আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজিজের আমলনামা

অবসরের আড্ডা!!!

চলতি বছরের 24 জানুয়ারি ট্রয়কা প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে চাইলে তার ওপর আবার সওয়ার হয় সেই অসুস্থতার ভূত। 23 জানুয়ারি তিনি ভর্তি হন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হাসপাতালে। খবর নিয়ে জানা গেল, তিনি হাসপাতালের 312 নম্বর কেবিনে থাকেন দিনে। রাতে থাকেন বাসায়। যাতে কেউ না দেখেন_ কাকডাকা ভোরে তিনি চুপি চুপি এসে হাসপাতালের কেবিনে ওঠেন।

এ খবর জানাজানির ভয়ে তিনি পুরো কেবিনে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। এ বছরের 19 এপ্রিল দুই সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার মুনসেফ আলী ও মোহাম্মদ আলী বিদায় নেয়ার সময় তিনি তাদের সৌজন্য সাক্ষাতের সময়টুকুও দেননি। এত বিতর্ক, এত সংঘাত, এত রক্ত, এত বিক্ষোভ, এত জনবিস্ফোরণ, এত সংকট যাকে নিয়ে তিনি সিইসি এমএ আজিজ। সিইসি পদে তিনি আছেন দেড় বছর। কিন' তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের গত 35 বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

এ সময় একটি দিনের জন্যও তিনি প্রমাণ করতে পারেননি, একটা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যোগ্যতা তার রয়েছে। সিইসির পদত্যাগের দাবিতে গত 1 মাস ধরে সারাদেশে যখন অচলাবস্থা, শ্রমিক ওয়াজিউল্লাহরা যখন লাশ হচ্ছে, তখনও সিইসি সদম্ভে বললেন, আমি পদত্যাগের কথা ভাবছিই না। দেশের যখন বারোটা বাজছে, রাজনৈতিক আকাশে মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে, চারদিকে কী হবে কী হবে মাতম তখনও সিইসি বলেন, আমি মোটেই উদ্বিগ্ন নই। আমি কেন বঙ্গভবনে যাব? এভাবে তিনি শতবার নিজেকে চিনিয়েছেন। এ যেন রোম পুড়ে যাওয়ার সময় নিরোর বাঁশি বাজানোর চেয়েও ভয়াবহ।

এমনই নির্বিকার, এমনই নির্লজ্জ তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে নিয়োগ লাভের পর আজ পর্যন- এমএ আজিজের এ পদে আসীনের সময় দেড় বছর। এই দেড় বছরে তিনি তার কাজকর্মে পাগলা উপাধিটা এক প্রকার ঠাঁই করে নিয়েছেন। তার হাস্যকর, কখনও উদ্ধত ও লাগামহীন কথাবার্তায় দেশবাসী বিরক্তই হয়েছে। ঘোষণা দিয়ে বারবার আদালতের রায় অমান্য করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি আইনেরও তোয়াক্কা করেন না।

বিদেশী বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ এড়াতে তিনি যেমন নাটকীয়ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তেমনি এ দেড় বছরে ইসিকেও অসুস্থ করে তুলেছেন। সিইসি ছুটি-বিদায়ের পরও সবাই একবাক্যে বলছেন, এ বহুল বিতর্কিত ইসি দিয়ে কিছুতেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। দলীয় নির্বাচন কমিশনার সম জাকারিয়া, বিচারপতি মাহফুজুর রহমানসহ পুরো কমিশনকে সিইসির পথ ধরতে হবে। না হলে আগামীতে আবার গভীর সংকটে পড়তে পারে দেশ। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুভার যে ইসির কাঁধে, সেই ইসিই বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন-রায় বলে মনে করছে জনগণ।

