বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা
শুক্রবারের ছুটির দিনের কড়চায় সবাইকে স্বাগতম। সময়ের কাঁটা খুব দ্রুত নেচে নেচে এগিয়ে যাচ্ছে। সেদিন আমার এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে দেখি তার চার বছরের গুণধর কম্পিউটারে বসে ওয়ার্ডে এ, বি, সি, ডি টাইপ করছে। 50 ফন্ট সাইজের অক্ষরগুলো মনিটরে ভেসে উঠছে আর খুশীতে সে আবারও টাইপ করছে। হঠাৎ করে সেই চাচ্চুর টাইপিং দেখে আমি ফিরে গেলাম আমার অতীতে।
অনেক বছর আগের ঘটনা। মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আড্ডা। হাতে অফুরন্ত সময়। কিন্তু এসময় কি ভেবে যে আমি নিজে মহল্ল্লার দোকানে টাইপিং শিখতে ভর্তি হয়েছিলাম সেকথা মনে পড়ে না।
কিন্তু মনে আছে সপ্তাহে দুই দিন এক ঘন্টা করে ইংরেজী টাইপিং শিখতে যেতাম। মাসিক বেতন 5 টাকা। ইংরেজী অক্ষরগুলো প্রতিদিন প্র্যাকটিস করা। খুব একঘেঁয়েমী লাগতো। একসাথে 4/5টা টাইপিং মেশিন সাজানো।
তাতে সবাই টকর টকর করে টাইপ করছে। শব্দটা খুবই বিদঘুটে। কানে লাগতো খুব। তারপরে যখন না দেখে একটু একটু টাইপ করতে পারতাম, তখন খুব মজা লাগতো।
এই টাইপিং শেখার জন্য আড্ডার বন্ধুদের কাছ থেকে গাল মন্দ শুনতে হতো অনেক।
দোস্তরা টিটকারী দিয়ে বলতো, "শালা তুই কি টাইপিস্ট হবি? খামাখা কেন টাইপিং শিখছিস"? তারপরেও দাঁতে দাঁত পিশে সব গাল মন্দ হজম করে 3 মাস ধরে সাধ্য সাধনা করে ইংরেজী টাইপিং শিখলাম। তাতে টাইপিং স্পীড তেমন একটা উঠলো না। কিন্তু না দেখে টাইপিং একটু আধটু করতে পারতাম। তারপর একসময় কলেজ শেষ হলো। বিশ্ববিদ্যালয় পাঠও শেষ হলো।
কিন্তু প্রফেশনার টাইপিং আর করা হলো না।
টাইপিং শিখেছি তার পর দশ বছর কেটে গেল। এর মধ্যে কালে ভদ্রে টাইপিং মেশিনের সাহচর্য পেয়েছি। অনার্স আর মাস্টার্স পরীক্ষার সময় থিসিসের কাজ করানোর জন্য নীলক্ষেতে খুপচির ভেতর অনেক ধৈর্য নিয়ে বসে থাকতাম। দোকানের মামুগুলোর অবদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের (!!!) তুলনায় কম না।
টাইপিং হতো, প্রুফ করতাম। প্রায় সময় হোয়াইট আউট ব্যবহার করতে হতো। লেখাপড়ার অগ্রযাএায় নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোর অবদান অনেক। অবশ্য নীলক্ষেতের ফুটপাথের ব্যবসা আর ভেতরের দোকানের ব্যবসা সবসময়ই রমরমা ছিল!!! ভুক্তভোগীদের জন্য বিস্তারিত বলার কোন দরকার নেই।
টাইপিং শেখার প্রথম সুফল হাতে নাতে পেলাম যখন ডিগ্রী নেওয়ার জন্য দেশের বাইরে গেলাম।
প্রথম সেমিস্টারে এক প্রফেসরের কোর্সওয়ার্কে তিনি চাইতেন প্রতি সপ্তাহে একটা করে রিঅ্যাকশন পেপার। টার্ম পেপার। ফাইনাল পেপার। পেপারের উপর পেপার। আমার দেশী ভাবনায় মনে হতো এই প্রফেসরের পুরনো কাগজের হকারের সাথে ব্যবসার পার্টনারশীপ আছে।
না হলে এই ভদ্রলোক এতো পেপার কেন চাইবে? কিন্তু হায়!! বিদেশের মাটিতে পুরনো কাগজের ব্যবসা তেমন একটা দেখা যায় না। শুধু রিসাইক্লিং বীনের ভেতর কাগজ ফেলা। কিন্তু ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর সেই যে ইংরেজী টাইপিং শিখেছিলাম, এতোদিন পর তার সুফল হাতেনাতে পেলাম। কম্পিউটার ল্যাবে বসে টাইপিং করতাম। অন্যরা যখন হাতে লিখে টাইপিং করার কসরৎ করতো, ততক্ষণে আমি পেপার টাইপ করে প্রিন্ট নিয়ে স্টুডেন্ট সেন্টারে বসে টিভি দেখছি।
ঘরে টিভি ছিল না। তাই স্টুডেন্ট সেন্টারে বসে টিভি দেখে রাত এগারটার সময় বাসার দিকে পাড়ি দিতাম। হায়রে টাইপিং!!! আর বাংলা টাইপিং শিখলাম সামহোয়্যার ইন-এ এসে। আমার 4 বছরের চাচ্চু বড়ো হয়ে কখনো যদি আমার টাইপিং শেখার গল্প শুনে তখন অবাক হয়ে যাবে। জিজ্ঞেস করবে, "টাইপিং মেশিন দেখতে কেমন"?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।