আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুন্য প্রান্তর ৪ (ধারাবাহিক ওয়েস্টার্ন গল্প)

timursblog@yahoo.com

শেষ পর্ব জিনের পেটি বেঁধে আগুন নিভিয়ে ঘোড়ায় চাপল ওরা । হার্ডিনকে সামনে রেখে আবার অন্ধকারে যাত্রা শুরু করল ওরা । সবার পেছনে আছে নীল । বাতাস স্যাঁৎসেঁতে আর ঠান্ডা এখানে এই ক্লিফগুলোর নীচে, মনে হয় গুহার মধ্যে রয়েছে ওরা । মাথার ওপরে তারাগুলো উজ্বল হয়ে জ্বলছে ।

দুশ্চিন্তায় পড়বে মেরি, এতো দেরী করে কখনও বাড়ি ফেরেনা ও । আর ওকে একা ফেলে কোথাও যাওয়াও নীলের ইচ্ছা নয় । মনে মনে ইচ্ছে হল সে বাড়িতে আছে । চমৎকার সাপার খেয়ে শুয়ে পড়েছে সে মেরির নানীর বানানো তালি দেয়া কম্বল গায়ে দিয়ে । গোটা ব্যাপারটাতে যা কিছু উৎসাহ ছিল তার সব হারিয়েছে সে ।

আগুন, কফি, ক্লান্তি আর তাড়া খাওয়া লোকটার প্রতি ক্রমাম্বয়ে জেগে ওঠা শ্রদ্ধাবোধ তাকে পরিবর্তিত মানুষে পরিনত করেছে । এখন ওরা সকলেই জানে চ্যাট লককে ওরা যা ভেবেছিল সেরকম লোক নয় । বিচারবোধ যতই নির্মম হোকনা কেন পশ্চিমের মানুষ অন্যের পরিমাপ নিতে পারে । একজন মানুষ যখন ট্রেইলে সফরে যায়, কাজ করে, বিছানা পাতে অন্যদের সাথে, তখনই অন্যরা তাকে চিনতে পারে । পোসির প্রত্যেক সদস্যই এখন জানে চ্যাট লক সেই ধরনের মানুষ যাদের শ্রদ্ধা করা যায় ।

চিন্তাটা অস্বস্তিতে ফেলছে ওদের । সন্দেহের বীজ মনের মধ্যে বড় হচ্ছে, যে কাজটা ওরা করতে চলেছে সেটা সম্বন্ধে । ওদের মধ্যে সবচেয়ে গোঁয়ার গোবিন্দ শর্ট আর কেসনিও এর বাইরে নয় । তারা জানে পিঠে গুলি করা মানুষ কী ভাবে আচরণ করবে । সে তার স্বভাবের ছাপ রেখে যাবে প্রত্যেকটা কাজে ।

এলোকের প্রত্যেকটা কাজে প্রমান হচ্ছে সে পুরোপুরি আত্বনির্ভরশীল একজন মানুষ । যে লোক যদি কোনঠাসা হয়ে মরতে হয়, শত্রুর দিকে ফিরে মরবে । করাত কলটা অন্ধকার আর নির্জন, বয়ে চলা ঝর্ণার ধারে আর একটা শান্ত পুকুরের পাড়ে বসে আছে । ঘোড়া থেকে নেমে কাছিয়ে এল ওরা করাতকলটার কাছে । তারপর পুর্ব পরিকল্পিতভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ঘিরে ফেলল বাড়িটাকে ।

একটা লজপোল পাইনের পেছনে পজিশন নিয়ে হাঁক দিল হার্ডিন । 'আমরা ভেতরে আসছি লক! তোমাকে চাই আমাদের !' কর্কশগলায় ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জটা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল । অবশেষে সে চুড়ান্ত মুহুর্ত সমাগত, পুরনো রোমাঞ্চের কিছুটা ফিরে এসেছে ওদের । পুরনো বাঁধের ওপর দিয়ে দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানির আওয়াজ কানে আসছে ওদের । আগে বাড়ছিল ওরা এমন সময় লকের গলা কানে এল ওদের ।

'ভেতরে এসোনা ! তোমাদের কাউকে খুন করার কোন প্রবৃত্তি আমার নেই । কিন্তু তোমরা যদি জোর করে ভেতরে ঢোকো, তাই করতে হবে আমাকে বাধ্য হবে আমাকে । এবং সেটা হবে নায্য গুলিবর্ষণ । ' গোঁফ কামড়ে ইতস্তত করল হার্ডিন । 'কিন্তু তুমি জনিকে পিঠে গুলি করে মেরেছো !' চিৎকার করে জানাল সে ।

