আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুলিবিদ্ধ মাসুদার অবস্থা আশংকাজনক : মির্জা আব্বাস ও খোকনকে বাঁচাতে পুলিশ মরিয়া

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

সাবেক জোট সরকারের মন্ত্রী মির্জা আব্বাস ও তার ভাইকে বাঁচাতে পুলিশের চেষ্টার অন- নেই। মির্জা আব্বাস ও মির্জা খোকন দু'জনই গোলাগুলিতে লিপ্ত হন রোববার রাতে। মির্জা খোকন অবৈধ অস্ত্র দিয়ে তার স্ত্রী মাসুদাকে গুলি করে। বেসামাল খোকনকে শান- করতে গিয়ে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাকে গুলি করেন মির্জা আব্বাস।

মির্জা খোকন তার স্ত্রীকে গুলি করার পর মির্জা আব্বাসই গুলিবিদ্ধ মাসুদাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এসব ঘটেছে মির্জা খোকনের মেয়ের চোখের সামনেই। এসব জেনেশুনেও পুলিশ অদৃশ্য ইশারায় ঘটনার তদন- করছে না। সব নিয়মকানুন ভেঙে ঢাকা মহানগর পুলিশ জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ক্ষমতাধর বিএনপি নেতা ও তার ভাইকে বাঁচাতে নানা ছলাকলা শুর" করেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এবিএম বজলুর রহমান বলেছেন, কেউ এ সম্পর্কে কোন অভিযোগ করেননি।

অভিযোগ না পেয়ে তদন- করা যা"েছ না। নাম প্রকাশে অনি"ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, কোথাও গুলির ঘটনা ঘটলে কেউ অভিযোগ না করলেও স্বপ্রণোদিত হয়ে যথাযথ তদন- করাই পুলিশের দায়িত্ব। ঘটনার শুর" থেকে পুলিশের নানা নাটকীয়তা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর কাহিনী। সূত্র জানায়, মির্জা আব্বাসের লাইসেন্স করা অস্ত্র থাকলেও মির্জা খোকনের বৈধ অস্ত্র নেই।

কোন অস্ত্র থেকে গুলি করা হয়েছে তা নিয়ে এতটুকু মাথাব্যথাও পুলিশের নেই। কালক্ষেপণের ফলে আসল ঘটনা চাপা পড়ছে আড়ালে। এ ঘটনার পর মাসুদার আত্দীয়-স্বজন খোকনকে খুঁজছেন। কিন' পুলিশ নীরব। মাসুদার আত্দীয়-স্বজন বলেছেনে, মির্জা খোকনই মাসুদাকে গুলি করেছে।

বিষয়টি লুকানোর জন্য ভুয়া ঠিকানা এবং পরিচয়ে তাকে সোমবার সকালে নগরীর এ্যাপোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও আশংকাজনক অবস্থায় তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলেছেন, 72 ঘণ্টা পার না হলে কিছুই বলা যাবে না। রোববার রাত 2টার দিকে গুলির ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন- মামলা তো দূরের কথা জিডিও হয়নি। মির্জা পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, খোকন তার স্ত্রীকে গুলি করার পর মির্জা আব্বাস নিজেই তার অস্ত্র দিয়ে ছোট ভাইকে গুলি করেছিলেন।

এ সময় একটি গুলি মির্জা খোকনের পায়ে লাগে। মির্জা খোকন প্যান প্যাসিফিক হাসপাতালের 205 নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে হাসপাতাল কতর্ৃপক্ষ বলেছে, তাদের এখানে ওই নামে কোন রোগী নেই। এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। গুলিবর্ষণের সেই অস্ত্রটি উদ্ধার দূরের কথা তদন-েই নামেনি পুলিশ।

সূত্র বলেছে, মির্জা খোকনের নামে অস্ত্রের কোন লাইসেন্স নেই। অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনা তদন-ে গড়িমসি করছে। এ ঘটনায় পুলিশের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। মহাসমাবেশে ব্যস- থাকার দোহাই দিয়ে পুরো বিষয়টি তারা এড়িয়ে যেতে চাইছেন।

