আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যারা রাষ্ট্র আর ধর্মকে এক করেন তারা যুদ্ধবাজ, অদূরদর্শী, সুবিধাবাদী ও স্বার্থপর

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মূলনীতি হচ্ছে সে রাষ্ট্রের নাগরিকের একাধারে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অন্যধারে ধর্মমুক্ত জীবন যাপনের গ্যরান্টি দেওয়া। অর্থাৎ: প্রতিটি ধর্মেরই যে সব নিয়মকানুন বা সামাজিক রীতিনীতি রয়েছে, তার প্রতিটিই প্রতিটি ধর্মের প্রতিটি নাগরিক পালন করাল অধিকার রাখেন, যতক্ষন না তা রাষ্ট্রীয় মানবিক অধিকার আইনের পরিপন্থী না হয়। ধর্মমুক্ত জীবন বলতে বোঝানো হয়েছে ধর্ম পালন না করার, কোন ধর্মীয় প্রতিষ্টানকে স্বীকৃতি না দেবার স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা ধার্মিকদের ধর্মপ্রতিষ্ঠানকে অসন্মান করার অধিকার দেয়না। তাদেরকেও রাষ্ট্রীয় মানবিক অধিকার আইনের প্রতিটি শর্তই মেনে চলতে হবে।

তাছাড়া ধর্ম মানুষের জন্যে, যেহেতু রাষ্ট্র মানুষ নয়, তাই রষ্ট্রের গায়ে ধর্মের লেবাস পড়ানোর প্রচেষ্টা কোনভাবেই যুক্তিসিদ্ধ হতে পারে না। ধর্মীয় মোলবাদীদের প্রধান লক্ষই হচ্ছে, নিজেদের ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মনেপলি হিসেবে সমাজ, রাষ্ট্র, প্রত্যাহিক জীবন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত করা। অন্য ধর্মীয় ও অন্য বিশ্বাসে বিশ্বাসী নাগরিক ও মানবিক অধিকার তাদের একচোখা দৃষ্টির সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেও, ধর্মীয় উন্মাদনায় তারা সে বাঁধাকে পাত্তা না দিয়ে সন্ত্রাসে প্রতিহত করতে দ্ধিধা করেন না। আর যেহেতু ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম মিশনারী নীতিতে বিশ্বাসী, সেহেতু অন্যধর্মীয় সমাজে তার নিজস্ব ধর্মের সম্প্রসারণও আরেকটি গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্য। আর রাষ্ট্র নিজেই যদি সে মৌলবাদের হাতে নিজেকে তুলে দেয়, মনোপলি আর সম্প্রসারণবাদিদের আরো পোয়াবারো! তাহলে সে শক্তির উৎস কোথায়, যে শক্তির প্রভাবে রাস্ট্র প্রতিটি নাগরিকের সম অধিকার বজায় রাখতে পারে ? এর উত্তর রাষ্ট্র ও ধর্মকে যারা এক করতে চান তাদের কাছে দাবী করা অযৌক্তিক কি? বিশ্ব পর্যায়ে ভাবতে গেলে একটা মনে রাখা দরকার।

ইসলামধর্ম, খ্রীষ্টধর্ম, ইহুদীধর্ম, এই তিন ধর্মের প্রতিযেগিতার মাঝেই লুকিয়ে আছে যুদ্ধ ও ধ্বংসের ভয়াবহ ভাইরাস। যে কোন সময়ে এই আপাত: শান্ত(?) প্রতিযোগীতা ভয়াবহ বিধ্বংসী চেহারায় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তার প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবেই ধর্ম ও রাষ্ট্রের আলাদা করা প্রতিটি বিবেকবান ও শান্তিকামী মানুষের জন্যে জরুরী। এছাড়া প্রতিটি ধর্মের প্রাথমিক মূলমন্ত্রের ভেতরে যে শান্তির বানীও রয়েছে, তা সবার কাছে খোলাসা করা ও পৌঁছে দেয়াও এক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের দ্বায়িত্বের আওতায় পড়ে। এতে যারা ধর্মীয় সন্ত্রাসে বিশ্বাসী, তাদের কাছেও তাদের ঈশ্বর ও ধর্মগুরুদের কথা বলে শান্তির পথে আনার অধিকারও সে রাস্ট্রের বর্তাবে।

ধর্মনিরপেক্ষ না হলে রাস্ট্রের সে অধিকারপ্রয়োগোর হাতিয়ার তার যথাযথ কার্যকারিতা ও গ্রহনযোগ্যতা পাবে বলে বিশ্বাস করা অপরিনামদর্শী। তাছাড়া নিজেদের কথা ভাবলেই চলবে না, আমাদের সামনের ভবিস্যত প্রজন্মের কথা ভেবেও আমাদের উচিৎ এক যুদ্ধমুক্ত পৃথিবীর সপ্ন দেখা ও সে সপ্নপূরনের বীজ বপন করে যাওয়া। আমার নিজের ধর্মসম্প্রসারণের চেয়ে আমাদের নিজেদের ভবিস্যত প্রজন্মের জন্য একে অনেক বেশী জরুরী মনে করি। যারা তা না করেন, তাদেরকে যুদ্ধবাজ, অদূরদর্শী, সুবিধাবাদী ও স্বার্থপর আখ্যা দেয়া ছাড়া আর কোন পথ আমার নেই। ধর্মের মৌলবাদীরা নিজেদের পরজগতের ধুঁয়ো তুলে যুক্তিগূলোকে উড়িয়ে দেবার পায়তারা কষবেন, তাতে সন্দেহ নেই।

কিন্তু এ ভাবনার ভেতরেও পুঁজ হয়ে জমে আছে নিজেদেরই স্বার্থবাদী বোধ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.