বাংলাদেশ সময় রাত 1 টা এখন, সারা দিন কেউ আসে নি এখানে। গতকাল করা বিতর্কের পোষ্টে কোনো মৌলবাদী দলের প্রতিনিধি এসে তাদের ভিত্তিহীন কথার সপক্ষে কোনো বক্তব্য পেশ করেন নাই, এমন কি তাদের হাতে যেসব অলীক তথ্য নেই, তা সংগ্রহের জন্য কোনো সময় প্রার্থনাও করেন নি।
একটা অর্থ হতে পারে তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের অসামপ্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে, অথবা, তাদের ভিত্তিহীন কথার সপক্ষে কোনো প্রমান তাদের নেই, তারা মিথ্যা ভিত্তির উপর সাজানো রাজনীতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, এর যেকোনো টি সত্য হলে তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। এখানে শিবির কর্মি কম নেই, সবাই সুযোগ পেলে গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আল মুজাহীিিদ, কামরুজ্জামানের নামে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়, কেউ কেউ দলীয় পত্রিকার অংশবিশেষ এখানে পেষ্ট করে, এবং তারা নির্লজ্জের মতোই এখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কাজ করছে, তাদের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টা কিভাবে সম্পন্ন করা হবে এ বিষয়ে কারো সুচিন্তিত মতামত থাকলে সে বা তাহারা জানাতে পারে, এখানে জামায়াতের মুখপত্রদের ক্ষমাপ্রার্থনার বিষয়টা নিশ্চিত হলে আমাদের যে নৈতিক বিজয় হবে সেটার ভিত্তিতে আমরা আরও বড় পরিসরে জামায়াতের দেশ বিরোধি কার্যকলাপের বিরোধিতা করতে পারি, দেশের মৌলবাদী দলগুলোর রাজনীতিতে শোধনের দাবী জানাতে পারি, আমাদের প্রচলিত আইনের ধারায় এদের শাস্তির ব্যাবস্থাও আছে। সেটা কি মেয়াদে, কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার মানুষও আছে।
এই পোষ্টে এর কিছু অংশ আলোচিত হবে,সবাই যার যার সুচিন্তিত মতামত ও আলোচনা এখানে চলতে পারে, সবাইকে ধন্যবাদ।
মুজিব নগর সরকারের ঘোষনা এত দিন সংবিধানের প্রথমে যুক্ত ছিলো, এটার গুরুত্ব বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ন যে এটাকে সংবিধানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্ব ীকৃতি দেওয়া হয়েছিলো। কদিন আগে পড়লাম এই ঘোষনা বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান ছাপা হচ্ছে, বিষয়টা খুবই পরিকল্পিত একটা বিষয়।
72, 73 সালে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিলো, 74 এ সাধারন ক্ষমা ঘোষনার আগের মামলায় বিভিন্ন জনের শাস্তিও হয়েছিলো। 75এ 15ই আগষ্ট থেকে 75 এর নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, তার সময়ে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তিত হয়ে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ রাখা হয় এবং সৈদি আরবের স্ব ীকৃতি পায় বাংলাদেশ।
এই খন্দকার মোশতাক আহমেদের ধারনা ছিলো 6 দফা আন্দোলন শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক অস্ত্র, যেমন জামায়াতের রাজনৈতিক অস্ত্র ইসলাম, জনগনের সমর্থনের জন্য এটা সামনে আনা হয়েছে এবং জনগনের সমর্থন পাওয়ার পর এটাকে বাস্তবায়ন করা হবে না, খন্দকার মোশতাক আহমেদ মুজিব নগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রি তবে তার রাজনৈতিক আনতি সম্পুর্নই পাকিস্তানের প্রতি, তার পাকিস্তানপন্থি মনোভাব, তার মুজিব নগর সরকারের ঘোষনার প্রতি অশ্রদ্ধা, সব মিলিয়ে মুজিব নগর সরকারের দুর্ভাগ্য এমন বিশ্বাসঘাতক একজন ছিলো সেই সময় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের অংশ। তার রাজনৈতিক কূটচালে তাজউদ্দিন এবং মুক্তিযুদ্ধের অসামপ্রদায়িক চেতনার অনুসারীদের কাছ থেকে মুজিবের বিচ্ছিন্নতা, এবং পাকিস্তান এবং ইসলাম পন্থিদের দ্্বারা আদর্শগত বন্দ ীত মুজিবের।
এর পর জিয়ার ক্ষমতায় আসা, এইসময়টাতে যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলোর ন থি পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এবং সংবিধানের সংশোধনের মাধ্যমে মৌলবাদী দলগুলোকে রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এখন যুদ্ধপরাধিদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো কাজীর গরু, কাগজে কলমে পাওয়া যাবে এমন কি বোধ হয় বিভিন্ন জেল খানার রেকর্ড বুক ঘাটলে পাওয়া যাবে, পাওয়া যেতে পারে আদালতের ঘোষণায়,(কেউ উৎসাহী হলে খুঁজে দেখতে পারেন), তবে থানার কোথাও সেই রেকর্ড নেই।
বাংলাদেশ বড়ই আশ্চর্য একটা ঘটনার জন্ম দিয়েছে বলতে হবে।
