হতাশা আর দু;খ ব্যাথা যাদের দেখে থমকে দাঁড়ায় আজকে তাদের খুব প্রয়োজন, বিশ্ব এসে দু হাত বাড়ায়।
এলাকায় গেলেই নিজ বাড়ি-শ্বসুরালয় ছাড়া আরেকটি জায়গায় নিয়মিত যাওয়া হয়, সেটা হলো নিউ মার্কেটের এক লাইব্রেরী। বিকাল-সন্ধ্যায় দু-এক ঘন্টা সেখানে থাকলেই বন্ধুদের সাথে সাক্ষাতের কাজটা আড্ডার আদলে সারা হয়ে যায়। কি আলোচনা হয়না সে আড্ডায়? ধর্ম-রাজনীতি-শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক অবক্ষয়, ক্রিকেট-ফুটবল বউদের হাতে পুরুষ নির্যাতন কিম্বা নিছক হাস্যরস। সাথে চা, কারো জন্য পান কিম্বা নবাবের জিলাপী।
বলা বাহুল্য এরকম একটা সমাবেশে সব মতামতের বন্ধুরাই থাকে এবং রাজনৈতিক আলোচনা তথা কিঞ্চিত অম্ল-মধুর বিতর্ক সেটাকে বেশীর ভাগ সময় প্রাণবন্ত রাখে।
রোজার আগে একদিনের জন্য গেছিলাম গ্রামের বাড়ি, গ্রাম বললেও আসলে জেলা শহর। এবার একদিনের জন্য গেলেও এর মধ্যে ঘন্টা খানেকের আড্ডা বরাদ্দ ছিল সেই লাইব্রেরীতে। ততদিনে চার সিটিতে নির্বাচন হয়ে গেছে, গাজীপুর তখনো বাকী। আলোচনার তুংগের ছিলা রাজনীতি, সিটি নির্বাচনের ফলাফল, সামনের ভোট ইত্যাদি।
রাজনৈতিক আলোচনায় আমি সাধারনত গ্যালারীর দর্শক, সাধারনত কোন পক্ষ নেই না।
এবার অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সরকার বিরোধী মতামতে আড্ডার আওয়ামী বন্ধুরা এগিয়ে। আমার খুব ঘনিষ্ট এক বন্ধু, যে আজীবন আওয়ামী লীগের ভোটার, যার মরহুম বাবা ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী, আলোচনা ক্রমে বলল সে সামনের সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে না। প্রসংগত আমার এই বন্ধুটি আপাদমস্তক সৎ ও ভদ্র লোক, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিম্বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কোন সুবিধা নিতে চায়নি। একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে এবং অবসর সময়ে কোচিং সেন্টার চালিয়ে জীবন-যাপন করে যাচ্ছে।
সামনের নির্বাচনে ভোট দিতে না যাবার কারন হিসাবে সে বলল সে এই টার্মের আওয়ামী লীগের পারফরমেন্সের কারনে সে আওয়ামী লীগ কে ভোট দেবার জন্য বিবেকের সায় পাচ্ছে না। আর বিএনপিকে ভোট দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। উল্লেক্ষ্য সেদিনই চট্টগ্রামের রেলের টেন্ডার বাজিতে যুবলীগের দুই-গ্রপের বন্দুক যুদ্ধে একজনের মারা যাবার ঘটনা ঘটেছিল। আর আড্ডার আওয়ামি সমর্থক হিসাবে তারা ব্যাকফুটে চলে গেছিল।
আমার এই বন্ধুটি আরও কয়েকটি ঘটনা বলল, আমি শুধু দুটি শেয়ার করব।
শহরের এক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য হয়েছে। তার স্ত্রী অন্য একটি স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে দীর্ঘদিন কর্মরত। কাজেই সে এই সুযোগ নিতে চাইল, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা মিলে সেই সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। স্থানীয় এমপির চামচা তার কাছে খবর নিয়ে আসল তাকে তিন লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে যদি সে চায় যে তার স্ত্রীর চাকুরি হোক। অবশেষে তারা টাকা না দেবার সিদ্ধান্ত নেয় আর সে ফাকে জামাতের একজন তিন লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এই চাকরি বাগিয়ে নেয়।
আরেকটি ঘটনা হলো, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি একটি স্কুলে লাইব্রেরিয়ানের চাকরি নেয় আড়াই লক্ষ টাকা এমপিকে ঘুষ দিয়ে। উল্লেখ্য, এমপি সাহেব কিন্তু আওয়ামী লীগের। আমি ঢাকা থেকেই আরেকটি ঘটনা জানি, আমার পাড়া সম্পর্কে এক ভাবী, যে কিনা সে এমপি সাহেবের গ্রামের মেয়ে এবং এমপি সাহেবের দূর সম্পর্কের ভাগ্নি। তো আমার সেই ভাবীর এক মেয়ে আছে যে স্বামী গৃহে নির্যাতিতা হয়ে তার ঘরে ফিরে এসেছে। সেই মেয়ের একটা চাকরির জন্য তিনি মামা-এমপির কাছে ধর্ণা দিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগে কিছু মাঠ কর্মী নিয়োগ হবে।
তিনি তার মেয়ে ঢুকিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন, ভাগ্নির জন্য ঘুষের ডিস্কাউন্ট রেট, সবার জন্য তিন লাখ আর ভাগ্নির জন্য আড়াই লাখ।
আমার এই আওয়ামী বন্ধু ঘোষনা দিয়েছে সে ভোট দিবেনা, তার সাথে আরেক বন্ধু (সেও নিয়মিত আওয়ামী ভোটার) আড্ডায় একই ঘোষনা দিল। আমার সে ভাবী আড়াই লাখ টাকায় মেয়ের চাকরি নেবার চেষ্টা করছে জানি, তবে ভোট কি উনি মামাকে দিবেন কিনা তা আমি বলতে পারব না। এরা হয়ত আওয়ামী লীগ কে আর ভোট দিবে না, আওয়ামী লীগকে এখনও ভালবাসে বলে তারা বিএনপিকেও ভোট দিবে না। তবে ভুক্তভোগি ও হতাশ মানুষের কি অভাব হবে যারা বিএনপি কে না ভালবাসলেও শুধু পরিবর্তনের জন্য ভোট দিবে? যার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে গাজীপুরের মত জায়গায় আওয়ামী লীগের পরাজয়ের মাধ্যমে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তনয় বলেছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুণরায় ক্ষমতায় আসবে সে তথ্য উনার কাছে আছে। সিটি নির্বাচনের আগে এ ধরনের কোন তথ্য উনার কাছে ছিলা কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। সাধারনত মানুষ মতামত জরীপের মাধ্যমে একটা পুর্বাভাস দেবার চেষ্টা করে, মতামত জরীপের পুর্বাভাস আর ক্ষমতার আসবার তথ্য এক জিনিষ হবার কথা নয়। উনার কথায় এক ধরনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় যে আওয়ামী অবশ্যি ক্ষমতায় আসবে, এটা কোন পুর্বাভাস নয়, এটা নির্ধারিত এবং নিশ্চিত। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোট না দিলে কিম্বা হতাশ ভোটাররা বিরোধী দল কে ভোট দিলে আওয়ামী লীগের কার ভোটে ক্ষমতায় আসবে? তবে কি অন্য কোন পথ প্রস্তত আছে? কি তথ্য আছে সজীব ওয়াজেদ জয় এর কাছে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।