পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর কুষ্টিয়ার এই নেতাকে বিশেষ সহকারী করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সরকারের মেয়াদ শেষের কয়েক মাস আগে তাকে বাদ দিলেন তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রোববার হানিফকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী তার বিশেষ সহকারীর পদে হানিফের নিয়োগ আদেশটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ১৪ দলের ঐক্য ধরে রাখতেই হানিফকে সরিয়ে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
হানিফের নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। হাসিনার সরকারে এখন তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।
ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়ার ওই সংসদীয় আসনে হানিফ আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান বলে স্থানীয় নেতাদের কথায় উঠে এসেছে।
নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে গত ৯ অক্টোবর কুষ্টিয়ার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উঠলে তৎক্ষণাৎ অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদপত্রের খবর, ওই বৈঠকে শেখ হাসিনার সঙ্গে হানিফ তর্কাতর্কিতেও জড়িয়ে পড়লে কেন্দ্রীয় নেতারা উষ্মা প্রকাশ করেন।
তখন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে জনপ্রিয়তা যাচাই করতে বলেছিলেন হানিফকে।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের পর হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই পদ থেকে সরিয়ে দিতে তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
“প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদটি লাভজনক বলে অনেকেই আমাকে বলেছে। তবে আসলেই পদটি লাভজনক কি না, তা জানি না। সামনে নির্বাচন, তাই আমিই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম ওই পদ থেকে সরিয়ে দিতে।
”
হানিফ প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এবং পরে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসার পর কুষ্টিয়ার বিভিন্ন কমিটি ভেঙে দেন, যা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। নতুন কমিটিতে নিজের পছন্দের নেতাদের নেয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়া সফরের পর গত ৯ অক্টোবর প্রার্থী বাছাই নিয়ে আরো কয়েকটি জেলার সঙ্গে ওই জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হয়।
সেখানে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগ কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠনে হানিফের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সভানেত্রী।
দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আফাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাকে না জানিয়ে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়াই ওই কমিটি ভাঙা হয়েছে।
ওই বৈঠকে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কামরুল আরেফিন ওই আসনে মহাজোটের প্রার্থী বদল করে হানিফকে মনোনয়ন দেয়ার প্রস্তাব তুললে শেখ হাসিনা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ সভাপতি ইনুর কথা জানান বলে বৈঠকে অংশ নেয়া এক নেতা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, “সভানেত্রী বলেন, যেখানে আমাদের ঐক্যের দরকার। সেখানে মহাজোটের শরিক দলের সভাপতি মনোনয়ন পাবেন না, এটা হতে পারে না। ”
“প্রধানমন্ত্রী এরপর হানিফের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বসলে অনেকেই জনপ্রিয় হন। ক্ষমতা দেখাতে পারেন।
পদত্যাগ করে এলাকায় যাও। দেখি তুমি কত জনপ্রিয়। আর তখন বুঝবে, রাজনীতি করতে কেমন লাগে। ”
গণপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদে থেকে হানিফ নির্বাচন করতে পারবেন না বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কথার জবাবে হানিফ তখন বলেন, তার ক্ষেত্রে আরপিও প্রযোজ্য নয়।
তিনি আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া ওই নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও তার বিশেষ সহকারীর মধ্যে বদানুবাদের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস দাঁড়িয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যাকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। তিনি আপনার মুখে মুখে কথা বলবে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। ”
এর এক মাস না পেরোতেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ হারালেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হানিফ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।