'ওরকম কিছুই করিনি আমি ! আমি যখন ঢুকি তখন ও বারের দিকে মুখ করে বসেছিল । যখন দেখে পিস্তল নিয়ে এসেছি আমি, দেখেই ও পাশ ফিরতে ফিরতে ড্র করার চেষ্টা করে । আমি ওকে হারিয়ে দিয়ে আগে গুলি করি । প্রথম গুলিটা ওর পাশে লেগে ও বারের ওপর পড়ে যায়, দ্বিতীয় গুলিটা ওর পিঠে লাগে আর শেষটা মিস হয় । তোমরা আসলে কেউই ব্যাপারটা বুঝতে পারনি ।

' লকের গলা মিলিয়ে গেল । এখন আবার পাথরের ওপর ঝর্ণার পানি গড়িয়ে যাবার কুলুকুলু শব্দ পাওয়া যাচ্ছে । লকের যুক্তি অকাট্য মনে হল ওদের কাছে । ঘটনাটা এভাবে ঘটলেও ঘটতে পারে ! লম্বা একটা বিরতি, তারপর হার্ডিন বলল, 'বেরিয়ে এস, আমরা এর নায্য বিচার করব !' 'কীভাবে?' লকের চ্যালেঞ্জ । 'তোমাদের কোন সাক্ষী নেই, আমারও নেই ।

বলবার কেউ নেই ঘটনাটা কীভাবে ঘটেছিল আর জনিও জীবিত নেই । ' 'খুব ভাল মানুষ ছিল জনি, আর ও আমাদের বন্ধু ছিল !' চেঁচাল শর্ট । 'কোন খুনী নবাগত স্কোয়াটার এসে ওকে আমাদের এলাকায় মেরে যাবে তা হবেনা !' একথার কোন উত্তর এলনা । ওরা বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করল । হতাশভাবে গাছের গায়ে হেলান দিল নীল ।

হতে পারে লক সত্য কথা বলছে ? সম্পুর্ণ নিঃসন্দেহ না হয়ে কীভাবে একটা লোককে ফাঁসিতে ঝোলাবে ওরা ? 'ফালতু প্যাঁচাল !' শর্টের সংক্ষিপ্ত বিস্ফোরক মন্তব্য । 'আগে বাড়ো হার্ডিন । আমরা জানি ও মিথ্যা কথা বলছে । পিস্তলে ভীষন চালু হাতর ছিল জনির । ' 'ওয়েব লোকটাকেও তার নিজের এলাকার মানুষ ভাল লোক বলেই চিনত !' জবাবে লকের চিৎকার ভেসে এল ।

কয়েকমুহুর্তের জন্য ধমকে গেল ওরা । তারপরে একসাথে এগোতে শুরু করল । ভেতরটা ফাঁপা আর অসুস্থ লাগছে নীলের । সে জানে এ লোক কারো পিঠে গুলি করবার মানুষ নয় । সাবধানে এগোচ্ছে ওরা কারন ওরা জানে এ লোকের নিশানা খুবই ভাল হঠাৎ বলে উঠল হার্ডিন ।

'সামলে চল ! এত উতলা হবার কিছু নেই ! আমরা দিনের আলোর জন্য অপেক্ষা করব । চোখকান খোলা রাখো যেন না পালায়, তারপর হয়ে আমরা ওকে পাকড়াও করব নয়তো মিলটা পুড়িয়ে দেব ! একটা গাছের গুঁড়ির পেছনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল নীল । স্বস্তির এক উষ্ণ প্রবাহ অনুভব করল সে সারা শরীরে । কোন খুনখারাবী হচ্ছেনা তাহলে, অন্তত আজ রাতে নয় । ধীরগতিতে পেরিয়ে যেতে লাগল ঘন্টাগুলো, আস্তে আস্তে নীলের কান অভ্যস্ত হয়ে উঠল অন্ধকারে ।

খসখস করে ছুটে গেল একটা খরগোশ । পাইনের একটা মোচা খসে পড়ল গাছ থেকে, পাইন গাছের মগডালে সরসর করে বয়ে চলল রাতের বাতাস আর ডালপালার ফাঁক দিয়ে দেখা যেতে লাগল কয়েকটা নিঃসঙ্গ তারা । অবশেষে দিনের আলো ফুটল । পুরনো করাতকলটার দরজা, জানাল ঠেলে ঢুকে পড়ল ওরা । সব ফাঁকা আর খালি! ওদের ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেছে লোকটা ! একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচায়ি করল ওরা ।

