ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।
হানিফ সাহেব ভোলা ভালা মানুষ। নিজের কাজটুকু খুব ভাল বোঝেন। তা না হলে স্কলারশীপ নিয়ে আমেরিকায় পড়তে আসা, তারপর চাকরীতে যোগ্যতা প্রমান করে কাজ করে যাওয়া, নিজের বাড়ি কিনে ফেলা এসব অবলীলায় করতে পারতেন না।
তবু সবকিছু পানসে মনে হয় হানিফ সাহেবের কাছে। মনে হয় জীবনের কোন লক্ষ্য নেই, গন্তব্য নেই।
সারাজীবন পড়ো, অফিসে গিয়ে কম্পিউটার গুতোও আবার ঘরে ফিরে টিভি। সব কেমন একঘেয়ে পানসে।
সম্প্রতি তিনি বিয়ে করেছেন রংপুর এলাকার নামকরা সুন্দরী একটি মেয়েকে। আমেরিকাতে তার নতুন বাড়িতে নিয়ে আসার পর বউটা খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত এসব বিত্ত বৈভবের দিকে। সারাজীবন বই পত্তরের মধ্যে নাক মুখ গুঁজে থাকা হানিফ সাহেবের কাছে এ এক অসম্ভব পাজল।
তার কাছে এরচেয়ে সহজ হচ্ছে জটিল ইলেক্ট্রনিক সার্কিটের জট ছাড়ানো।
গত শীতে তার স্ত্রীর সাথে রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হল। রংপুর অঞ্চলে শীতের মংগা কখনো চোখে দেখেননি হানিফ সাহেব। ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের গগন বিদারী চিৎকারে খুব অস্থির লাগছিল তার। দেখলেন ত্রান নিয়ে আসা মানুষগুলোরও বিপদ, অভুক্ত লোকগুলো যেন তাদের ছিড়ে ফেলবে।
প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলেন হানিফ সাহেব; আমাদের কোট প্যান্ট টাই পরা, উত্তর আমেরিকায় সুইমিং পুল সহ বিরাট বাড়ির মালিক হানিফ সাহেব দুস্বপ্ন দেখে ফিরে এলেন।
ফিরে এসে প্রথম কাজে গেলেন তিনি। দুপুরের খাবারের পর কফি কিনতে গেলেন। কফি কেনার পর যেসমস্ত খুচরো ফেরত দেয় তা সাধারনত পাশে রাখা একটি জারে সবাই ফেলে যায়, ঝামেলা কমানোর জন্য। হানিফ সাহেবও তাই করতেন এতদিন।
আজকে খুচরো পাওয়া 67 সেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। প্রায় 40 টাকা, মংগা অঞ্চলের লোকদের সপ্তাহের খাবারের টাকা। লোক গুলোর জরাজীর্ণ মুখগুলো ভেসে উঠল চোখের সামনে। পয়সা ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারলেন না তিনি। পকেটে রেখে দিলেন, বড় কোন কাজে ব্যবহার করতে পারেন কিনা সেটা ভেবে।
পাশ থেকে তার আমেরিকান কলিগ জেফ দেখল হানিফ সাহেব কয়টা খুচরো পয়সার লোভ সামলাতে পারল না। 'দে আর অল চিপ, নো ম্যাটার হাও মাচ দে আর্ন' - মনে মনে সগোক্তি করল জেফ। যে যাই ভাবুক, বব ডিলানের ব্লোয়িং ইন দ্যা উইন্ড শুনতে শুনতে এসইউভি হাঁকিয়ে বাড়ি ফেরার পথে উৎফুল্ল হানিফ সাহেব আজ নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।