এদিকে তদন- শুর" না হলেও সাবেক মন্ত্রীর বাসার সামনে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। অস্ত্রধারী ক্যাডাররাও পাহারা দি"েছ পুরো এলাকা। সাংবাদিক পরিচয়ে কোন তথ্য জানার চেষ্টা করতেই ক্যাডাররা ঘিরে ধরছে। মাসুদা আক্তারের বড় ভাই হার"ন অর রশিদ বলেছেন, রোববার রাত 3টার দিকে তারা টেলিফোনে তার বোনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানতে পারেন। তার ভাগি্ন মাসুদার মেয়ে শশা (10) তাকে ফোন করে প্রথম খবরটি জানায়।

এ সময় শশা তাকে বলেছিল, মামা, বাবা (মির্জা খোকন) মাকে মেরে ফেলেছে। তুমি তাড়াতাড়ি আস। এ কথা শোনার পরপরই তিনি 78 ফকিরের পুলের বাসা থেকে তার 5 ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বোনের বাসায় ছুটে যান। হার"ন অর রশিদ জানান, ওই বাড়িতে গিয়ে তিনি তার ভাগ্নে-ভাগি্ন ছাড়া আর কাউকে পাননি। বেডর"মে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখতে পান।

ভাগি্ন শশা তাকে জানায়, বড় চাচা (মির্জা আব্বাস) তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এ কথা জানার পর তিনি প্রথম মির্জা খোকনকে মোবাইলে ফোন করেন। মোবাইল বন্ধ থাকায় ফোন করেন মির্জা আব্বাসকে। মির্জা আব্বাস এ সময় মাসুদার বড় ভাই হার"ন অর রশিদকে জানান, একটা সমস্যা হয়েছে। আপনারা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চলে আসেন।

পরে তারা সবাই হাসপাতালে যান। হার"ন অর রশিদ জানান, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে তিনি তার বোনকে অপারেশন থিয়েটারের সামনে স্ট্রেচারের ওপর দেখতে পান। তখন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস এবং তার বড় ছেলেও হাসপাতালে ছিলেন। রক্তাক্ত বোনকে দেখে তারা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তারা ভালো হাসপাতালে না নিয়ে কেন বক্ষব্যাধিতে আনা হয়েছে তা মির্জা আব্বাসের কাছে জানতে চান।

হার"ন অর রশিদ জানান, এর পরই সকালে তাদের বোনকে গুলশানের এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির সময় পরিচয় গোপন করার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। ভর্তির সব ব্যবস্থা মির্জা আব্বাস নিজেই করেছেন। গুলশানের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও তিনি কিছু বলতে পারেননি। হার"ন অর রশিদ বলেন, প্রায় 16 বছর আগে মির্জা খোকনের সঙ্গে তার বোন মাসুদা আক্তারের বিয়ে হয়।

বর্তমানে তার বোনের তিনটি সন-ান। এর মধ্যে বড় মেয়ের নাম শশা (12)। মেঝ মেয়ে বাশা (7)। একমাত্র ছেলে আসোয়ারের বয়স মাত্র 10 মাস। তিনি বলেন, 6 ভাই এবং 6 বোনের মধ্যে মাসুদা সবার ছোট।

মাত্র 5 বছর বয়সে 1981 সালে তাদের মা তোহরা খাতুন মারা যান। এর 2 বছর পর 1983 সালের 20 ফেব্র"য়ারি মারা যান বাবা হাজী গোলাম মোস-ফা। তিনি বলেন, মাসুদাকে ছোটবেলা থেকে আদর-যত্নে বড় করেছি। সে আমাদের খুব আদরের। একথা বলেই তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।

মাসুদা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গত 2 দিন ধরে 78 ফকিরের পুলের ওই বাড়িতে চলছে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল। হার"ন অর রশিদ জানান, তারা 6 ভাই ব্যবসা করেন। এক সময় তার বাবা ছিলেন এলাকার জমিদার। মির্জা আব্বাসের পরিবারের সঙ্গে তাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে বলে তিনি জানান। হার"ন অর রশিদ বলেন, মির্জা আব্বাসের মা কমলা বেগম তার মায়ের চাচাতো বোন।