প্রাণ খুলে গালাগাল দিল শর্ট, নিস্তব্ধ ঘরে অস্বাভাবিক জোরে প্রতিধ্বনিত হল সে আওয়াজ । 'চল, সোরেনসন প্লেসে যাই,' পরামর্শ দিল কিমেল । 'ওকে ওখানে পাওয়া যাবে । ' যে কারনেই হোক অন্যরা খুবই নিশ্চিত যে চ্যাট লক ওদিকেই যাবে । কারন লোকটা ওরকমই ।

নিজের বাসা ও সম্পত্তি পর্যন্তই পিছু হটবে সে, তার বেশি এক পাও না । ওকে ধরতে হলে, ওর বাসায় আগুন দিয়ে ওকে বের করতে হবে । এবং তাতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । তাতে এই ছয়জনের কোন ভয় নেই । তাদের ধারনা, তারা তাদের কর্তব্যকর্ম সম্পন্ন করছে মাত্র ।

শুধু ওদের মনের মধ্যে সন্দেহ, যা নাড়া দিয়েছে ওদের সবাইকে । এমন কী শর্ট যে সবচেয়ে রেগেছিল পথের তীর চিহ্নগুলো দেখে, আর কেসনি, যে কিনা ওদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল, এমন কী হার্ডিনের থেকেও ভাল ট্র্যাকার, । সুর্য বেশ খানিকটা উঠে তেতে রোদ দিচ্ছে এমন সময় পাহাড়টার ওপর উঠল যেখান থেকে নীচের শুকনো সোরেনসন প্লেসের শুকনো বেসিনটা দেখা যায় । কিন্তু বেসিনটা মোটেই শুকনো নয় এখন । হার্ডিন এত দ্রুত হাতে রাশ টানল যে ঘোড়াটা প্রায় পেছনের দুপায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ।

বাড়িটা মেরামত করা হয়েছে । চালটা দেখে বোঝা যাচ্ছে নতুন কাঠ লাগান হয়েছে । পুরানো গুদামঘরটা ঝড়বৃষ্টি ঠেকানোর মত করে মজবুত করা হয়েছে । নতুন একটা কোরাল আর বাড়ির লাগোয়া একটা বেড়াঘেড়া সব্জিখেতও দেখা যাচ্ছে । এতোক্ষন মরুভুমি দেখার পর চোখ জুড়িয়ে দেবার মত একটা দৃশ্য ।

ভালকরে পর্যবেক্ষন করতে করতে ঘোড়া নিয়ে নেমে এল ওরা । গরুবাছুর যা দেখল সব মোটা তাজা । কোরালটা ভর্তি ঘোড়ায় । 'অনেক কাজ করা হয়ছে এখানে,' বলল কিমেল । সে জানে, কতখানি পরিশ্রম করলে এরকম চেহারা করা যায় একটা জায়গার ।

'দেখে মনে হয়না কোন খুনীর জায়গা,' মুখ ফসকে বলে ফেলল নীল । বলেই লাল হয়ে গেল, আকস্মিক মন্তব্যটার জন্য বিব্রত বোধ করছে সে । এদের সবার বয়ঃকনিষ্ঠ সে, এবং সবার শেষে সে এ তল্লাটে এসেছে । জবাব দিলনা কেউ । ওদের সবার মনের কথা বলে ফেলেছে নীল ।

এ জায়গাটার মধ্যে একটা কিছু আছে- শক্ত, স্থিতিশীল, নির্ভরযোগ্য ও স্থায়ী । 'আমি অপেক্ষা করছিলাম তোমাদের জন্য,' পেছন থেকে ভেসে এল মন্তব্যটা । জমে গেল ওরা সবাই কথাটা শুনে ! চ্যাট লক ওদের পেছনে, কোন সন্দেহ নেই ওর হাতে অস্ত্র আছে । ওদের একজন বেচাল কিছু করতে গেলেই মারা পড়বে ! 'আমার বউ নাশতা বানাচ্ছে । আমি তাকে বলেছি কিছু বন্ধু আসছে নাশতা খেতে ।

পলাতক খুনীর খোঁজে বেরনো একটা পোসি । আমি তাকে ওদিককার সমস্যা সম্বন্ধে কিছু বলিনি । তোমরা সোজা ভেতরে চলে যাও । তোমাদের অস্ত্র সাথে রাখতে পারো । ব্রেকফাস্ট করার পরেও যদি তোমাদের মনে হয় কালকের নায্য ডূয়েলের জন্য কিছু দেনা পাওনা মেটানো দরকার, তবে আমি তৈরি আছি ।

