স্মৃতিচারণ ও এলোমেলো ভাবনা। বেশিরভাগই জগাখিচুড়ি।
আমি তাস তেমন ভালো খেলতে পারতাম না। স্পেডট্রাম, ব্রে আর কার্ডমিলানো পর্যন্ত ছিল আমার দৌড়। ইউনি ভার্সিটিতে উঠে দেখি হলে সবাই টুয়েন্টি নাইন খেলে।
বড়ই আজব খেলা। খেলার সময় চলে স্লেজিং, কার্ডে বাড়ি দেওয়া, কেন কার্ডে বাড়ি দিল এই নিয়ে চেঁচিয়ে রুম মাথায় তোলা, লাল সেট খাওয়া, কালো সেট খাওয়ানো, সব মিলিয়ে ধুন্ধুমার অবসহা। মাঝে মাঝে দেখি হেরে গিয়ে পার্টনারের 14 গুষ্টি উদ্ধার করা হচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে দেখি জিতে গিয়ে পার্টনারকে নিয়ে কোক-সিগারেট খাওয়া হচ্ছে।
এরপর দেখলাম রুম বেইজড খেলা শুরু হলো।
একদল এসে বলে গেল পারলে আমার রুমে আয়, কালা সেট 3 টা দিব। ফলে কিছুদিনের মাঝেই রুম মেটদের নিয়ে রুমে রুমে দল গড়ে উঠল। এক রুমের সাথে আরেক রুমের কম্পিটিশন। হোম-এ্যাওয়ে ভিত্তিতে খেলা। আবার মীমাংসা না হলে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলা চলে।
বিশাল অবসহা বলে যাকে আর কি।
দ্্বিতীয় বর্ষে এসে এই বিশেষ খেলা শেখার সৌভাগ্য হলো। আমার টুয়েন্টি নাইনের হাতে-খড়ি হলো পাশের রুমের লুলু পাগলার হাতে। প্রেমে ছ্যাঁকা খেতে খেতে আমাদের এই বন্ধু ইউনিভার্সিটির 2য় বর্ষেই এই খেতাব লাভ করেছিল। লুলুর খেলার হাত কেমন ছিল তা জানি না, তবে বেশিরভাগ সময়ই ও হেরে যেত এবং পার্টনারকে শাপ-শাপান্ত করত।
এজন্য ওর সাথে কেউ খেলতে চাইত না।
যাই হোক লুলুর তত্ত্বাবধানে আমি ও আমার রুমমেটরা শীঘ্রই টুয়েন্টি নাইনে সিদ্ধহস্ত হয়ে গেলাম। তার প্রমাণ পেলাম খেলা শেখার 3 দিনের মাথায়, যখন লুলু এন্ড কোং 3 টা কালো সেট খেয়ে বসল ও লুলু ঘোষনা দিল যে এই রুমে সে আর খেলবে না। তার কারন পার্টনার হিসাবে আমরা যাচ্ছেতাই আর তাছাড়া এই রুমে নাকি ওর ভালো কার্ড পড়ে ন। একথা অন্য কেউ বললে আমরা খবর করে দিতাম তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু লুলুর ব্যাপারে সবকিছু প্রযোজ্য, পাগল সম্রাট বলে কথা।
তাই কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নেই।
এরই মাঝে আরেক নবিস দূদর্ান্ত খেলোয়াড়ের আগমন ঘটে। আমাদের রুমের প্রতিবেশী রুমের বাসিন্দা মাসুদ আলম। একদিন খেলা চলছে মাসুদ ও তার রুমমেট মঙ্গল আমাদের লাল সেট দেওয়ার পথে। টান টান উত্তেজনা।
প্রথম দফা কার্ড বাটা হলো। মাসুদ আলম ডাক দিয়ে বসল 20। সম্ভবত মঙ্গলের কার্ড ভালো ছিল, মঙ্গল ডাকল একুশ। আমি আর আমার পার্টনার খুশি, ওদের নিজেদের মাঝে ডাকাডাকিতে। মাসুদ এতে খুবই বিরক্ত হয়ে ডেকে বসে বাইশ।
মঙ্গল এ পাযর্ায়ে মাসুদকে থ্রেট দিয়ে বসে জিততে না পারলে ওর খবর আছে। মাসুদ বেচারা এই হুমকিতে কাবু হয়ে সেভেন কার্ডে রঙ করার আবেদন জানায়। কিন্তু মঙ্গলের চেঁচামেচিতে সে সাহস না করে সেভেন কার্ডে রঙ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই মাঝে ঘটনা বুঝে আমি ও আমার রুমমেট ডাবল দিয়ে বসি। মঙ্গল উত্তেজনায় দিয়ে বসে রি-ডাবল।
দ্্বিতীয় দফা কার্ড বন্টন হয়ে যায় এরই মাঝে। আমরা সবাই উত্তেজিত। আমাদের হয় ছককা নয় মককা কন্ডিশন। খেলা শুরু হবে, তখন মাসুদ বলে বসে তার একটা প্রশ্ন আছে। কি? জিজ্ঞাসা করতে সে বলে, কেউ যদি সেভেনে রঙ না করে এমনি রঙ করে ও তারপর রঙ কার্ড না পায় তবে খেলা হবে কিনা।
আমরা তো ততক্ষনে বুঝে গেছি মাসুদ মিয়ার অবসহা। খেলব আর কি?একথা শুনে শুরু হলো আমাদের বেদম হাসি। একটু সুসিহর হতে মঙ্গলের কথা মনে পড়ল। দেখি কোথায় মঙ্গল? রাগে-দুঃখে সে রুম ছেড়ে অনেক আগে বেরিয়ে গেছে। আর মাসুদের দিকে তাকাতে শুনি বেচারার আর্তি "তোদের রুমে কি আজকে রাতে থাকা যাবে?"
এ ঘটনার পর মাসুদ আলম আর কখনও 18-এর বেশী টুয়েন্টি নাইনে ডাকে নি।
19-এ কল গেলে সে পাস দিয়ে দিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।