মির্জা আব্বাসের বিশেষ অনুরোধে তারা খোকনের সঙ্গে তাদের বোনের বিয়ে দিতে রাজি হন। হার"ন অর রশিদ বলেন, মির্জা খোকন নারী ও মদে আসক্ত। প্রতি রাতে মদপান করে বাসায় ফিরত। প্রতিবাদ জানালে সে মাসুদাকে বেধড়ক মারধর করত। এ নিয়ে তারা অনেকবার মির্জা আব্বাসের কাছে বিচার দিয়েছেন।

কিন' কোন কাজ হয়নি। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থেকে তারা মির্জা খোকনকে খুঁজছেন। তাকে পাওয়া যা"েছ না। এ ঘটনায় তারা আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান। সূত্র বলেছে, রোববার গভীর রাতে অতিরিক্ত মদপান করে বাসায় ফেরে মির্জা খোকন।

এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় মির্জা খোকন মাসুদাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। দুটি গুলি মাসুদা আক্তারের পেটে বিদ্ধ হলে তিনি গুর"তর আহত হন। ঘটনার সময় মির্জা আব্বাস ঘুমিয়ে ছিলেন। গুলির শব্দে তিনি দ্র"ত নিচে নেমে আসেন। তখনও মির্জা খোকন তার কক্ষেই ছিল।

মির্জা আব্বাস কক্ষে ঢুকে এ অবস্থা দেখে খোকনকে গালাগাল করতে থাকেন। এর এক পর্যায়ে খোকন অস্ত্র উঁচিয়ে তার বড় ভাইকে গুলি করতে উদ্যত হয়। এ সময় তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে মির্জা আব্বাস নিজেই ছোট ভাই খোকনের পায়ে গুলি করেন। পরে মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস মাসুদাকে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ রোগী চিকিৎসায় অপারগতা প্রকাশ করে মাসুদা আক্তারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।

কিন' জানাজানি হয়ে যাওয়ার আশংকায় সেখান থেকে মাসুদাকে নিয়ে যাওয়া হয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। পরে সকাল পৌনে 8টায় তাকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে মাসুদা আক্তার মুমূষর্ু অবস্থায় ওই হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি বিভাগে (আইসিইউ) রয়েছেন। এ ব্যাপারে মাসুদা আক্তারের চিকিৎসক ড. ওম প্রকাশ র"হিন্দিয়া মঙ্গলবার টেলিফোনে যুগান-রকে বলেছেন, রোগীর অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। 72 ঘণ্টা পার না হলে এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না বলে তিনি জানান।

এদিকে মির্জা আব্বাসের গুলিতে আহত খোকনকে ওই রাতেই তার বাসার সিকিউরিটি গার্ডরা পাশর্্ববতর্ী প্যান প্যাসিফিক হাসপাতালে ভর্তি করেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাজাহান ওই রাতেই অপারেশনের মাধ্যমে খোকনের বাঁ হাত ও বাঁ পায়ে বিদ্ধ দুটি গুলি অপসারণ করেছেন। বর্তমানে খোকন ওই হাসপাতালের 205 নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। তবে মঙ্গলবার দুপুরে এ খবর জানাজানি হলে সাংবাদিকরা হাসপাতালে যান। এ সময় প্রধান গেটেই সাংবাদিকদের আটকে দেয়া হয়।

তাকে 205 নম্বর কক্ষ থেকেও সরিয়ে নেয়া হয়। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মাসুদা আক্তারের পরিচয় নিয়ে মির্জা পরিবারের লুকোচুরি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, 2001 সালের নির্বাচনের সময় ভোটার তালিকায় মির্জা খোকনের স্ত্রী হিসেবে মাসুদা আক্তারের নাম রয়েছে। তার ভোটার নম্বর 00771। অথচ ঘটনার পর থেকে মির্জা আব্বাসের পরিবার থেকে বারবার বলা হয়েছে, মাসুদা আক্তার তাদের পরিচিতজন।

এর বেশি কিছু নয়। এতকিছুর পরও পুলিশ এ ঘটনা তদন-ে লুকোচুরি করছে। এমনকি জব্দ করা হয়নি ঘটনার রাতে ব্যবহূত অস্ত্রটি। এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের কমিশনার এবিএম বজলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি যুগান-রকে বলেন, এখনও পর্যন- পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করা হয়নি। তবে তারা সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

মহাসমাবেশের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস- থাকায় তারা বিষয়টির খোঁজ নিতে পারেননি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.