আমি যে কারোর সাথে বা সবার সাথে লড়ব আমি । কিন্তু আমি ফাঁসিতে ঝুলবনা । 'আমি তোমাদের কারও নাম ধরে বলছিনা । কারন কারও সাথে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া করার ইচ্ছা আমার নেই । তোমরা সবাই ভেতরে ঢোলো এবার ।

' সবাই ঘোড়া নিয়ে আগে বাড়ল । দোরগোড়ায় এসে জিন থেকে নামল সবাই । পেছনে ফিরল নীল, এবং এই প্রথমবারের মত চ্যাট লককে দেখতে পেল সে । বিশালদেহী, শক্ত-পোক্ত মানুষ চ্যাট । রোদেপোড়া তামাটে মুখের ওপর লালচে বাদামী চুলের গোছা এসে পড়েছে ।

কিন্তু চোখের চাহনি তার বন্ধুত্বপুর্ণ । যেটা মোটেই আশা করেনি নীল । হার্ডিন তাকাল ওর দিকে । 'বেশ কিছু অদল বদল করেছ তুমি । ' 'তা ঠিক,' হাত তুলে কুয়াটা দেখাল চ্যাট ।

' আমার নিজের হাতে খোঁড়া । আমার বউ উইন্ডল্যাস (কপিকল) চালিয়েছে । ' একনজরে ওদের সবাইকে দেখে নিল চ্যাট । 'দুনিয়ার সেরা মেয়েটাকে পেয়েছি আমি বউ হিসেবে । ' চোখে তপ্ত অশ্রুর আভাস পেল নীল ।

জিনের বাঁধন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল সে যেন কেউ দেখতে না পায় এটা । মেরির সম্বন্ধে তার ধারনাও এরকম । দরজাটা খুলে গেল হঠাৎ এবং ঘুরে দাঁড়াল ওরা । যা দেখল তা সম্ভবত আশা করেনি কেউ, এই মরুভুমির দেশে যেকোন মহিলাকেই ফিরে দেখে মানুষ । মধ্য বিশের কোঠায় মেয়েটার বয়স, বাদামী ঢেউ খেলান চুল, ধুসর চোখ আর তিল পড়া নাক, সুশ্রী ।

'আপনারা ভেতরে আসবেননা ? চ্যাট বলেছে, ব্রেকফাস্ট খেতে নাকি কয়েক বন্ধু বান্ধব আসবে ওর । রোজ তো মেহমান আসেনা আমাদের ঘরে । ' আনাড়ির মত স্থুল পায়ে, লজ্জিত মুখে বারান্দায় উঠল ওরা । কেসনি খেয়াল করল, কী রকম যত্ন নিয়ে শক্ত, বাদামী তক্তাগুলো কুঁদে, নিঁখুতভাবে জোড়া লাগান হয়েছে । এখানও সেই স্থায়ীভাবে টিকে থাকার মজবুতি, সেই শক্তির পরিচয় ।

এই ধরনের মানুষেরই দেশের দরকার । লোকটা সম্পর্কে আগের ধারনার কথা ভেবে লজ্জা পেল সে । ভেতরের ঘরটা মেয়েটার মতই পরিপাটি । কী ভাবে মেয়েটা মেঝে এত পরিস্কার রাখে ? জিগ্যেস করল সে । হেসে উত্তর দিল মিসেস লক ।

'ওহ, ওটা চ্যাটের আইডিয়া ! একটা কাঠের ফ্রেম বানিয়ে ঝামা পাথরের একটা টুকরো সেঁটে দিয়েছে একটা কাঠের সাথে । ঝামা পাথরটা ধারাল বলে মেঝের কাঠের মধ্যে কেটে বসে যায় । দারুন পরিস্কার রাখে মেঝে । ' চমৎকার খাবারের খুশবু পাওয়া যাচ্ছে । নিজের হাতের দিকে চাইল হার্ডিন ।

দরজার দিকে দেখাল চ্যাট । 'তোয়ালে আর পানি আছে ওখানে, যদি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে চাও । ' কনুই পর্যন্ত জামার হাতা গুটিয়ে বেসিনে হাত ডোবাল নীল । সুপেয় পানি, ব্যাপারটা দুর্লভ । সাবানের পরশ চমৎকার লাগল হাতে ।

তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে বেরিয়ে এল সে । কেসনি আর হার্ডিন এর মধ্যেই বসে গেছে টেবিলে । চ্যাটের বউ কফি ঢালছে ওদের জন্য । 'লোকেরা,' বলল লক । 'এ হচ্ছে মেরি ।

তোমাদের নাম গুলো ওকে একএক করে বল । নামগুলো জানা হয়নি আমার । ' মেরি, মুখ তুলে চাইল নীল । তার বউয়ের নামও মেরি । আবার প্লেটের দিকে নজর ফেরাল সে ।

কয়েক গ্রাস খাবার পর আবার মূখ তুলে তাকিয়ে দেখল ওর দিকে চেয়ে হাসছে মেরি । 'আমার বউয়ের নামও মেরি,' জানাল সে । চমৎকার মেয়ে সে !' 'অবশ্যই! কেন ওকে একদিন নিয়ে এসো না বেড়াতে ? কোন মেয়ের সাথে এতোদিন কথাবার্তা হয়নি আমার যে প্রায় ভুলে গেছি আমি ব্যাপারটা । চ্যাট তুমি ওদের সবাইকে দাওয়াত করনা কেন ?' বিড়বিড় করে কিছু একটা বলল চ্যাট, কফির দিকে চেয়ে রইল নীল । অস্বস্তিকর নীরবতার মধ্যে খেয়ে চলল লোকেরা ।

আরডিনের চোখ কেবিনের সবদিক জরিপ করে দেখছে । ঝামা পাথর, বুদ্ধিটা চমৎকার, জেইনের জন্য ওরকম একটা কিছু করতে হবে । কাঠের মেঝে পরিস্কার রাখা যায়না বলে হার্ডিনের বউয়ের অভিযোগ । ওয়াশস্ট্যান্ডটা ঘরের ভেতর, ময়লা পানি বের হওয়ার জন্য ফাঁপা কাঠের পাইপের বন্দোবস্ত আছে । বারবার ঘরের ভেতর বাইরে দৌড়াতে হবেনা ।

এটাও ভাল একটা বুদ্ধি । বেশ অণিচ্ছার সাথে খাওয়া শেষ করল ওরা । কারো চোখে চোখাচোখি না করে একজন একজন করে বাইরে বেরিয়ে এল । চ্যাট লক ওদের বসিয়ে রাখলনা । 'যদি লড়তেই হয় তবে কাজটা সেরে ফেলা উচিৎ,' শান্তভাবে বলল ও।

' বাড়ির থেকে দূরে যাই চল । ' মুখ তুলে চাইল হার্ডিন । 'চ্যাট, সব ঠিক আছে । তুমি বলতে চাইছো, গতকালের ডুয়েলটা তুমি নায্যভাবে লড়েছো ?' মাথা নাড়ল চ্যাট । 'জনি উস্কিয়ে ছিল আমাকে ।

পিস্তল ছিলনা বলে চলে যেতে পারতাম । তো একটা পিস্তল যোগাড় করে স্যালুনে পা রাখলাম আমি । আমার ইচ্ছা ছিলান কোন গোলমালে জড়িয়ে পড়ার, কিন্তু ও যদি আমার সাথে লাগতে যা্য় তো ওকে একটা সুযোগ দেব আমি । তো জনি ড্র করতে গেল কিন্তু আমি হারিয়ে দিলাম ওকে । ডুয়েলটা নায্য ভাবেই হয়েছে ।

' 'ঠিক আছে,' বলল হার্ডিন । 'আমরা যা ভেবেছিলাম তুমি সেরকম লোক নয় । ' 'চল বাড়ি ফিরি,' বলল শর্ট । 'আমাকে বেড়া মেরামত করতে হবে । ' হার্ডিনের জিনে হাত রাখল চ্যাট ।

' মাঝে মাঝে বেড়াতে এসো তোমরা । আমার বউতো কথাবার্তা বলার মানুষ পায়না । আমি ব্যাপারটা নিয়ে তেমন ভাবিনা । কিন্তু মেয়েরা, জানোইতো কেমন । ' 'ঠিক আছে,' বলল হার্ডিন ।

'নিশ্চয়ই আসবো । ' 'আর তোমার মেরিকে নিয়ে এসো । ' নীলকে বলল সে । মাথা নাড়ল নীল । গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠছে তার একটা কিছু ।

পিছু ফিরে চাইল সে । মেরি লক দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে । পরিস্কার করে ঝাঁট দেয়া দোরগোড়ায় সকালের রোদ্দুর খুব উজ্জল দেখাচ্ছে । শেষঃ-

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।