আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানামাছি লেন-

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

বুঝলেন মেয়েদের সেন্স ওফ হিউমার একেবারে নিম্ম মানের- বলে সবার মুখের দিকে তাকালেন মগাদিশু চৌরাসিয়া। তার হাতে কালো রোদ চশমার ডাট দাঁতে কামড়ে এবার সামনে ঝুঁকে বললেন, আমি প্রমান করে দিতে পারি কথাটা- আপনি আপনার বন্ধুকে গিয়ে বলতে পারেন আমি তোর বৌয়ের সাথে একান্তসময় কাটাতে চাই- বন্ধু হাসবে- কিন্তু আপনি যদি আপনার বান্ধবিকে গিয়ে বলেন যে আপনি তার জামাইয়ের সাথে একান্ত সময় কাটাতে চান সে চটে যাবে। সবাই চুপচাপ তাকিয়ে আছে মগাদিশুর দিকে, নিরবতা ভেঙে বললেন পমি রহমান,কিন্তু মগাদিশু সাহেব আপনি এত নিশ্চিত হলেন কিভাবে? অবজার্ভেশন মাই বয়, ইটস অল অবজার্ভেশন- মগাদিশুর ঠোঁটের কোনে একটা হাসির রেখা আলোতো ফুটে উঠেই মিলিয়ে যায়, আপনি তো অবিবাহিত তাই এর মাজেজা বুঝবেন না, দিব্যি বন্ধু-বান্ধবি নিয়ে আছেন, মাঝে মাঝে বাইক হাঁকিয়ে যাচ্ছেন চৌমুহিনী, আরিচা ঘাটে গিয়ে ইলিশ ভাজা খাচ্ছেন, কিন্তু আপনাকে বলি- অবিবাহিত মানুষ অর্ধজ্ঞানী-তারা জীবনের আসল রংটা চোখেই দেখে নি। তবে আপনার প্রশ্ন শুনে একটা ব্যাখ্যা না দিয়ে পারছি না-শুনুন তাহলে- বিবাহিত জীবনে প্রথম ধাককা আসে 5 বছর পরে, এর পরে আর সেই আকর্ষনটা থাকে না, বরং মনে হয় আগের জীবনটাই ভালো ছিলো- ঐ যে কৌতুকটা শুনেছেন- এক লোক কবরের সামনে দাড়িয়ে কাঁদছে- কেনো এত আগে মরে গেলে, আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে কি সমস্যা ক্ষতি হতো বলো? পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পাদ্্রি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, এখানে কার এপিটাফ বাবা, তোমার ছেলে? ফাদার এখানে যে শুয়ে আছে সে আমার বৌয়ের প্রথম স্বামী। পাদ্্র ী সহানুভুতির সুরে বললেন আর বলতে হবে না তোমার দুঃখের কথা, যীশু মহান, তাকে এই যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নি।

তাই বিবাহিত বন্ধুদের যদি বলেন তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে, ভাববে কিছু দিনের জন্য অন্তত নতুন খেলনা পেয়ে মজে থাকবে, নিত্য ঘ্যানঘ্যান শুনতে হবে না। কিন্তু আপনি যদি আপনার বান্ধবির জামাইকে নিয়ে এমন ভাবনা করেন তাহলে --- বলে কিছু ক্ষন চুপ থেকে একটা ইঙ্গিতপূর্ন চাউনি দিয়ে চুপ হয়ে যান তিনি। ুমঞ্জুময়ুরি সেখান থেকে বলটা সামনে ঠেললেন-কিন্তু আমি যদি বলি তাহলে কি হবে? মগাদিশু এবার মঞ্জুময়ুরির দিকে তাকিয়ে বললেন, তাহলে আপনার বান্ধবির ধারনা হবে আপনি তার জামাইয়ের প্রতি অনুরক্ত- এবং তার এমনও সন্দেহ হতে পারে তার জামাইও হয়তো আপনার প্রতি আগ্রহী এবং এর পর পূর্বের কোনো পার্টির কথা স্মরণ করে হয়তো ভেবে বের করতে পারবে তার জামাইকে আপনি বা আপনাকে তার জামাই কোনো ইঙ্গিতপূর্ন চাউনি দিয়েছিলো কিনা? এইসব বিষয়ে মেয়েদের স্মরণ শক্তি খুব ভালো। তারা রীতিমতো প্রাজ্ঞ এ বিষয়ে। দেখবেন ঐ দিন আপনার শাড়ীর ভাঁজ, আঁচলের অবস্থান সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন পেয়ে যাবেন আপনার বান্ধবির কাছে।

এমন সময় ভজহরি মুখার্জি এসে বললো-আপনাকে স্টাডিতে ডাকছে একজন, জরুরী দরকার। মগাদিশু সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার পছন্দ মতো ড্রিংকস উঠিয়ে নিন, আমি আসছি, বোধ হয় নতুন কোনো সমস্যা উপস্থিত হয়েছে। বলে ভোগান্তির বোতলটা হাতে নিয়ে তিনি স্টাডিতে রওনা দিলেন। বাবুরা কিছু লাগলে ডাকবেন, আমি কাছেপিঠেই থাকবো, বলে ভজহরির প্রস্থানের পর মৃদু গুঞ্জন উঠলো আড্ডায়। সেখানে উপস্থিত পমি রহমান, ুমঞ্জুময়ুরি,বারমুদা খান আর এ গলির নতুন বাসিন্দা সানচেজ ভ্লাডিমির।

