আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিতা ।। বড়লোকদের সঙ্গে আমি মিশতে চাই (2002)

স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার।

যদি রুচিশীল তবু বড়লোক--এরকমই ভালো লাগে ফরসা হলে বেশি। লুঙ্গি পরে না। কথা বলে স্পষ্ট ভাষায় আমি তাদের সঙ্গে গিয়ে মিশতে চাই।

সকালে দৌড়ায়। আমি তাদের সঙ্গে গিয়ে দৌড় দেব ধানমণ্ডি লেকের পাশে বাড়ি-- করতে পারব না কোনোদিন যারা ধানমণ্ডি লেকের পাশে বাড়ি করেছেন, তাদের বারান্দায় গিয়ে বসে থাকব-- ছাদ থেকে লেক দেখব। লেকও আমাকে দেখবে-- সবাই বসতে দিতে রাজি তো হবে না বিশেষত যাদের ড্রয়িংরুম বেশি বড়, লম্বা বেশি, সোফা বেশি যাদের ড্রয়িংরুমে বসবার যোগ্যতা আমার নাই, হয় নাই, হবে নাই তাদের বেডরুম কেমন তাতো কোনোদিন জানাই হবে না। তবু বড়লোকদের বেডরুম না দেখেই মৃতু্য হলে সেটা খুব অত্যন্ত খারাপ হবে। এমন মৃতু্য আমি চাই না তো।

পারি যদি একটি পছন্দসই বড়লোক বেডরুম সঙ্গে লয়ে মারা যেতে চাই। যদি মারা না গেলাম তবে বসে থাকতে চাই সেই বেডরুমে তারা যদি বলে তবে সারাদিনই। কিন্তু যেদিনই ওদের বাড়ি যাবো মানে যাই যাই, ওরা বলে বিদেশ থিকা এমেরিকা থিকা ওদের দুই মেয়ে দুইশ বছর পর আসতেছে, তাই এখন যাওয়া যাবে না-- পরে যাওয়া যাবে ওদের বাসায়। বড়লোকদের সঙ্গে যৌন সঙ্গম ছাড়াই তবে এ জীবন যাবে! তবে এইটা ঠিক যে, বড়লোকদের সঙ্গে পরিচয় হওয়াও কঠিন আছে। ইংরেজি শিখতে হবে; নিজেকেও হইতে হবে অন্তত অর্ধেক, বড়লোক।

তবু আমি, তবু আমি মিশতে চাই বড় বড় লোকদের সাথে। ওদের সঙ্গে যাব লং ড্রাইভে, জোরে দরজা গাড়ির বন্ধ করলে ওরা হাসবে তাতে আমি দরজা খুলে আস্তে করে লাগাব আবার দরজা যেন মোম যেন আমি গাড়ি থেকে নামব আবার যেন এই গাড়িই আমার বাড়ি, ভাড়া নিছি বড়লোক আব্বাজান থেকে। ওদের ড্রয়িংরুমে বসে থাকব, হেসে থাকব, কার্পেটের উপ্রে জুতা নিয়া বইসা থাকব, যতক্ষণ না খেতে ডাকে। ডাকলে গিয়া খাব। যে ভাবে ওরাও খায়।

ওরা কি চাবায়? নিচের তলায়, চাকরেরা খাবার সাজায়। ওদের বাসায় কত কার্পেট, বনমালি, লম্বা বাসা, লম্বা ঘাস, সামনে বাগান। চাকর অনেকগুলিা, যেন ফুল ফুটে আছে, ভোর থেকে রান্নাবাড়া করে। খায় না কিছুই। বড়লোকদের সঙ্গে থাকে, নিয়মিত বড়লোক দ্যাখে তাই কিছুই খাইতে হয় না।

বেহেশতেই আছে। বড়লোকদের বাচ্চাগুলি মোটা মোটা। ভাজা মুরগী খায়। সাঁতরায়। বিনয়ের অবতার।

বিকালবেলায়-- আমার তো ভালো লাগে এইসব। যত বেশি তত। তবে বড়লোকদেরও শুনছি আব্বা আম্মা মারা যায় ওরা তাতে অল্প অল্প কাঁদে। বেশি দুঃখ পায় তাই কান্দে অল্প হাসে বেশি মদ খায় আব্বা মারা গেলে। ওদের সঙ্গে আমি মদ খাব।

কান্তে হলে কানব। বন্ধুর দুঃখে যদি না কান্দি তাইলে...ওরা আমাকে বাড্ডা পর্যন্তআগায় দিছে টয়টা গাড়িতে। ওরা হাসে, 'তোমরা বুঝি গুলশানে থাকো!' আমি বলি, 'তাই। ' ওরা বলে গুডবাই-- আমি ওদেরকে ভালোবাসি--আই লাভ ইউ। বড়লোকদের কুত্তা আর মেয়েগুলি মাখন খায় তাই ওরা খুব সুন্দর আমি ওদেরকে বিয়ে করতে চাই।

রচনা: 10/2/2002 প্রথম আলো, ঈদসংখ্যা 2002

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.