিংবা জেনে শুনে কোন ক্ষতি করার জন্য নয়। যেমন ধরুন কেউ জিগ্গেস করলো কেমন দেখাচ্ছে? ভালো না লাগলেও বলি খুব সুন্দর! কেউ জানতে চাইলো কেমন আছি আমরা বলি ভালো (যদিও হয়তো ভালো নেই)। কারো বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে বলি রান্না খুব ভালো হয়েছে। এমনি হাজারো উদাহরণ আছে।
এই ধরনের মিথ্যার পক্ষে যুক্তি হিসাবে আরেকটা হাদিস প্রস্তুত রেখেছি পরকালে সৃষ্টিকর্তাকে যিদি কোন ক্রমে বোঝানো যায়। সেই হুজুরই বলেছিলেন। "অবশ্যই কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল"। হুজরের সাথে দেখা হলে বলতে পারবো আমি যদিও মিথ্যা বলি কিন্তু আমার নিয়ত খারাপনা।
আমার বউ এবং প্রিয়জনরা বলে আমি নাকি কাঠখোট্টা।
অর্থাৎ মনের কথা বলে দেই। তখন মনে হয় হুজুর আমার মনের অজান্তে আমাকে সত্যি কথা বলিয়ে কাঠখোট্টা বানিয়ে দেয়। একবার আমার এক বন্ধুর বউ কে বলেছিলাম ভাবী আমি আপনার চেয়ে অনেক কম মিথ্যা বলি। উনি প্রথমে রাগ করলেন। কিন্তু তারপর দেখলেন আসলেই ঠিক।
মানুষকে খুশী করার জন্য অনেক বেশি মিথ্যা উনাকে বলতে হচ্ছে। ইদানিং আমার বউ কোন দাওয়াতে গেলে কোন খাবারটা কেমন হয়েছে এই ধরণের প্রশ্ন কে উ না করুক তার জন্য মনে মনে দোয়া করে যদি আমি টেবিলে থাকি। তবে তাঁর দোয়ার জন্য কিনা জানিনা আমিও আজকাল ঐ ধরনের প্রশ্ন না করুক তাই চাই। আবার কি বলতে কি বলে ফেলবো তাতে অন্যের বউতো কষ্ট পাবেই তার সাথে আমার বউ ও কষ্ট পাবে। তারপর দেখা যাবে জীবনটা কে সুন্দর করার কথা বলে যে মিথ্যা বলার কথা বলছি তা বিফলে যাবে।
আমি আমার প্রিয়জনদের বলি তোমারাযে সবার কাছে ভালো থাকার জন্য কিংবা অন্যকে কষ্ট না দেয়ার জন্য অনবরত মিথ্যা বলে যাচ্ছো ধর যদি কোন কোটা থাকে যে খুচরা মিথ্যা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি বলা যাবেনা তখন কি করবে?হুজুরকে জিগ্গেস করতে পারলে ভালো হতো। তখনত পাাপের পাল্লা এমন ভারী হবে যে পুণ্যের হিসাব দেখার প্রয়োজনই হবেনা। আর প্রেমিক প্রেমিকার মিথ্যার হিসাব রাখার কোন মানেই হয়না কারণ গুনে শেষ করা যাবেনা। কিন্তু প্রেমে পড়ে যে মিথ্যা তাওতো জীবনটাকে সুন্দর করার জন্য। তবে সত্যিকারের প্রেম হতে হবে।
আবার সব মিথ্যারও শাস্তি এক হলেও মহা বিপদ। কেউ জীবনটাকে একটু ছন্দময় করতে প্রিয়জনদের কে খুশি করতে খুচরা মিথ্যা বলছে। কেউ দুবেলা খাবার পাবার জন্য মিথ্যা বলছে। আবার কেউ মিথ্যা বলে কতনা ভয়ংকর ক্ষতি করছে। মানুষকে রাস্তায় বসিয়ে দিচ্ছে।
কত মানুষের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে।
যারা ইতিহাস বিকৃতি করে তাঁরা কি মিথ্যাবাদী? যারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দেয় তাঁরাও নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী? হুজুর বলেছিলেন "কৌতুক করিয়াও মিথ্যা কথা বলিবেনা"। কিন্তু এই ধরণের মিথ্যাতো কৌতুকের পর্যায়ে পড়েনা! অন্তত আমি তাই মনে করি আপনারা আমার সাথে একমত না হলেও। পরকালে যদি কোন সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমি অবশ্যই এই আবেদন করবো যে যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে যারা ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করে তাঁদের কে যেন শাস্তির পরিমানটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। আমি 71 এর কথা বলবো।
আমি যুক্তির পর যুক্তি দিব। আমি জানতে চাইবো এতো অত্যচারের পরেও কিভাবে একজন মানুষ সেই অত্যাচারের প্রতিবাদ না করে থাকতে পারে। আমার খুচরা মিথ্যার সাথে একাকার করে সমান শাস্তি আমি কিছুতেই মেনে নেবনা। হত্যা ব্যভিচারের জন্য যদি কঠিন শাস্তির বিধান থাকে তবে হত্যকারী আর ব্যভিচারীদের রক্ষা করার জন্য যারা মিথ্যা বলবে তাঁদের কেও কঠিন শাস্তি দিতে হবে। আপনারা আমার সাথে দাবি করুন আর নাই করুন।
বিঃ দ্্রঃ দয়াকরে ভুল বুঝবেননা। আমি বলতে চাচ্ছিনা যে সবাই মিথ্যাবাদী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।