2005 সালের 23 মে সিইসি পদে এমএ আজিজ যোগ দেন। এদিন বিকালে ইসিতে ঢুকেই হাসতে হাসতে বলেন, 'আই অ্যাম নো বডিস ম্যান, আই অ্যাম এভরি বডিস ম্যান। ' কিন' জুলাই মাস থেকে প্রকাশ হতে লাগল সিইসির নানা রঙ্গ। মূলত এ সময় থেকেই তার অনেক কিছুতে 'প্রথম' হওয়া শুরু। ভোটার তালিকা হালনাগাদ না নতুন, এ প্রশ্নে 2005 সালের 28, 29 ও 30 জুলাই নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপ আয়োজন করে তিনি প্রথম হাসির পাত্রে পরিণত হন।

2005 সালের 6 আগস্ট একতরফাভাবে সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার মুনসেফ আলী ও মোহাম্মদ আলীর মতের তোয়াক্কা না করে ভোটার তালিকা নতুন করার সিদ্ধান- নেয়াও বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। রায়বিরোধী নতুন ভোটার তালিকা করতে গিয়ে 60 কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার দৃষ্টান-ও তার। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য হাইকোর্ট চলতি বছরের 4 জানুয়ারি রায় দিলেও সে রায় অমান্য করে নতুন তালিকার কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান-ও তিনিই দেখান প্রথম। তিনি এ সময় উদ্ধতভাবে বলেন, এ রায় বাধ্যতামূলক নয়। আবার রায়ে জরুরি ভিত্তিতে কমিশনের বৈঠক ডাকার কথা বললে সিইসির হঠাৎ 'কোমরে ব্যথা' বেড়ে যায়।

সব মহলকে চমকে দিয়ে এ বছরের 16 জানুয়ারি বিএনপির দুই খাস লোক ইসি সচিব সম জাকারিয়া এবং বিচারপতি মাহফুজুর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার করা হলে রাতারাতি সিইসির ব্যথা সেরে যায়। এ সময় বিকল্প ধারা নেতা বি. চৌধুরী সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, দুই কমিশনারের নিয়োগ সিইসির অসুখে কুইনাইন হিসেবে কাজ করেছে। তিনি কমিশনে ফিরে 2006 সালের 19 জানুয়ারি সিনিয়র দুই কমিশনারকে গুরুত্ব না দিয়ে নতুন কমিশনারদের কথা অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংক্রান- রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান- নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি এভরি বডিস ম্যান নন, তিনি বিএনপিরই খাস লোক। চলতি বছরের 24 জানুয়ারি ট্রয়কা প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে চাইলে তার ওপর আবার সওয়ার হয় সেই অসুস্থতার ভূত। 23 জানুয়ারি তিনি ভর্তি হন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হাসপাতালে।

খবর নিয়ে জানা গেল, তিনি হাসপাতালের 312 নম্বর কেবিনে থাকেন দিনে। রাতে থাকেন বাসায়। যাতে কেউ না দেখেন_ কাকডাকা ভোরে তিনি চুপি চুপি এসে হাসপাতালের কেবিনে ওঠেন। এ খবর জানাজানির ভয়ে তিনি পুরো কেবিনে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। এ বছরের 19 এপ্রিল দুই সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার মুনসেফ আলী ও মোহাম্মদ আলী বিদায় নেয়ার সময় তিনি তাদের সৌজন্য সাক্ষাতের সময়টুকুও দেননি।

দুই কমিশনার সিইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি 'টাইম নাই' বলে এড়িয়ে যান। ইসির ইতিহাসে কোন বিদায়ী কমিশনারের সঙ্গে সিইসির সৌজন্য সাক্ষাৎ না করাটাও এ-ই প্রথম। গত 23 মে ভোটার তালিকা নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে হাইকোর্টের হালনাগাদের পক্ষে রায় বহাল রাখা হলে তিনি আবার সুর পাল্টালেন। বললেন, 'শয়তান আর আল্লাহ ছাড়া সবার ভুল হতে পারে। ' এ রায় ঘোষণার পর রায়ের কপি আসেনি, এ অজুহাতে তিনি পার করেন এক মাস।

