চিহ্নহীন পথের কথা
মানুষ মারা গেলে কোথায় যায়?
গুটি গুটি পায়ে নানুর খুকীমা (নানু এ নামে আমাকে ডাকতো) হেটে বেড়ায় আর জিজ্ঞাসা করে।
বড় ভাইয়া কোথা থেকে এসে ছো মেরে কোলে তুলে বলে - জোনাকী পোকা হয়ে যায়।
জোনাকী পোকা- আমি জোনাকী পোকা দেখবো।
নানু বাড়ির সবুজ ছোট্ট শহরের পাশ দিয়ে রূপা রঙের নদীর উপরে রঙধনুর মতো একটা উচু ব্রীজ। ব্রীজের উপরে নানুর খুকী মা বড় ভাইয়ার হাত ধরে দাড়িয়ে নিচে বিরাট বিরাট কালো রঙ করা নৌকা দেখে।
কত বড় নৌকা- ভাইয়াটা এত উচু যে ওর মুকের দিকে তাকালে আকাশ দেখা যায়। আকাশের নিচে ভাইয়ার মুখ।
ছোট খুকীমার আনন্দ ধরে না : কোথায় যায় এই নৌকা- সমুদ্দুরে?
হু -
সমুদ্র মানে সেই অচিন দেশ। গল্পের বইতে ছবি দেখেছিল খুকিমা। একটা মস্ত পাল তোলা জাহাজ নীল নীল ঢেউ এ দুলতে দুলতে যাচ্ছে।
জোনাকীর কথা তখন খুকী মা বেমালুম ভুলে গেছে। ওর চোখে তখন বড় বড় দাড়, নেঅকার ফুলে ওঠা পাল, মাঝিমাল্লার ছুটোছুটি।
বড়ভাইয়া সিগারেট ধরায়, খুকী মা জানে এ কথা বাসায় বলতে হয় না। খুকী মা মুখ দিয়ে বিচিত্র সব শব্দ করে আর হাওয়ায় ভাইয়ার চুল ওড়ে। সন্ধ্যার আগে জোনাকীর কথা মনে হয় না।
কিন্তু আলো নিভে আসতেই কোথা থেকে যে আসে এত জোনাকী, প্রথমে একটা দুটো তারপর থোকায় থোকায়... বাবুপাড়ার ব্রীজটা যেন আকাশের উপওে, নিচে লক্ষ লক্ষ জোনাকী খালি জ্বলছে আর নিভে নিভে আবার জ্বলছে.. তারাদের মধ্যে।
খুকীমার মনে পড়ে নানুর মুখ.- এত জোনাকীর মধ্যে কোনটা নানু সেটা বুঝতে পারে না কেবল অন্ধকারে শীত শীত লাগে আর একটু একটু ভয় লাগে। ভাইয়ার হাত জোরে চেপে ধরে সে, ফিসফিস করে বলে বাড়ি যাবো।
জোনাকী দেখবি না...
খুকীমা জোরে কেদে ওঠে - সে জোনাকী দেখবে না।
খুকীমা কি জানে জোনাকী মানে অন্ধকার।
ভাইয়া খুকীমাকে আকড়ে ধরে হেটে চলে শহরের আলোর দিকে।
পেছনে অন্ধকারে উড়ে বেড়ায় লক্ষ লক্ষ জোনাকীর দল। ওরা কখনও শহরে আসে না।
নানুও আর ফেরে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।