আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন আমরা সিদ্ধান্ত করি বাংলাভাষাকে আমরা বাঁচিয়ে রাখবো কিনা



একটা হরর মুভি দেখেছিলাম। অদ্ভুদ দর্শন এক ভয়ংকর জীব। সে একেকটা পরিবারে হানা দেয় আর সে পরিবারের গৃহিনীকে খতম করে তার ছদ্মবেশ ধরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চিবিয়ে খায়। এদিকে পরিবারের সদস্যরা সন্দেহই করতে পারেনা তার মা বা তার বোন বা তার ভাইয়ের হাতে সে নির্মম ভাবে জবাই হতে পারে। এ গল্পটার অবতারণা করছি এই জন্য যে ইদানিং ইংরেজি আর হিন্দিকে আমার সেই রুপান্তরিত জন্তুটার মতই মনে হয়।

বস্তুত বাংলাভাষা এমন একটি ভাষা যে ভাষায় সমস্ত ধরণের অনুভুতির প্রকাশ করা যায়। মধুসুধন, রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, নজরুল, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, জীবনানন্দ দাশ, অয়কুমার বড়াল, সৈয়দ মুস্তবা আলী, অবন ঠাকুর, কমলকুমার মজুমদার, সুধীনদত্ত, দেবেশ রায়, মহাশ্বেতা দেবী, অমিয়ভূষন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবুবকর ছিদ্দিক, হাসান আজিজুল হক, হুমায়ুন আহমদ, রমানাথ রায়, সুবিমল মিশ্র, সলিমুল্লাহ খান,রণজিৎ দাশ, কলিম খান, প্রমুখের গদ্য পদ্য পড়লে বুঝা যায় এ এক অপার সম্ভাবনাময় ভাষা। কিন্তু অবারিত ভাবে বার বার এ ভাষার ভেতর ঢুকে গেছে অন্যান্য ভাষা। অতৈহাসিক ভাষা পরিবারের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় বিভিন্ন ভাবে একভাষায় অন্য একটি ভাষা প্রবেশ করে থাকে। মুলত একেকটি ভাষার শব্দ সমুহকে অন্য একটি ভাষা গ্রাস করে।

এতে গ্রাসকারি ভাষাটি সমৃদ্ধ হয় সন্দেহ নাই। আমাদের ভাষার মধ্যে আরবী, উদর্ু, ফাসর্ী, ইংরেজী বহুভাষার হানা আছে। বেশির ভাগ দস্যু যাযাবর লুঠেরারা বাংলায় তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্টিত করার চেষ্টাকালে তাদের ধর্ম ভাষাকেও আমাদের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। এইতো কিছু দিন আগেও পাকিস্তানিরা তাদের উর্দু ভাষাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। যা টেনে এনেছে একাত্তর।

তারা কি জানত না যে পঞ্চাশ হাজার লোক নিয়মিত কথা বললে সে ভাষা বিলুপ্ত হতে সময় লাগে। বর্বররা প্রায়শই ইতিহাস থেকে শিা নেয় না। তবে আমাদের ওপর সর্বশেষ যে দুটো সাম্রাজ্যবাদি ভাষা আগ্রাসন চালাচ্ছে তা হচ্ছে ইংরেজি আর হিন্দি। এদের আক্রমনের উপায় ভিন্ন। এরা আমাদের কাছে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করতে আসে।

এরা খুব মসৃণ দেহে আমাদের সাথে ভাব ভালবাসা করে। এরা এখন আমাদের বিনোদনের ভাষা। না অন্য একটি ভাষার দতা থাকা মোটেই অযোগ্যতা নয়। অন্য একটি ভাষার যোগ্য না হলে আমরা অনেক মৌলিক নতুন ধরনের লেখক পেতাম না। কিন্তু আপত্তিটা অন্য জায়গায় যেখানে আমার বিনোদনের ভাষা প্রতিদিন আমার ভাষাটাকেই গ্রাস করতে আসে।

বেডরুমে তো আছেই এই বি ও, স্টার মুভি, সনি, বিবিসি , জি টিভি, সি এন এন। এরপর রাস্তাঘাটে গজিয়ে উঠেছে ইংরেজিতে দখল দেবার এজেন্সি। শিশুদের কে ইংলিশ মিডিয়ামে সেদ্ধ করার প্রয়াশ চলছে নিরন্তর। তার যেন ইংরেজি তে হাগে মুতে খায় খেলা করে। আমার মনে হয় এসব স্কুল যারা চালায় তাদের স্বপ্ন হচ্ছে আমেরিকা।

এসব স্কুল কি আমাদের দারিদ্র্যর প্রকাশ নয়। এবং আমাদের কি উচিত নয় বাংলাভাষার পাশাপাশি এসব ভিনদেশি ভাষা আয়ত্ত করা। নিজের ভাষাটাকে কি ভাবে ভালবাসতে হয় তার মনে হয় শ্রেষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ফরাসীরা। ফরাসীরা ফরাসী ওয়েবসাইট ছাড়া খুব কম সংখ্যক লোকই ইংরেজি ওয়েব সাইটে ঢোকে। আর তারা যখন অন্যকে ইমেল করে তা অবশ্যই করে ফরাসীতে।

আমরাও কি তাদের অনুসরণ করতে পারিনা। ভারতে এখন প্রায় হলিউড মুভি হিন্দিতে ডাবিং করে দেখানো হয়। আমরা হলিউড এমনকি বম্বের ছবিগুলোকে ও বাংলায় ডাবিং করতে পারি। কেমন করে আমাদের যেন এক বিশ্বাস জন্মেছে যে হিন্দি আর ইংরেজীভাষা বাংলার চেয়ে শ্রেষ্ট ও মজার ভাষা। এটা সম্পুর্ণ মিডিয়ার গুজব।

আর সমস্ত ইংরেজী বইগুলো আমরা বাংলাতে অনুবাদ করতে পারি সাথে সাথে। এখন ইংরেজীতে বই পড়তে না পারলে যেন জাতে উঠা যায়না। এটা একটা ধারণা মাত্র। এ ধরণের বিদঘুঠে ধারণা আমাদের পরিত্যাগ করা উচিত। ফ্রেঞ্জ লেখা পত্র অনুবাদ করার জন্য ইংলন্ডে আলাদা ডিপার্টম্যান্ট আছে।

ভিবিন্ন ভাষা থেকে সাহিত্য অনুবাদ করার জন্য সরকারী ভাবে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের এ তাবত সব সরকারই অশিতি মানসিকতার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আকাদেমিতে মূল ফেঞ্জ থেকে স্পেনিশ থেকে রুশ থেকে অহরহ বই বাংলায় অনুবাদ হচ্ছে। অথচ বাংলা আমাদের পুরো দেশের ভাষা। আমাদের বাংলা একাডেমী সরকারী আমলা, মন্ত্রীদের ভাই বেরাদরদের হাবিজাবি ছাপাতে ব্যস্ত।

বাংলাভাষাকেও বিশ্বায়নের চ্যলেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। এবং অন্যন্য বড় দুধর্ষ ভাষাগুলোর সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার সমস্ত জারিজুরি অর্জন করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত আমাদের অচিরেই নিতে হবে যে বাংলাভাষাকে আমরা বার্চিঁয়ে রাখবো কিনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।