এখন সংবিধান থেকে মুজিবনগর সরকারের ঘোষনা উধাও করে দিলে যুদ্ধাপরাধীদের দলের স্লেট একেবারে পরিস্কার, বাংলাদেশি জনগন পরিশ্রম বিমূখ, কে আদলতের নথি ঘেঁটে সত্য বের করবে, কে জেলখানার কয়েদিদের রেকর্ড খুঁজে খুঁজে দেখবে কোথায় সত্য আছে। আর যেখানে এই স্বাধীনতা বিরোধি শক্তির হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা, বি এন পি, যেই দলটা রাজাকারদের ক্ষমতায় পূনর্বাসন করেছে এবং মৌলবাদী রাজনীতির সদর দরজা খুলে দিয়েছে, 75এর 15 ই আগষ্টের পরের সরকারের বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতা( এরা সবাই মূলত পাকিস্তানপন্থি, তাদের লিস্টি ধরেও বলা যায় এই সময়টাতে রাজাকার পূনর্বাসনের কাজটা কেনো তারা করেছিলো, কেনো আওয়ামী লীগ তাদের বহিস্কার করে নাই,) এভাবেই আমাদের সবগুলো রাজনৈতিক দলের ভেতরে রাজাকার ঢুকেছে, জিয়ার মৃতু্যর পর এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টিতে চলে আসা মোয়াজ্জেম হোসনের মতো পাকিস্তানপন্থি মানুষ, এমন উদাহরন দেওয়া যায় চাইলেই, এসব লোকের ঠিকানা আমাদের জানা, এসব লোকের রাজনৈতিক চরিত্র আমাদের জানা, এদের সম্মিলিত গন আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। তাদের রাহুমুক্ত করতে হবে রাজনীতিকে। মুছে দিতে হবে মৌলবাদী দলগুলো।
জামায়াত- ইসলামীশাসনতন্ত্র আন্দোলন, হাবি জাবি যতসব ছোটো খাটো উগ্র ইসলামপন্থি দল, এবং বি এন পি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি থেকে চিহি্নত রাজাকারদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। যারা রাজাকারের সাথে সহবাস করতে পারে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি কাজ করছে, এরা সম্মিলিত ভাবে বাংলাদেশের পায় শেকল পড়াচ্ছে, এরাই অদ্ভুত উটের পিঠে চাপিয়ে স্বদেশকে নিয়ে যাচ্ছে উলটো পথে।
কি ছিলো সংবিধানের প্রথম সংস্করনে, যখন সংশোধনের নামে কালিমার আঁচর লাগে নাই সংবিধানে তখন কি রকম ছিলো বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশের আদর্শ কি ছিলো মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে, তার একটা ছবি পাওয়া যাবে এই সংবিধান থেকেনভেম্বরের 4 তারিখ 1972 সালে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধান থেকে সকল ধরনের সামপ্রদায়িকতা নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো রাষ্ট্র মানুষের ধর্ম পরিচয় দেখবে না, রাজনৈতিক কারনে ধর্মের অপব্যাবহার করা যাবে না, এবং ধর্মের কারনে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না কোনো নাগরিক অধিকার থেকে। এই বিষয়গুলোকে এক ভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতা বলে, যেখানে রাষ্ট্র ধর্মবিশ্বাসের পরিচয় না খুঁজে মানুষকে মানুষ হিসেবে স্ব ীকৃতি দিবে এবং তার নাগরিক অধিকারকে শ্রদ্ধা করবে।
স্বাধিনতা যুদ্ধের মাধ্যে অর্জিত দেশ , যার ভিত্তি ভাষা ও সংস্কৃতি এবং এই পরিচয়টাই বাঙালী জাতিয়তাবাদ, কলচের এক খোঁচায় এই পরিচয় মুছে দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ হাজির করলো দৃশ্যপটে। 12 নং অধ্যাদেশের দ্্বারা বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো, সেটাও মুছে ফেলা হলো সংবিধান থেকে।
9 নং অধ্যাদেশ যা বাঙালি জাতির পরিচয় হিসেবে ভাষা ও সংস্কৃতিক অভিন্নতাকে নির্ডিষ্ট করেছিলো সেটাও মুছে দেওয়া হলো।
41 নং অধ্যাদেশের দ্্বারা সকল নাগরিককে যার যার ধর্মপালনের অধিকার দেওয়া হয়, সেখানে বলা আছে যে কোনো ব্যাক্তি তার পছন্দমতো ধর্ম বাছাই করতে, ধর্ম পালন করতে এবং ধর্ম পালন না করতে স্বাধীন সিদ্ধান্তের অধিকারী। যদি কেউ এই অধিকারকে বাধাগ্রস্থ করে তাহলে তিনি আদালটে মামলা করতে পারবেন এই অধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে বলে, এবং বাংলাদেশের দন্ডবিধির , 295,296,297,298 ধারা মোতাবেক এটার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি পাবে যেই ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিসকল এই অধিকারকে হরন করেছে।
যদিও বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তান কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো 1974 এই তবে বাংলাদেশকে স্ব ীকৃতি দেওয়ার জন্য দেশটা কমনওয়েলথ থেকে সরে গিয়েছিলো 72এ এবং আবার কমনওয়েলথের সদস্য হয় 1989 এ।
এবং মুজিবের মৃতু্যর পর বাংলাদেশকে পাকিস্তান স্ব ীকৃতি দেয়।
যদিও মুজিবের ব্যাক্তিজীবনের এবং ভাষনে ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তার মৃতু্যর আগ পর্যন্ত তবে সেই সময়কালে বাংলাদেশের অসামপ্রদায়িক এবং সেকুলার চরিত্র অক্ষুন্ন ছিলো ।
এখন কথা হলো আমরা কি সেই সেকুলার বাংলাদেশ, যা প্রথম গৃহীত সংবিধানে ছিলো, যেটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে খাপ খায় এমন একটা বাংলাদেশকে কল্পনা করবো না কি, বিভিন্ন বার কালির আঘাতে ধর্ষিত হওয়া সংবিধানকে বাংলাদেশের চেতনানির্দেশক ভাববো।
আলোচনা উন্মুক্ত, যার যার মতামত ,সিদ্ধান্ত জানিয়ে যাবেন আশা রাখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।