মগাদিশু নিয়মিত এ কাজটা করেন, গলিতে নতুন বাসিন্দা এলেই তিনি তার সম্মানে একটা সংবর্ধনার আয়োজন করেন, অনেক দিন চেষ্টা করেছেন কার্বন মাঝিকে আনতে কিন্তু কার্বন মাঝি কখনই তার আমন্ত্রন গ্রহন করেন না, তার আচরন সন্দেহজনক, গলির কারো সাথেই তার বনিবনা নেই, নিজের মতো থাকেন, মাঝে মাঝে দোতালার বারান্দায় দাড়িয়ে বাইনোকুলার হাতে নিয়ে এদিক ওদিক দেখেন, মগাদিশুর ঘোর সন্দেহ কার্বন মাঝি নির্ঘাত গলাকাটা আসামি, পুলিশের ভয়ে এখানে আস্তানা গেড়েছে, কিন্তু বাঘের উপর যেমন টাঘ আছে তেমন পুলিশের উপরে আছে র্যাব, র্যাবে তার আপাতত কোনো পরিচিত নেই, কিন্তু তিনি চেষ্টা করছেন কোনো না কোনো একটা পরিচয়সূত্র বের করে কার্বন মাঝির বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে। এমন অসামাজিক মানুষ যার আপন পর জ্ঞান নেই তাকে এই গলিতে রাখলে গলির অপমান হবে। আসলে তিনি এই উদ্দেশ্যেই আজকে সভা আয়োজন করেছিলেন, কিন্তু আচমকা ডাক আসায় তাকে উঠে যেতে হলো। ভ্লাডিমিরকে নিয়ে পমি রহমানের আগ্রহের কমতি নেই, অনেকগুলো 36 বাই 48 কার্টন নেমেছে পিক আপ থেকে তিনি দেখেছেন, তার ভেতরটা আগ্রহে ফেটে যাচ্ছে, কি ছিলো ঐসব কার্টনে। তিনি ভ্লাডিমিরকে বললেন- আপনি তো আমার বাসার ঠিক পাশের বাসায় উঠেছেন, যদি কিছু মনে না করেন, আপনার পেশা- নেশা সমন্ধে কিছু বলবে, আমরা সবাই আপনার প্রতিবেশী এখানে।

প্রতিবেশী প্রতিবেশীর খবর রাখবে, বিপদে আপদে এগিয়ে আসবে এমন আদর্শ পরিবেশের উদাহরন তৈরি করতে চাই আমরা। মগাদিশু আলাপচারিতার মাঝে এসে উপস্থিত হলেন , বললেন কিছু মনে করবেন না আপনারা, আমাকে এখনই একটু বাইরে যেতে হবে, তা আপনার কেউ গতকাল থেকে কার্বন মাঝিকে দেখেছেন? সবাই নাসুচক মাথা নাড়লে মগাদিশু সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলেন। সমস্যা গুরুতর, 5 বছর ধরে বিবাহিত একজন এসেছে তার কাছে,লেদু ব্যাপারী, তার স্ত্র ীর নামে সমস্ত সম্পত্তি , আর সম্পত্তির দলিল সহ গত রাত থেকে লেদু মন্ডলের বিবি উধাও। লেদু মন্ডলের মাথায় হাত। রীতিমতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো এতক্ষন স্টাডিতে বসে, মগাদিশু এমন মেনীমুখো পুরুষ সহ্য করতে পারেন না, কিন্তু ব্যাবসার খাতিরে তাকে হাসিমুখে সান্তনা দিতে হয়েছে।

মনে মনে যদিও মনে হচ্ছিল হারামজাদা 5 বদর ঘর করে তুই বুঝিস নাই তোর বৌ একটা জালিয়াত- মুখে বলেছেন, কি করবেন- হয়তো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে, সব ঠিক হয়ে যাবে, আর আমি দেখছি বিষয়টা। মনে মনে বলছেন, বেটা বেকুবের বেকুব, তোকে মুলা ঝুলায়া তোর বৌ দেখ অন্য কারো সাথে ইটিশ পিটিশ করে ফিচকি দিয়ে ভাগছে, মুখে বলেছেন আসলে আপনাকে না বলে তার বাইরে যাওয়াটা একদম উচিত হয় নাই। দেশের রাস্তা ঘাটের যে অবস্থা। আমরা পুরুষ মানুষও হাঁপিয়ে যাই আর আপনার স্ত্র ী কিভাবে সামলাবে বলুন। তিনি স্টাডি থেকে আবারও লেদু মন্ডলের শ্বশুড় বাড়ীতে ফোন করেন।

তিনি জানতেন উত্তর কি আসবে, সে বাড়ীর লোকজন খুব চিন্তিত, বরং তারা লেদু মন্ডলের বিরুদ্ধে হত্যা আর লাশ গুম করার অভিযোগ করতে চায় থানায়। তাদের ভাষ্য লেদু মন্ডল তাদের মেয়েক খুন করে এখন গল্প বানাচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনো একসময় সমাপ্ত হবে- আপাতত রহস্য থাকুক।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।