1 জুলাই তিনি বিতর্কিতভাবে আবার সিদ্ধান- দেন, হালনাগাদ করা হবে ওয়ার্ডে অথবা ইউনিয়ন পরিষদে বসে। কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে এ কাজ 20 দিন চালানোর পর দেখা গেল যত কর্মকর্তা এ কাজে নিয়োজিত, ভোটার হয়েছে তার চেয়েও কম। ব্যাপক সমালোচনার মুখে 20 জুলাই থেকে বাধ্য হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে তিনি হালনাগাদের কাজ শুরু করেন। এ কাজ শেষ হয় 20 আগস্ট। কাজ শেষ হওয়ার 15 দিন পর সিইসি জানালেন, এবার দেশের ভোটার 9 কোটি 32 লাখ।

গতবারের চেয়ে প্রায় 2 কোটি ভোটার বেড়ে যাওয়ায় এ তালিকা ব্যাপক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এ তালিকায় প্রায় দেড় কোটি ভুতুড়ে ভোটার রয়েছে বলে সব মহল থেকে অভিযোগ ওঠে। বর্তমানেও 14 দল এ ভোটার তালিকা প্রত্যাখ্যান করে তালিকা সংশোধন করার জন্য ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতিকে আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছে। এ সময় সাংবাদিকদের এড়ানোর জন্য কখনও তালাবদ্ধ রুমে বসে থাকা, কখনও পুলিশ দিয়ে তাদের বিতাড়িত করা, কখনও সাংবাদিকতা শেখানোর মতো নানা নাটকীয়তা তিনি করেই গেছেন। আইন শেখাতে দেশের আইনজ্ঞদের দুই ঘণ্টা লেকচার দেয়ার প্রস-াবও দেন এই সিইসি।

সিইসির এসব কর্মকাণ্ডে সুশীল সমাজ বা বিরোধী দলই নয়, বিএনপির নেতা-মন্ত্রীরাও ছিলেন সোচ্চার। ঘরে ঘরে না গিয়ে ওয়ার্ডে বসে ভোটার তালিকা করা শুরু হলে বিএনপি মহাসচিব সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া তার সমালোচনা করেন। গত জুনে তিনি বলেন, সিইসি যা করছেন তা ঠিক হচ্ছে না। ভোটার তালিকা করতে অবশ্যই ঘরে ঘরে যাওয়া উচিত। সিইসির দীর্ঘদিনের বন্ধু সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সিইসি জেদের বশে কাজ করছেন।

সিইসিকে নিয়ে আগামী নির্বাচনে যাতে কোন সংকট সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সরকারকে সিদ্ধান- নিতে হবে। না হলে দেশে গভীর রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম সিইসিকে অশুভ শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান বাধা। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যখন নাগরিক কমিটির পক্ষে তার পদত্যাগ দাবি করেন, তখনও সিইসির উদ্ধত উক্তি_ কথা বলতে ট্যাক্স লাগে না।

সুশীল সমাজ! হেঃ হেঃ হেঃ এদের আমি আর কী বলব। রায়বিরোধী নতুন তালিকা করতে গিয়ে 60 কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার পর নতুন তালিকা করার জন্য সিইসি আবার টাকা চাইলে জুলাই মাসে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেন, আমি সৎ পাত্রে কন্যা দান করব। টাকা জলে যাচ্ছে কিনা তা অবশ্যই আমাকে ভেবে দেখতে হবে। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ প্রশ্নে গত 8 নভেম্বর সিইসির বাসায় যান। কিন' সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার বাসায় কেউ আসেননি।

' এর প্রতিবাদ জানান হাসান মশহুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, 'কেউ মিথ্যা বলছেন, কেউ সত্য বলছেন। আপনাদের আমি বলতে পারি, আমি মিথ্যা বলছি না। আমি তার বাসভবনে গিয়েছিলাম। ' একটি সাংবিধানিক পদে থেকে সিইসির এ মিথ্যাচারে সারাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত 18 নভেম্বর তার যাবতীয় অপকর্মের ক্ষোভ সাংবাদিকদের ওপর ঝেড়ে তিনি ইসিতে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এই আরোপের চারদিন পর তিনি নিজেই ইসি থেকে লম্বা ছুটিতে গেলেন। অপকর্মের এটাই হয়তো নিয়তি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.